বন্ধ হোক কোপাকুপির নৃশংসতা
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ জুলাই ২০১৯, ৮:২৮:৩৫ অপরাহ্ন
ইদানিং হানাহনি খুনোখুনির মধ্যে নতুন একটি উপসর্গ যোগ হয়েছে। সেটা হচ্ছে কোপাকোপি অর্থাৎ প্রতিপক্ষকে দা, রামদা, চাপাতি কিংবা অন্যকোন ধারালো অস্ত্র দিয়ে উপর্যুপরি কুপিয়ে আহত করা বা হত্যা করা। সম্প্রতি বরগুনায় সন্ত্রাসীদের হাতে সদ্য বিবাহিত যুবক রিফাত শরীফের খুন হওয়ার ঘটনা দেশজুড়ে যুগপৎ আতংক ও চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। প্রকাশ্য দিবালোকে রাম দা দিয়ে প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসী যুবকেরা স্ত্রীর সামনে কুপিয়ে হত্যা করে রিফাত শরিফকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিশেষভাবে ফেসবুকের সুবাদে এই নৃশংস ঘটনাটি বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়লে আতংকে শিউরে ওঠেন সকল বিবেকবান মানুষ।
এই জঘন্য অপরাধমূলক ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই সিলেট বিভাগের বড়লেখায় মাছ বিক্রেতাকে প্রকাশ্যে কোপানোর ঘটনা ঘটেছে। বড়লেখার হাকালুকি হাওরের চৌডালু বিলে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে সুফিয়ান আহমদ (২২) নামে এক মাছ বিক্রেতাকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে মারাত্মকভাবে জখম করে দুই ভাই। গত ৪ দিন ধরে সে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এর আগে সিলেটের এমসি কলেজ এলাকায় খাদিজা নামক তরুণীকে কুপিয়ে মারাত্মকভাবে জখম করে বদরুল নামক এক যুবক। অভিযোগ রয়েছে, প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখান করায় এমন নৃশংস ঘটনা সংঘটন করে সে। ঘটনাটি ফেইসবুকে ভাইরাল হলে বাংলাদেশসহ গোটা বিশে ছড়িয়ে পড়ে। চাপাতি দিয়ে কোপানোর ফলে খাদিজা জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে চলে যায়। অবশেষে সরকারী সহায়তায় উন্নত চিকিৎসার ফলে ভাগ্যগুণে মরতে মরতে বেঁচে যায় খাদিজা। সেই ঘটনায় বদরুল আজো জেলে। এদিকে সাম্পতিক বরগুণার রিফাত হত্যার ঘটনায় নয়ন বন্ড নামে এক সন্ত্রাসী ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছে। এতে এলাকাবাসীসহ গোটা দেশের মানুষ অনেকটা স্বস্তি লাভ করেছেন। কিন্তু রিফাত শরীফ হত্যাকান্ডের মূল হোতা রিফাত নামক সন্ত্রাসী আজো হুমকি হয়ে আছে। তার ক্ষেত্রে এখনো ক্রসফায়ার জাতীয় কিছু না ঘটায় এলাকার লোকজন ক্ষুব্ধ ও হতাশ।
তাদের আশংকা, যেহেতু সে বরগুণার ক্ষমতাসীন দলের নেতা তথা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের আত্মীয়, তাই ছলে বলে কৌশলে জেল থেকে বেরিয়ে আবার জিঘাংসা ও নৃশংসতায় মেতে ওঠবে। এছাড়া রিফাত হত্যাকান্ডে জড়িত অন্যান্য আসামীরাও বিলম্বিত বিচারের সুবাদে কোন না কোনভাবে রেহাই পেয়ে যেতে পারে, এমন আশংকা রয়েছে মানুষের মনে।
বলা বাহুল্য, এদেশে বিচারহীনতা ও দায়মুক্তির এক ধরণের সংস্কৃতির অনুশীলন হচ্ছে দীর্ঘদিন যাবৎ। বর্তমান সরকারের আমলে এটা রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতা ও আনুষ্ঠানিকতা লাভ করেছে। বেশ কয়েকজন শীর্ষ খুনের আসামীকে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা ঘোষনা দেশবাসীকে হতবাক করেছে। শীর্ষ খুনী জুসেফ দেশের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে একইভাবে ক্ষমতাসীন শীর্ষ মহলের সহায়তায়।
ইদানিং নারী ও শিশুর ওপর হত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতন অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। দেখা গেছে এ ধরনের জঘন্য অপরাধের ঘটনায় শতকরা একভাগ ক্ষেত্রেও অপরাধী সাজা পায় না। দেশজুড়ে এই যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি এর বাই প্রোডাক্ট হচ্ছে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা। একজন বা একদল সন্ত্রাসী অপরাধী কতোটুকু দুঃসাহসী ও ভয়-ভীতিহীন হলে প্রকাশ্যে কুপিয়ে মানুষ হত্যা করতে পারেন, তা যে কেউ সহজেই অনুমান করতে পারেন। হত্যা ও খুনের ঘটনায় সাধারণত: খুনি নিজেদের আড়াল করার চেষ্টা করে কিংবা লুকিয়ে তার প্রতিপক্ষ ভিকটিমকে হত্যার চেষ্টা চালায়। কিন্তু জনগণ, প্রত্যক্ষ সাক্ষী এবং আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিচার ব্যবস্থার প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে প্রকাশ্যে কুপিয়ে মানুষ হত্যা এদেশে নজীরবিহীন বলা যায়। নিঃসন্দেহে ক্ষমাসীন ও ক্ষমতাশীলীদের আশ্রয় প্রশ্রয় ও মদদের এটা ঘটেছে।
আমরা প্রকাশ্যে কোপাকুপির এই নৃশংস ও লোমহর্ষক অপরাধ ও অপকর্মের ব্যাপারে আমাদের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। আর এ ধরণের জঘন্য অপকর্ম প্রতিরোধে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী সংস্থা সমূহের কঠোর পদক্ষেপ ও জনগণের সচেতনতা কামনা করছি।