২ ছিনতাইকারীর বিভিন্ন মেয়াদে সাজা
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ জুলাই ২০১৯, ২:৩৬:১৩ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার ::
নগরীর সাগরদীঘির পারে ছিনতাইকারীদের হাতে নিহত আব্দুল আহাদ হত্যা মামলায় ছিনতাইকারী মোঃ রিপনকে মৃত্যুদন্ডের আদেশ প্রদান করা হয়েছে। সিলেটের মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক মোমিনুন নেসার আদালতে গতকাল বৃহস্পতিবার এ চাঞ্চল্যকর মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী রিপনকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা প্রদান করা হয়। বিচারক রায় ঘোষণার সময় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী রিপনকে মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসির রশিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেন। তিনি মহামান্য হাইকোর্ট কর্তৃক দি কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিকিউটর ১৮৯৪ এর ৩৭৪ ধারা অনুসারে মৃত্যুদন্ড অনুমোদন করা সাপেক্ষে রায় কার্যকরের নির্দেশ দেন। রায়ে আসামী সোহেল আহমদকে দন্ডবিধির ৩৯৪ ধারায় অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় ১০ বছর সশ্রম কারাদন্ড, ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে অতিরিক্ত ৫ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়। আসামী জীবন রহমান জালালকে দোষী সাব্যস্থ করে তার হাজতকালীন সময় ১ বছর ১০ মাস সাজার মেয়াদ গণ্য হওয়ায় তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী রিপন ছাড়া অন্য আসামীরা পলাতক রয়েছে।
২০১১ সালের ১৮ আগস্ট দিবাগত রাত ১০ টার দিকে মোঃ আব্দুল আহাদ বাইসাইকেলযোগে উত্তর বাগবাড়ী থেকে হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজারের উদ্দেশে বের হন এবং রাত ৩ টার দিকে এসে সেহরী খাবেন মর্মে তার মাকে বলে যান। সে অনুযায়ী মাজারে নামাজ কালাম পড়ে মাজার হতে তার বাইসাইকেলযোগে বাসার ফেরার পথে সাগরদীঘির পার হয়ে মণিপুরী শ্মশানঘাট দিয়ে ৭/১১ পয়েন্টে বর্ণমালা স্কুলের সামনে পৌঁছার পূর্বে রাত সাড়ে ৩ টায় অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জন দুষ্কৃতকারী আব্দুল আহাদের পথরোধ করে নোকিয়া মোবাইল সেট (যার নং ০১৭২৯-৫৫৯৯৪৭) ও নগদ ২ শত টাকা ছিনিয়ে নেয়। এ সময় ছিনতাইকারীরা চাকু দিয়ে আহাদের পিঠের ডানপাশে সজোরে আঘাত করে রাস্তার পাশে ফেলে দিয়ে সাগরদীঘিরপারের দিকে চলে যায়। পরে তাকে লোকজন ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করেন। হাসপাতালের ১১ নং ওয়ার্ডে চিকিৎসারত অবস্থায় তাকে ঢাকায় বক্ষব্যাধি হাসপাতাল স্থানান্তর করেন চিকিৎসকগণ। চিকিৎসকের পরামর্শে ছাড়পত্র প্রদান করলে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা হলে ক্বীনব্রীজ হয়ে লাউয়াই পেট্রোল পাম্পের কাছে পৌছার পর আব্দুল আহাদের অবস্থার অবনতি হলে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে নেয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় তার পিতা মোঃ মোতালেব কোতোয়ালী থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন। যার নং ১৩৪৮, তারিখ ১৯/০৮/১১। পরদিন মোঃ মোতালেব বাদী হয়ে কোতোয়ালী থানায় অজ্ঞাত আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার নং ৬৪, তারিখ ২০/০৮/২০১১ ধারা ৩০২, ৩৪ দন্ডবিধি। এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই মোঃ রায়হান আলী তদন্ত শেষে ২০১১ সালের ৯ ডিসেম্বর এনামুল হক রাজিব, সোহেল আহমদ, মোঃ রিপন ও জীবন রহমান জালালকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। যার নং ৮৫৭, ধারা ৩৯৪, ৩০২, ৪১১ ও ৩৪ দন্ডবিধি। এ মামলার ৪ আসামীর বিরুদ্ধে ২০১২ সালের ২২ অক্টোবর আদালতে চার্জ গঠন করা হয়। বিচারান্তে ২১ জন সাক্ষীর মধ্যে ১১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ ও যুক্তিতর্ক সম্পন্ন করা হয়। সাক্ষ্য গ্রহণকালে আসামী এনামুল হক রাজিব মারা যান বলে ২০১৮ সালের ১৬ জুলাই আদালতকে রাষ্ট্রপক্ষ নিশ্চিত করেন। যার ফলে তাকে বিচার হতে বাদ দেয়া হয়। ২০১১ সালের ২৫ আগস্ট আসামী সোহেল আহমদ ও এনামুল হক রাজিব ৩ সেপ্টেম্বর মোঃ রিপন আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারা অনুযায়ী ছিনতাই ও হত্যার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে স্বীকার করেন। কিন্তু পরে রিপন স্বীকারোক্তি প্রত্যাহারের আহবান করলেও নামঞ্জুর করা হয়। বিচারান্তে আদালত আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় রিপনকে মৃত্যুদন্ড ও অন্যান্য আসামীদের বিভিন্ন মেয়াদে দন্ড প্রদান করা হয়।
মামলা পরিচালনা করেন রাষ্ট্রপক্ষে মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি এডভোকেট মফুর আলী ও আসামী পক্ষে স্টেইট ডিফেন্স জামিল আহমদ, মোঃ শামীম আহমদ, শাহ আলম, মহিউদ্দিন।