ইতিহাসে নদী ও সমুদ্রে (তৃতীয় পর্ব)
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ জুলাই ২০১৯, ১১:৪৭:১৩ অপরাহ্ন
ইতিহাসে নদী ও সমুদ্রে
।। সারওয়ার চৌধুরী ।।
প্রিন্সেস হায়া’র পলায়ন রূপকথার অধিক বিস্ময়
“আমরা জন্মগতভাবে মুক্ত। কেউ খাঁচাবন্দী রাখতে পারবে না তোমাকে। তুমিই কেবল তোমাকে বন্দী রাখতে পার।” বলেছিলেন দুবাই রয়েল প্যালেসের রাজকন্যা হায়া বিনতে হোসেন, ‘অ্যামিরেটস উইমেন’ এর সাথে আলাপ করার সময়। আরব নারী জাগরণে তার ভূমিকার প্রশংসা করতেন পশ্চিমের বিভিন্ন উচ্চ পদে থাকা ব্যক্তিগণ। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান প্রিন্সেস হায়া’র কাজের প্রশংসা করে বলেছিলেন, “আমি মনে করি তিনি এ কাজ প্রচার পাওয়ার বা সাহসের বড়াই দেখানোর জন্যে করছেন না। এ তার আন্তরিক প্রয়াস”।
তার চেয়ে ২৫ বছরের বড় দুবাইয়ের শাসক ও আরব আমিরাতের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদকে বিয়ে করার পর বিভিন্ন সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে দু’জন এক সাথে অংশ নিতেন। একবার এক নারী সম্মেলনে কার স্বামী শেখ মোহাম্মদ সম্পর্কে জানিয়েছিলেন, “আমি তার প্রতিদিনের কাজগুলো দেখে অভিভূত হই। প্রতিদিন আমি আল্লাহর শোকর আদায় করি। আমি ভাগ্যবতী তার জিবনসাথী হতে পেরে”।
আরব ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে মানবিক সংকট নিরসনে দিন রাত কাজ করেছেন এক সময় রাজকন্যা হায়া। পুরস্কৃতও হয়েছেন। ২০১৫-তে পেয়েছিলেন ‘হাঙ্গার হিরো এওয়ার্ড’। ‘অ্যামিরেটস উইম্যান’ এর সাথে আলাপ করার সময় হায়া বলেন, “মানবিক বিপর্যয় সারা বিশ্বে। কোনো সংকটকে হালকা করে দেখার সুযোগ নাই। দেশে দেশে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী, নারী ও শিশুর জিবন সাংঘাতিক সংকটাপন্ন। অনাহার অপুষ্টিতে বছরের পর বছর ধরে সেসব জায়গায়। যথাযথ পুষ্টিকর খাবার ছাড়া শিশুদের মানসিক ও শারীরিক উন্নয়ন হয় না। আমি স্তদ্ধ হয়ে যাই, এই যুগে দাবি করি আমরা সভ্য, অথচ প্রতি মিনিটে মর্মান্তিকভাবে শিশুরা মারা যাচ্ছে খাবার না পেয়ে। আমি এটা মানতে পারি না।”
উল্লেখ্য, প্রিন্সেস হায়া ও সৌদি আরবের প্রিন্সেস আমিরা এই যুগে আরব নারীদের অধিকার আদায়ের অগ্রদূত বিবেচনা করা হয়। এবং তাদের একান্ত সহযোগী মনে করা হতো শেখ মোহাম্মদকে। প্রিন্সেস হায়া তা বলেছিলেনও এক সাক্ষাৎকারে। তাদের বিয়ের পর দুজনেরই আন্তরিক কর্মকা-ের প্রশংসা মিডিয়ায় ও মানুষের মুখে মুখে শোনা যেত। শেখ মোহাম্মদ হঠাৎ কোনো প্রটোকল ছাড়াই বিভিন্ন দফতরে এসে দেখতেন কর্মকর্তারা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করছেন কিনা। একবার প্রায় পনের বছর আগে, আদালতে জজরা (আরবিতে বলে কাজি। বাংলা ভাষায় কাজি কেবল বিয়ে করান) সকালে টাইমমতো আসেন না মর্মে গোয়েন্দার খবর মোতাবেক, শেখ মোহাম্মদ বিন রাশিদ সকালে বরাবর অফিস টাইমে এসে একজন জজের কক্ষে বসে থাকেন। জজের খবর নাই। পঁচিশ মিনিট পরে এসেছেন। শেখ মোহাম্মদকে দেখে থ। জজের চাকরি শেষ। শেখ মোহাম্মদ তাকে ঐদিনই বরখাস্ত করেন।
প্রিন্সেস হায়া ও শেখ মোহাম্মদ দুজন পরস্পরকে ভালবাসতেন খুব। সমর্থন করতেন পুরোপুরি তারা তাদের চিন্তা ও কর্ম। কিন্তু এখন কেউ কারো দিকে ফিরতে চান না। আদালত ফয়সালা দিবে। কী দিবে কেউ জানে না। জীবন কখন কোন দিকে যায় কেউ জানে না। শামস তাবরিজি বলেছিলেন, “এই দুনিয়ার ঘটনাবলীতে আছে পারস্পরিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার হিসাব। এক ফোটা দরদের, এক কণা পরিমান শয়তানির, উভয় তরফের বদলাবদলি হবেই।”
শেখ মোহাম্মদের আরেক পরিচয়, তিনি কবি। তার প্রেমের কবিতা বেশ জনপ্রিয়। তার নিজের ওয়েবসাইটে প্রায়ই নতুন কবিতা আপলোড হয়।
(চলবে)
লেখক: জালাল উদ্দিন রুমি গবেষক, অনুবাদক, কবি, আবুধাবি থেকে।