খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে ভীতিকর অবস্থা
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ জুলাই ২০১৯, ১১:৩২:৪৫ অপরাহ্ন
খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে গোটা বাংলাদেশে এখন এক ধরণের ভীতিকর অবস্থা বিরাজ করছে। বিভিন্ন খাদ্যপণ্যে ভেজাল সংক্রান্ত বহু রীট দায়ের হয়েছে দেশের উচ্চ আদালতে। আদালতও এ ব্যাপারে অনেকগুলোতে মামলার প্রেক্ষাপটে আবার অনেক ক্ষেত্রে ‘সোয়া মোটো’ বা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে হস্তক্ষেপ করেছেন। জারী করেছেন আদেশ-নির্দেশ।
গত মে মাসে হাইকোর্ট বিএসটিআই, বিএফএসএ এবং ডিরেক্টরেট অব ন্যাশনাল কনজিউমার রাইটস্ প্রোটেকশন (ডিএনসিআরপি)কে মার্কেট থেকে ৫২ টি ভেজাল মিশ্রিত পণ্য প্রত্যাহারের নির্দেশ প্রদান করেন। এছাড়া হাইকোর্ট বিএফএসএ’র চেয়ারম্যানকে আদালত তলব করেন ৫২ টি পণ্য প্রত্যাহারে ব্যর্থতার জন্য।
লক্ষনীয়, বছরের শুরু থেকেই ভেজাল পণ্য নিয়ে দেশে তোলপাড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে অসংখ্য সংবাদ প্রতিবেদন প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়েছে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায়। গত জানুয়ারী মাসে প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়, সরকার মিট এন্ড বোন মিল (এমবিএম) নামক এক ধরণের পোল্ট্রি ফীড আমদানী ও বিক্রয় নিষিদ্ধ করেছেন, যা অ্যানথ্রাক্স, এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা ধ্বংস ও ক্যান্সারের ঝুঁকি সৃষ্টিকারী। প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ বহু দেশে এটা নিষিদ্ধ। ১৯৯৪ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে এটা নিষিদ্ধ করা হয়। এমবিএম ছাড়াও দেশের ৪টি জেলায় ১৪ টি ব্র্যান্ডের পোল্ট্রি ফীডের অর্ধেকে বিভিন্ন ধরণের এন্টিবায়োটিক পাওয়া যায়, যাতে মানবদেহে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টির আশংকা রয়েছে। কিন্তু এ ধরণের নিষেধাজ্ঞা সত্বেও দেশের বিভিন্ন পোল্ট্রি ফার্মে এ ধরণের ক্ষতিকর ফীড ও এন্টিবায়োটিক ব্যবহৃত হওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশে ১০ লাখ ব্যবসায়ী এবং ৮০ লাখ লোক পোল্ট্রি ফার্মের সাথে জড়িত। দেশে বছরে ১ কোটি ২২ লাখ ডিম উৎপাদিত হয়। তাই স্পর্শকাতর এই ফার্ম বা খাতে কোন সরকারী হস্তক্ষেপ তথা নিষেধাজ্ঞা সহজ সাধ্য নয়। অথচ এ খাতকে নিরাপদ করা না গেলে দেশের গণস্বাস্থ্য বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত হতে পারে।
একইভাবে ওষুধপত্র, ফলমূল ও অন্যান্য খাদ্য সামগ্রীতে ভেজাল, নিম্নমান, মেয়াদোত্তীর্ণ আইটেম একটি বড়ো ধরণের স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করেছে। এখন বিভিন্ন ফলের মৌসুম। কিন্তু বাজারে বিক্রিত ফলমূল কতো নিরাপদ অর্থাৎ কার্বাইড, ফরমালিন ও কীটনাশকের মধ্যে মারাত্মক ক্ষতিকর পদার্থ থেকে মুক্ত এটা কেউ বলতে পারবেন না। এ ব্যাপারে পরিচালিত অভিযানও পর্যাপ্ত নয়।
অভিযান পরিচালনাকারী সংস্থাগুলোর লোকবল স্বল্পতা এবং আধুনিক যন্ত্রপাতি ও ল্যাবের অভাব তাদের যথাযথ দায়িত্ব পালনে অসুবিধা সৃষ্টি করছে। এছাড়া বিএসটিআই-এর মতো সংস্থার অনেক সদস্যের সততা ও আন্তরিকতাও অনেক ক্ষেত্রে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ হতে দেখা গেছে।
সর্বোপরি দেশের খাদ্য নিরাপত্তা এখন এক মারাত্মক পর্যায়ে এসে উপনীত হয়েছে। এ ব্যাপারে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যর্থতা দেশের ১৬ কোটি জনগণ বিশেষভাবে ভবিষ্যত প্রজন্মকে ঠেলে দিতে পারে অনিশ্চয়তার অন্ধকারে, যা থেকে উত্তরণ সহজসাধ্য হবে না। আমরা এদিকে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও সংস্থাসমূহসহ সরকারের উর্ধ্বতন মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।