চীন সফর শেষে ইনাম আহমদ চৌধুরীকে পুরস্কৃত করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ জুলাই ২০১৯, ২:৪৯:২৮ অপরাহ্ন
আব্দুল আহাদ, গোলাপগঞ্জ থেকে ::
চীন সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগের সভাপতি শেখ হাসিনা গোলাপগঞ্জের কৃতি সন্তান ইনাম আহমদ চৌধুরীকে পুুরস্কৃত করলেন। দেশের আলোকিত পরিবারের সন্তান সাবেক সচিব প্রখ্যাত কুটনীতিবিদ ইনাম আহমদ চৌধুরীকে আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য করায় দেশে বিদেশে অবস্থানরত আওয়ামীলীগ ঘরানার কর্মী সমর্থকদের উৎফুল্ল মনে হচ্ছে। অনেকেই আশাবাদি ইনাম আহমদ চৌধুরীর মত একজন প্রাজ্ঞ ব্যক্তিকে আগামীতে ভাল কোন অবস্থান উপহার দেয়া হতে পারে। আওয়ামীলীগে যোগদানের ৬ মাসের মধ্যে ইনাম আহমদ চৌধুরী আওয়ামীলীগের মত দেশের প্রাচীনতম দলের উপদেষ্টা হিসেবে মনোনীত হওয়ায় তিনি নিজে সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন দৈনিক জালালাবাদের এ প্রতিবেদককে।
সাবেক সচিব, প্রখ্যাত কুটনীতিবিদ, প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান, বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান, বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার এক সময়ের উপদেষ্টা ইনাম আহমদ চৌধুরীকে নিয়ে দেশব্যাপী চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।
যিনি একসময় বিএনপির রাজনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে আসীন ছিলেন তিনি আজ ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর গুরুত্বপূর্ণ একজন সদস্যের পদ লাভ করলেন। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইনাম আহমদ চৌধুরী বিএনপির প্রার্থী হয়ে সিলেট ১ আসনে নির্বাচন করার লক্ষ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। এ লক্ষে তিনি সিলেট-১ আসনের বিভিন্ন স্থানে সভা সমাবেশ, গণসংযোগ, মতবিনিময়সহ ব্যাপক নির্বাচনী কার্যক্রমে সক্রিয় অংশগ্রহন করেন। শেষ সময়ে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে তাকে মনোনয়ন প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত করা হলে ইনাম আহমদ চৌধুরী নির্বাচনের পূর্বে মুহুর্তে আওয়ামীলীগে যোগদান করেন। এসময় তার যোগদানকে কেন্দ্র করে সারা দেশে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা হয়। দেশের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় ইনাম আহমদ চৌধুরীর যোগদানের বিষয়টি ব্যাপক গুরুত্ব পায়। এ বিষয়টি নিয়ে খোদ বিএনপির মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। বিএনপির বেশিরভাগ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ইনাম আহমদ চৌধুরীর দল ত্যাগের বিষয়টি সহজে মেনে নিতে পারেননি। এ বিষয়ে ইনাম আহমদ চৌধুরী বিভিন্ন মিডিয়ায় তার বক্তব্যে বলেছেন আওয়ামীলীগে যোগদানের বিষয়ে তিনি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা সঠিক। আরো আগে তিনি এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার ছিল বলে অভিমত প্রকাশ করেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে উন্নয়ন হচ্ছে, দেশের উন্নয়নের স্বার্থে শেখ হাসিনা সরকারের প্রয়োজন আছে বলে তিনি সে সময় মন্তব্য করেন।
কুটনৈতিক অঙ্গনে চীনের সঙ্গে ইনাম আহমদ চৌধুরীর ব্যক্তিগত সম্পর্ক বেশ ভাল বলে বিষয়টি সর্ব মহলে জ্ঞাত। প্রধানমন্ত্রী চীন সফর শেষে দেশে প্রত্যাবর্তনের পর পরই ইনাম আহমদ চৌধুরীকে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদে স্থান দেয়ার বিষয়টি অনেকেই ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। গোলাপগঞ্জবাসী আশাবাদি ইনাম আহমদ চৌধুরী বর্তমান সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কোন পদে অধিষ্টিত হবেন। এব্যাপারে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক রফিক আহমদ এক প্রতিক্রিয়ায় জানান ইনাম আহমদ চৌধুরী গোলাপগঞ্জের কৃতি সন্তান। তিনি আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদে সদস্য মনোনীত হওয়ায় গোলাপগঞ্জবাসী হিসেবে আমি খুশি। অনুরূপ ভাবে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রবীণ রাজনীতিবিদ এডভোকেট ইকবাল আহমদ চৌধুরী এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ইনাম আহমদ চৌধুরী দেশের একজন আলোকিত মানুষ। তিনি গোলাপগঞ্জের কৃতি সন্তান, তাকে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য করায় আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই।
উল্লেখ্য যে ইনাম আহমদ চৌধুরীর পিতা গিয়াস উদ্দিন আহমদ ছিলেন পাকিস্তান আমলের একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা। তিনি পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান নির্বাচন কমিশনার, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের দায়িত্বে ছিলেন। তার বড় ভাই ফারুক আহমদ চৌধুরী ছিলেন আর্ন্তজাতিক খ্যাতি সম্পন্ন কুটনীতিবিদ, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া ইনাম আহমদ চৌধুরীর ছোট ভাই ইফতেখার আহমদ চৌধুরী বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে সচিবের দায়িত্ব পালনের পর বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন। তাদের সর্ব কনিষ্ঠ ভাই মরহুম মাছুম আহমদ চৌধুরীও দীর্ঘদিন সচিবের দায়িত্বে ছিলেন।
গোলাপগঞ্জ তথা দেশের আলোকিত পরিবারের সন্তান ইনাম চৌধুরীকে সরকার দলের উপদেষ্টা মনোনীত করায় বিষয়টি আওয়ামীলীগের অনেকেই ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। আবার অনেকেই তা সহজে মেনে নিতে পারছেন না। বিষয়টি গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজারের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি করতে পারে বলে অনেকের অভিমত। ইনাম আহমদ চৌধুরী আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা হিসেবে মনোনীত হওয়ার সংবাদটি জানার পর গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজারের অনেকেই ফেইসবুকের মাধ্যমে অভিনন্দন জানাতে থাকেন। বিষয়টি গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে ফেইসবুকের মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। আওয়ামীলীগের একটি অংশের নেতাকর্মীরা ব্যাপকভাবে নিজ নিজ ফেইসবুক আইডি থেকে প্রচার করতে থাকলে অন্য অংশটি অনেকটা নিরব থাকতে দেখা যায়। তাদের মনোভাব দেখে মনে হচ্ছে তারা এ বিষয়ে সন্তুষ্ট নন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা আওয়ামীলীগের অনেক নেতা এ ব্যাপারে তারা মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজারে আওয়ামী রাজনীতিতে এখন থেকে নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি হওয়ার আশংকা রয়েছে।