সুখী হতে চান: অল্পে তুষ্টি থাকুন
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ জুলাই ২০১৯, ১২:৪২:১০ অপরাহ্ন
মাজহারুল ইসলাম জয়নাল ::
পৃথিবীতে এমন কোন মানুষ খুঁজে পাবেন না; যিনি সুখী হতে চান নি। প্রত্যেক মানুষই জীবনে সুখি হতে চান। সুখের জন্যই তো আমাদের জীবনের সকল ব্যস্ততা।
কিন্তু কজনই বা সুখের সন্ধান লাভ করতে পারেন, আসলে সুখ জিনিসটা কি? এ ব্যাপারে মনোবিজ্ঞানীরা কখনো ঐক্যমতে পৌঁছতে পারেননি, কারণ একেকজনের কাছে সুখের সংজ্ঞা একেকরকম। যেমন, একজন দিনমজুরের সুখ আর একজন কোটিপতির সুখ এক নয়। দিনমজুর তার নিত্যদিনের উপার্জন দিয়ে, মাথাগোঁজার একটু আশ্রয় আর দুবেলা-দুমুঠো ভাত খেতে চায় নিরাপদে, এটুকুই তার জন্য সুখ। অপরপক্ষে একজন কোটিপতি নতুন মডেলের বিলাস দ্রব্য, আলিশান বাড়ি-গাড়ির চাহিদা রয়েছে তার সুখপ্রাপ্তির তালিকায়। তার চাহিদার শেষ নেই, সে একটার পরে আরেকটা চাইবেই।
সুখ জিনিসটা আসলে অন্তরের সাথে সম্পর্কিত, যা আছে তা নিয়ে তুষ্টি থাকার নামই সুখ। কেননা মানুষের চাহিদার শেষ নেই, একসময় তার চাহিদা ছিল মাত্র এক লক্ষ টাকা, একলক্ষ টাকার মালিক হওয়ার পরে তার চাহিদা এখন পাচঁ লক্ষ টাকা এভাবেই তার চাহিদা ক্রমাগত বাড়তেই থাকে। মৃত্যু অবধি তার চাহিদার শেষ হবে না। সেজন্য রাসুল (সা:) বলেছেন, আদম সন্তানকে দু-পাহাড়ের উপত্যকা সমান সম্পদ দান করা হলেও তার চাহিদা মিটবে না, বরং সে আরো চাইবে।
একদিন হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবী হযরত আবু যর (রা.)-কে বললেন, আবু যর! তুমি কি সম্পদের প্রাচুর্যকেই সচ্ছলতা মনে কর? আবু যর (রা.) বললেন, হ্যাঁ, ইয়া রাসূল্লাহ।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরপর বললেন, তাহলে তুমি সম্পদের স্বল্পতাকে দারিদ্র্য মনে কর? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আল্লাহর রাসূল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আসলে সচ্ছলতা তো হৃদয়ের সচ্ছলতাই, আর হৃদয়ের দারিদ্র্যই আসল দারিদ্র্য। (সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৬৮৫) আমাদের কাছে ও অল্প সম্পদ বলতে দারিদ্র্যতা বুঝায় আসলে কি তাই! না বরং আপনার যা আছে তা নিয়ে সন্তুষ্টি থাকার নামই সুখ।
তবে, হ্যাঁ সম্পদ লাভের জন্য আপনি চেষ্টা করে যাবেন, আর আল্লাহ তায়ালা আপনার তাকদিরে যা লিখা রয়েছে তা অবশ্যই দান করবেন। অধিক সম্পদ লাভের জন্য হাহুতাশ করা যাবেনা।
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবশাদ করেছেন সম্পদের প্রাচুর্য সচ্ছলতা নয়, বরং সচ্ছলতা তো হল হৃদয়ের সচ্ছলতা। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৪৪৬) বর্তমান সমাজের দিকে তাকালে তা স্পষ্ট দৃশ্যমান হয় যে, যার বিশাল সম্পত্তি রয়েছে তাকে ও যদি প্রশ্ন করা হয়, আপনি কি সুখী?
তাহলে উত্তর আসবে না, আমার আরো কিছু সম্পদের প্রয়োজন। কিন্তু ইসলামে পরিপূর্ণ বিশ্বাসি একজন মুমিনকে যদি প্রশ্ন করা হয়, আপনি কি আপনার সম্পদে সন্তুষ্ট? তাহলে তিনি বলবেন, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ তায়ালা আমাকে যা দান করেছেন তাতেই আমি সন্তুষ্ট। কারণ মুমিনের পরিপূর্ণ সফলতার জায়গা দুনিয়া নয় বরং পরকাল। সম্পদের সুখ আসল সুখ নয়; বরং মনের সুখই আসল সুখ।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে যা দান করেছেন, তা নিয়েই সন্তুষ্টি থাকতে পারলেই সুখী হওয়া সম্ভব। শুধুমাত্র দুনিয়ার জীবনের সফলতার দিকে না চেয়ে পরকালের সফলতা নিয়ে ও চিন্তা করা উচিৎ।
মনে রাখবেন, প্রকৃত সুখ আল্লাহর ইবাদত বন্দেগীর মধ্যেই নিহিত।
সাহাবি হযরত সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস (রা.) আপন ছেলেকে এ বলে উপদেশ দিয়েছিলেন: বাবা শোনো! যখন কোনো কিছু তালাশ করবে তখন অল্পে তুষ্টি সঙ্গে নিয়ে তালাশ করবে। আর তোমার যদি অল্পে তুষ্টি না থাকে তাহলে কোনো সম্পদই তোমার কাজে আসবে না। (আলসুজালাসাতু ওয়া জাওয়াহিরুল ইলম: ৯৯৯০)।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তোমাদের কেউ যখন নিজ বাড়িতে নিরাপদে সুস্থ দেহে সকাল যাপন করে আর তার কাছে সেদিনের খাবার থাকে, তাকে তো যেন পুরো দুনিয়াটাই একত্রিত করে দেওয়া হলো। (জামে তিরমিজি: ২৩৪৬)।
রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো ইরশাদ করেছেন, “তোমরা সবসময় দুনিয়ার ব্যপারে তোমাদের চাইতে নিচু কারো প্রতি লক্ষ্য করবে, আর দ্বীনের ব্যপারে তোমাদের চাইতে উত্তম কোন ব্যক্তির দিকে লক্ষ্য করবে। এতে করে তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর দেওয়া নেয়ামত গুলোর কথা স্বরণ করতে পারবে এবং এটা তোমাদেরকে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞশীল হতে সাহায্য করবে”।
অল্পে তুষ্টি থাকতে পারলেই আপনি সুখ অনুভব করতে পারবেন প্রতিনিয়ত। আর অল্পে তুষ্টি না থাকলে আপনি কখনো সুখ অনুভব করতে পারবেন না।
ধৈর্য ও সহনশীল জীবন-যাপনের মধ্যে দিয়ে সুখ অন্নেষণ করুন। দুনিয়ার সম্পত্তির প্রতি অধিক ভালোবাসা পরকালের ক্ষতির কারণ হয়ে যাতে না দাঁড়ায়, সে দিকে আমাদের লক্ষ রাখতে হবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের অন্তরের সুখ-শান্তি দান করুন, এবং জীবন চলার প্রয়োজনীয় উপকরণ দান করুন।
অল্পে তুষ্টি থাকা নিয়ে, আল্লামা শেখ সাদী (রহ:) এর একটি চমৎকার কবিতার বাংলা অনুবাদ দিয়েই লেখার ইতি টানছি:
একদা ছিলনা জুতা চরণ যুগলে
দহিল হৃদয়-অমন সেই ক্ষোভানলে,
ধীরে ধীরে চুপি চুপি দুঃখাকুল মনে
গেলাম ভজনালয়ে ভজন কারনে।
দেখি সেথা একজন পদ নাহি তার
অমনি জুতার খেদ ঘুচিল আমার।
পরের দুঃখের কথা করিলে চিন্তন
আপনার মনে দুঃখ থাকে কতক্ষণ?