কমলগঞ্জে এনজিও’র ঋণে জর্জরিত নিম্ন আয়ের মানুষ পুলিশের হয়রানিতে দিশেহারা গ্রাহক : ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন কেউ কেউ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ জুলাই ২০১৯, ২:৪৬:০৪ অপরাহ্ন
কমলগঞ্জ প্রতিনিধি ::
অভাব অনটন, বন্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, কৃষির অনগ্রসরতা এসব কারণেই গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষকে ক্ষুদ্রঋণের আশ্রয় নিতে হয়। নানা ধরনের প্রাকৃতিক দূর্যোগে নিম্ন আয়ের মানুষের এমনিতেই বেহাল অবস্থা। এর উপর বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) ও সমিতি থেকে নেওয়া ঋণের কিস্তি শোধের চাপে দিশেহারা মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষ। ইতোমধ্যেই এনজিও ঋণের টাকা পরিশোধে অনেকে শেষ সম্বলটুকুও বিক্রি করে নিঃস্ব হচ্ছেন। এনজিও কর্মী অথবা সমিতির লোকজন বাড়িতে গিয়ে কিস্তি শোধের চাপ দিয়ে টাকা আদায় করতে না পেরে তারা পুলিশী হয়রানীও করছেন। উপজেলার ৯ টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার গ্রাহকরা সময় মতো ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় এনজিও’র পক্ষ থেকে থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। পুলিশের হয়রানি ও ভয়ে গ্রাহকদের কেউ কেউ বাড়ি থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
পুলিশের হয়রানিতে দিশেহারা কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর ইউনিয়নের সতিঝিরগ্রাম এর রাবিয়া বেগম বলেন, “অভাবে পড়ে ব্র্যাকের সাপ্তাহিক কিস্তির টাকা দিতে না পারায় পুলিশ ফাঁড়িতে ডেকে নিয়ে আমার স্বামীকে আটকে রাখে। পরে কিস্তির টাকা দিয়ে স্বামীকে ছাড়িয়ে আনি। ব্র্যাকের কাছ থেকে ৩৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে স্বামীকে একটি রিক্সা কিনে দিলেও অভাব আর দুর্যোগের কারনে কিস্তির টাকা বকেয়া পড়ে। পরে ম্যানেজার থানায় অভিযোগ দেয়।”
সরেজমিন ঘুরে ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিদিন সকাল হলেই ঋণের টাকার কিস্তির জন্য হাজির হয় এনজিও কর্মীরা। তাদের দেখলেই চমকে ওঠেন দরিদ্র মানুষ। বিভিন্ন এনজিওর ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে অভাবগ্রস্ত মানুষ এখন দিশেহারা। অনেক পরিবার একাধিক এনজিওর ঋণে জর্জরিত। একটির কিস্তি পরিশোধ করতে না করতেই অন্যটির টাকা জোগাড় করতে হয়। ফলে ঋণ গ্রহীতাদের দাদন ব্যবসায়ীর দ্বারস্থ হতে হয়। মহাজনদের কাছ থেকে উচ্চহারে সুদ বা কমমূল্যে আগাম ফসল বিক্রি করে টাকা নিয়ে এনজিওর কিস্তি দিতে হয়। এমনিভাবে তাদের ঋণের বোঝা দিন দিন বেড়ে চলছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ব্র্যাক, আশা, গ্রামীণ ব্যাংক, টিএমএস, ব্যুরো বাংলাদেশ, পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশন, আরডিআরএস বাংলাদেশ, মুসলিম এইড, সহ প্রায় ২২টি এনজিও প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এদের মধ্যে বিভিন্ন নামে ১৫টি সংস্থা ঋণদান করছে। গ্রাম পর্যায়ে সমিতিসহ বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে ঋণ প্রদান করা হচ্ছে। ঋণ নিয়ে গ্রাহকরা সাপ্তাহিক কিস্তি পরিশোধ করার কথা। সপ্তাহে কিস্তি পরিশোধে অনেকেই ঘটিবাটি বিক্রি করে চলেছেন।
রঘুনাথপুর গ্রামের ফাতেমা বেগম বলেন, ব্র্যাকের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকার ঋণ নিয়ে সময় মতো কিস্তি দিতে না পেরে চক্রবৃদ্ধিতে সুদে আসলে পরিশোধ করতে পুলিশের তাড়া খেয়ে পালিয়ে আছি।
রুনু বেগম (সদস্য নম্বর-১৬৮) বলেন, ব্র্যাকের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে প্রতিবন্ধী ভাই ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় কারণে কিস্তি পরিশোধ করতে না পারায় ব্যবস্থাপক থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। পুলিশ কিস্তির জন্য হয়রানি করায় ভয়ে পালিয়ে আছি।
অভিযোগ বিষয়ে ব্র্যাক শমশেরনগর শাখা ব্যবস্থাপক সাইদুর রহমান থানায় দেয়া অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, কিস্তি আদায় করতে না পেরে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়।
অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা কমলগঞ্জ থানার শমশেরনগর পুলিশ ফাঁড়ির এসআই শাহ আলম বলেন, ব্র্যাকের পক্ষ থেকে শমশেরনগর এলাকার ১০ জন গ্রাহকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ রয়েছে।
এ ব্যাপারে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক বলেন, ক্ষুদ্র ঋণের জন্য কারো পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ দেয়া ঠিক নয়। এ ধরণের অভিযোগের বিষয়ে জানতে থানার ওসির সাথে কথা বলবো।