দেশে আত্মহত্যা বাড়ছে : সতর্কতা প্রয়োজন
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ জুলাই ২০১৯, ২:৩৭:০৭ অপরাহ্ন
গতকাল দৈনিক জালালাবাদে ‘সিলেটে এক বছরে ১৮৪ জনের আত্মহত্যা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। স্যংখাটি গোটা দেশের প্রেক্ষাপটে কম বলা যাবে না। বাংলাদেশে প্রতি বছর ১০ হাজারেরও বেশী আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। প্রতি বছর এ সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গড়ে প্রতিদিন ৩০ ব্যক্তি আত্মহত্যা করছেন। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৪ সালে বাংলাদেশে ১০ হাজার ২’শ ব্যক্তি আত্মহত্যা করেন। ২০১৭ সালে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ১১ হাজার ৯৫ জনে।
দেখা যাচ্ছে, শহরাঞ্চলের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে এবং পুরুষের তুলনায় নারীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশী। আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে শিক্ষার্থী-পরীক্ষার্থী থেকে শুরু করে গৃহবধু ও উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা পর্যন্ত রয়েছেন। তবে বাংলাদেশে আত্মহত্যার পেছনে আর্থিক সমস্যা থেকে উদ্ভূত পারিবারিক অশান্তি বিশেষভাবে দায়ী। এছাড়া প্রেমে ব্যর্থতা, পরকীয়া, বেকারত্ব, বিষন্নতাসহ বিভিন্ন ধরণের মানসিক ব্যাধি ইত্যাদিও আত্মহত্যার নেপথ্য কারণ হিসেবে চিহ্নিত। পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যার ঘটনাও কম নয়। এছাড়া তরুণ তরুণী এমনকি অনেক ক্ষেত্রে বালক বালিকারাও মা বাবা কিংবা পরিবারের সদস্যদের সাথে অভিমান করে আত্মহত্যা করতে দেখা যাচ্ছে।
ইতোমধ্যে বাংলাদেশে বিবাহ বিচ্ছেদ ও পরকীয়া থেকে উদ্ভূত জটিলতার দরুণ অনেক শিক্ষিত মানুষকেও আত্মহত্যা করতে দেখা গেছে। এদের মধ্যে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিক-শিক্ষিকা, চিকিৎসক ও অন্যান্য পদস্থ কর্মকর্তা রয়েছেন। সমাজে বিগত বছরগুলোতে পরকীয়া নামক সামাজিক ব্যাধির বিস্তার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সম্প্রতি প্রতিবেশী দেশ ভারতে এটাকে আইন পাশ করে বৈধতা দেয়া হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে পরকীয়া একটি সামাজিক অপকর্ম ও আইন অনুযায়ী মারাত্মক অপরাধ। ভারতে পরকীয়ার বৈধতা বাংলাদেশে বিরূপ প্রভাব ফেলার আশংকা অমূলক নয়। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, এদেশে দিন দিন পরকীয়া বাড়ছে। ফলে বাড়ছে বিবাহ বিচ্ছেদ, সৃষ্টি হচ্ছে সামাজিক বিশৃংখলা। আর এই বিশৃংখলা ডেকে আনছে আত্মহত্যার মতো অপরাধ।
বর্তমানে ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও আত্মহত্যার পেছনে ভূমিকা রাখছে। পর্ণোগ্রাফীও এজন্য অনেকাংশে দায়ী। ধর্ষণের দৃশ্য ধারণ করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়া কিংবা ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি থেকেও অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। বলপূর্বক কিংবা কৌশলে অশ্লীল দৃশ্য ধারণের ঘটনায় ইতোমধ্যে সারাদেশে বহু আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সুবাদে সৃষ্ট সম্পর্ক শেষ পর্যন্ত হতাশা ও তিক্ততায় রূপ নেয়ায় অনেকে আত্মঘাতী হতে দেখা গেছে। এছাড়া ইন্টারনেট ও সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্পিত জগতের সাথে বাস্তব জগতের সংঘাতও অনেক মানুষকে বিশেষভাবে তরুণ তরুণীদের আত্মহননে প্ররোচিত করছে প্রতিনিয়ত।
আত্মহত্যার পেছনে বংশানুক্রমিক অসুস্থতা, সিজোফ্রেনিয়া বা বিষন্নতা, মাদকাসক্তি, শৈশবকালীন ট্রমা বা মানসিক আঘাত ও হতাশা অনেকাংশে দায়ী। বিশেষজ্ঞদের মতে, আত্মহত্যা এক ধরণের মানসিক রোগ। অনেক মতে, আত্মার অসুখ। আর খুব স্বল্প সময়ের বিভ্রান্ত ও উত্তেজনা থেকে অনেকে আত্মহত্যা করেন। তাই এ ধরণের জটিল মুহূর্তে মানসিক থেরাপি বা সহায়তা একটি জীবনকে বাঁচিয়ে দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে ফেইসবুকের কিছু উদ্যোগের কথা শোনা গেছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্থাও এদিকে খেয়াল রাখতে পারেন।
সর্বোপরি আত্মহত্যা কোন সমস্যার যে সমাধান নয়- এটা সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রচার করা প্রয়োজন। আত্মহত্যার অন্যতম কারণ আর্থিক বৈষম্য, অনটন ও অসংগতি দূরীকরণে কাজ করতে হবে গোড়া থেকেই। বেকারত্বের হাতাশা যাতে তরুণ যুবাদের আত্মহত্যার দিকে ঠেলে না দেয়- সেই লক্ষ্যে ব্যাপকভিত্তিক কর্মসূচী গ্রহণ আবশ্যক। সর্বোপরি, আত্মহত্যা যে ধর্মীয় ও নৈতিক দিক দিয়ে একটি বড়ো ধরণের অপরাধ ও অপকর্ম এবং জীবন যে একটি মহার্ঘ্য সম্পদ, এটা তুলে ধরতে হবে সর্বত্র। এক্ষেত্রে লেখক, মসজিদের ইমাম ও শিক্ষক, রাজনীতিক ও অভিভাবক মহল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। আমরা এ দিকে সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি ও মনোযোগ আকর্ষণ করছি।