বর্ষায় পারাপারে বাঁশের সাঁকোই ভরসা : সুনামগঞ্জে হাওরের শিক্ষার্থীরা মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে যায়
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ জুলাই ২০১৯, ২:৫৩:৪২ অপরাহ্ন
তৌহিদ চৌধুরী প্রদীপ, জামালগঞ্জ ::
এদিক, ওদিক হলেই পা পিছলে যে কোনো সময় ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। কারো সাঁতার জানা না থাকলে মৃত্যুও হতে পারে। অথচ এরাই হবে একদিন এ দেশের ভবিষ্যত। ব্রীজ কিংবা বিকল্প রাস্তা না থাকায় নদী-খাল পারাপারে এক মোড়া বাঁশের সাঁকোই একমাত্র ভরসা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই সাঁকো পার হতে হয় স্কুলগামী কোমলমতি শিশুসহ পথচারীদের। রাস্তায় মাটি কিংবা কালভার্ট নির্মাণে কোনো পদক্ষেপ নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। প্রতি বছরই এই রাস্তাটির জন্য কাবিটা প্রকল্পের মাধ্যমে মাটি ভরাটের কাজ আসে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের অসাধু কর্মকর্তা ও কাবিটা প্রকল্পের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি সামান্য কাজ দেখিয়ে বরাদ্দকৃত টাকাগুলো আত্মসাৎ করে ফেলেন বলে অভিযোগ উঠে প্রতি বছরই। যার ফলে প্রতিবছরই এই রাস্তায় স্থানীয়দের উদ্যোগে নির্মাণ করা হয় বাঁশের সাঁকো। এ বছর হাওর রক্ষা বাঁধের নামে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ আসলেও নড়বড়ে বাঁশের সাঁকোর পরিবর্তন হলো না। গ্রামবাসীর উদ্যোগে প্রতি বছরই নির্মাণ হয় সাঁকো।
সুনামগঞ্জে হাওর পাড় জামালগঞ্জের ভীমখালী ইউনিয়নের মৌলীনগর গ্রামের রাস্তাসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে শিশু শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে স্কুলে যাতায়াত করছে। ঝুঁকিপূর্ণ পারাপারের জন্যই শিক্ষার্থীরা অহরহ দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের নিয়ে হাওর পাড়ের অভিভাবকরা আতঙ্কের মধ্যেই কাটান বর্ষার ৬ মাস। জানা যায়, জেলার জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, তাহিরপুর, দিরাই, শাল্লা, জগন্নাথপুর, বিশ্বম্ভরপুর, মধ্যনগর থানা, দোয়ারাবাজার, ছাতক উপজেলাসহ হাওরের উত্তাল ঢেউয়ের মাঝে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে বছরের পর বছর সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের। একমাত্র ভরসা নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো ও কাঠের তৈরী ছোট নৌকা। নৌকা কেনার সামর্থ আবার ৯০ ভাগ হাওরবাসীর নেই। হাওরের ঢেউয়ের গর্জন ও নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো এবং সড়ক পথের ব্যবস্থা না থাকার কারণেই বর্ষাকালে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকে বেশীর ভাগ শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়ে রাস্তা না থাকায় স্থানীয়দের উদ্যোগে নির্মিত করা হয়েছে বাঁশের সাঁকো। ঝুঁকিপূর্ণ পারাপারের জন্যই শিক্ষার্থীরা অহরহ দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। শিশুদের এই ঝুঁকিপূর্ণ পারাপারে অভিভাবকরা থাকেন সারাক্ষণ আতঙ্কের মধ্যে। বর্ষা হলেই প্রতি বছর এমন ঝুঁকিতে বিদ্যালয়ে বাধ্য হয়ে আসতে হয় না হয় বাড়িতেই অবস্থান করতে হয় কোমলমতি শিশুদের।
প্রায় পাঁচ বছর ধরে বর্ষা মওসুমে ভাঙাচোরা সাঁকোর ওপর দিয়েই চলাচল করতে হচ্ছে সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার ভীমখালী ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজার মানুষ। অন্য কোনো চলাচলের রাস্তা না থাকায় জেলা শহরের সঙ্গে সংযোগ রক্ষাকারী অনিরাপদ বাঁশের সাঁকো দিয়েই চলাচল করেন। পথচারীদের সতর্কতার সঙ্গে পার হতে হয় সাঁকো। একটু অসাবধান হলেই পা পিছলে ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। এ ঝুঁকি থেকে রক্ষা পেতে দ্রুত সাঁকোর জায়গায় মাটি ভরাট কিংবা কালভার্ট নির্মাণের দাবি ভুক্তভোগীদের। পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র জুয়েল বলে, ‘ওই সাঁকো দিয়া যাবার বেলা অনেক সময় হাত থেকে বই, খাতা, কলম পড়ি যায়। সাঁকো দিয়া যেতে ধরলে নিজেদেরও হাত-পা কাঁপে।’ মৌলিনগর গ্রামের বাচ্চু মিয়া বলেন, স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য সরকার এ বছর মৌলিনগর রাস্তায় বরাদ্দ দিয়েছেন। কিন্তু দেখা গেছে সামান্য জায়গায় মাটি ফেলে রাস্তার কাজ বন্ধ রেখেছে। যার ফলে বাঁশের সাঁকোর পরিবর্তন হলনা। ভীমখালী ইউপি চেয়ারম্যান মো. দুলাল মিয়া জানান, এই রাস্তাটির জন্য সামান্য টাকা বরাদ্দ হয়। যার জন্য অর্ধেক স্থানে মাটি ফেলার পর টাকা শেষ হয়ে যায়। তাই আগামী হেমন্ত মাসে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় রাস্তা নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রিয়াংকা পাল জানান, ভীমখালী ইউনিয়নের মৌলীনগর রাস্তা খালটির বিষয়ে এখন শুনেছি। খোঁজ নিয়ে শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে এখানে একটা ব্যবস্থা নেয়া হবে।