উন্নতি চাইলে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি মেনে নিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ জুলাই ২০১৯, ১:৪৪:২৩ অপরাহ্ন
♦চাকরির বয়স ৩৫ না করার যুক্তি
♦মার্কিন কংগ্রেসম্যানের কথা অত্যন্ত গর্হিত
♦রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবারও মিয়ানমারে যাবেন
জালালাবাদ ডেস্ক:
দেশের অর্থনীতির উন্নতি চাইলে গ্যাসের যে মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে- তা মেনে নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চীন সফর নিয়ে সোমবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এখন জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১ শতাংশ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। এর কারণ আমরা এনার্জি ক্ষেত্রে যথেষ্ট মনোযোগ দিয়েছি। বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পেরেছি এবং গ্যাস আমাদের আমদানি করতে হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবারও মিয়ানমারে যাবেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, চীনের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার বৈঠক হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে দেশটির সরকারকে সম্মত করতে চেষ্টা করবেন বলে আমাকে আশ্বস্ত করেন।
রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সমস্যা উল্লেখ করে চীনের প্রধানমন্ত্রী বলেন, চীন তার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে দুইবার মিয়ানমারে পাঠিয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনে তারা আবারও মন্ত্রীকে মিয়ানমারে পাঠাবে। তিনি বলেন, আমি উন্নয়নের কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনে এই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতার ওপর গুরুত্বারোপ করি। রোহিঙ্গা সঙ্কটের কারণে এই শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিঘিœত হাতে পারে বলে আমি উল্লেখ করি।
গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এলএনজি গ্যাস আমদানির জন্য খরচ যথেষ্ট বেশি পড়ে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। দাম যেটুকু বাড়ানো হয়েছে, সেটুকু যদি বাড়ানো না হয় তাহলে আমাদের সামনে দুটি পথ আছে- হয় আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি না বাড়ে, সেজন্য এলএনজি আমদানি কমিয়ে দিয়ে এনার্জির ক্ষেত্র সংকুচিত করে ফেলব। অর্থনীতির উন্নতি হবে না। যদি উন্নতি চান এটাকে মেনে নিতে হবে। শুধু আমরা না গ্যাস আমদানিকারক দেশও এটা মেনে নেয়। শেখ হাসিনা গত ১ জুলাই পাঁচদিনের সরকারি সফরে ঢাকা থেকে চীনে পৌঁছান। ৬ জুলাই দেশে ফিরে আসেন তিনি।
মার্কিন কংগ্রেসম্যানের কথা অত্যন্ত গর্হিত, অন্যায় : মার্কিন কংগ্রেসম্যান শ্যারনের রাখাইনকে বাংলাদেশের মানচিত্রের সঙ্গে জুড়ে দেয়ার কথা অত্যন্ত গর্হিত কাজ, অন্যায় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা বলেন, আমার যে সীমানা আছে, তাতেই আমরা খুশি। অন্যের জমি নিয়ে আসা বা অন্যের কোনো প্রদেশ আমাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়া এটা আমরা সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করি। এটা আমরা কখনই নেব না। প্রত্যেক দেশ তার সভরেন্টি নিয়ে থাকবে।
তিনি বলেন, মিয়ানমার তার সভরেন্টি নিয়ে থাকবে। সেখানে বাংলাদেশের সঙ্গে রাখাইন স্টেট জুড়ে দিতে চায় কেন? এ ধরনের কথা বলা এটা অত্যন্ত গর্হিত কাজ, অন্যায় বলে আমি মনে করি। হতে পারে তারা খুব বড় দেশ। সে দেশের একজন কংগ্রেসম্যান। কিন্তু তারা কী তাদের অতীত ভুলে গেছে? তাদের যখন গৃহযুদ্ধ লেগেই থাকতো। সেই অতীত তো তাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয়। সেটা যে ভবিষ্যতেও আসবে না সেটা তারা কীভাবে ভাবে?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাখাইন স্টেটে প্রতিনিয়ত যে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে তা আমরা জেনে-বুঝে ওই ধরনের একটা গোলমাল জিনিস আমার দেশের সঙ্গে যুক্ত করব কেন? এটা আমরা কখনই করব না। আমাদের প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার। সেখানকার লোকেরা যখন আশ্রয় চেয়েছে, মানবিক কারণে আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি। তিনি বলেন, আশ্রয় দেয়ার অর্থ এটা নয় যে, আমরা তাদের রাষ্ট্রের একটা অংশ নিয়ে চলে আসব। এ মানসিকতা আমাদের নেই, এটা আমরা চাই না। প্রত্যেকটা দেশ তার সার্বভৌমত্ব নিয়ে থাকবে, সেটাই আমরা চাই। আমরা এটাও চাই যে, এ কথা না বলে বরং মিয়ানমার যেন তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়ে যায় এই কংগ্রেস ম্যান শ্যারনের সেটাই করা উচিত। সেটাই হবে মানবিক দিক। সেখানে যে সব মানবতা লঙ্ঘন হচ্ছে, যা কিছু হয়েছে তাদের সেটা দেখা উচিত। এভাবে একটা দেশের ভেতরে একটা গোলমাল পাঁকানো এটা কোনো মতেই ঠিক নয়।
শেখ হাসিনা বলেন, যেখানেই তারা হাত দিয়েছে সেখানেই তো আগুন জ্বলছে। কোথাও তো শান্তি আসেনি বরং জঙ্গিবাদ সৃষ্টি হয়েছে। অশান্তি সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের অঞ্চলটা আমরা একটু শান্তিপূর্ণভাবে থাকার চেষ্টা করছি। এখানেও তাদের আগুন লাগানোর প্রচেষ্টা। এটা কখনই গ্রহণযোগ্য নয়।
রোহিঙ্গা-সংক্রান্ত অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা (চীন) বলেছেন, বিষয়টা তারা বিবেচনা করবেন, দেখবেন। এটা কী সুখবর মনে হচ্ছে না? না, দুঃখের খবর মনে হচ্ছে? এটা ঠিক যে চীন মিয়ানমারের সঙ্গে সব সময় আছে। এই যে রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আছে। এটা যে বাংলাদেশের জন্য বিরাট সমস্যা এই কথাটা তো তারা নিজেরা উপলব্ধি করতে পারছে। সেই জন্যই মনে করছেন এ বিষয়টার দ্রুত সমাধান হওয়া উচিত। এজন্য তারা যতটুকু করার প্রয়োজন ততটুকু করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
চাকরির বয়স ৩৫ না করার পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর যুক্তি : সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছর না করার পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় প্রধানমন্ত্রী তিনটি বিসিএস পরীক্ষার ফলাফল তুলে ধরেন। সেখানে দেখা যায় ২৩ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে যারা পরীক্ষা দেয় তাদের পাসের হার ৪০-এর ওপরে আর ২৯ বছরের পরে যারা পরীক্ষা দেন তাদের পাসের হার ৩ শতাংশের মতো।
তিনি বলেন, ৩৫ বছর হলে কি অবস্থা হবে, হয়তো পাসের জন্য কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। ফলে এ ব্যাপারে তিনি নিরুৎসাহিত করেন। সোমবার গণভবনে চীন সফরের পর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন শিক্ষার্থী ১৬ বছরে এসএসসি পাস করে। এইচএসসি ও অনার্স-মাস্টার্স করতে আরও ৭ বছর। সব মিলে ২৩ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে একজন শিক্ষার্থী মাস্টার্স পাস করে বের হয়। ২৩ থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত বিসিএস পরীক্ষায় ভালো করতে পারে। এর পরে যারা পরীক্ষা দেয় তারা ভালো করতে পারে না। সুতরাং চাকরির ক্ষেত্রে ৩৫ বছর করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত তা দেশবাসী বিচার করবে। সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের নেতারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।