গোলাপগঞ্জে এলপি গ্যাস জালিয়াতি চক্রের কবল থেকে ৩’শ সিলিন্ডারসহ ১ জন আটক
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ জুলাই ২০১৯, ২:৪৫:৩৮ অপরাহ্ন
আব্দুল আহাদ, গোলাপগঞ্জ থেকে ::
গোলাপগঞ্জে আবারও গ্যাস সিলিন্ডার জালিয়াত চক্রের কবল থেকে ৩ শ গ্যাস ভর্তি সিলিন্ডারসহ ১ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এক বোতল থেকে অন্য বোতলে গ্যাস ভরতে গিয়ে অতীতে পৃথক ঘটনায় কমপক্ষে ১০ জন লোক প্রাণ হারিয়েছে। এরপরও জালিয়াত চক্র থেমে নেই। গতকাল হেতিমগঞ্জ বাজারে পুলিশ অভিযান চালিয়ে জালিয়াত চক্রের কবল থেকে ওইসব গ্যাস ভর্তি সিলিন্ডার আটক করে। এ ব্যাপারে গোলাপগঞ্জ থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে প্রাপ্ত সংবাদে জানা যায়।
দেশের সরকারি মালিকানাধীন অন্যতম গ্যাস সিলিন্ডারের প্রতিষ্ঠান গোলাপগঞ্জের এলপিজি প্লান্ট থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার বোতল গ্যাস সিলিন্ডার দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে। জ¦ালানী চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতারকরাও একের পর এক তাদের কৌশল পরিবর্তন করে ভরা বোতল থেকে খালি বোতলে গ্যাস ভরে জনগণকে ঠকাচ্ছে। বিগত দিনে গোলাপগঞ্জ এলপিজি প্লান্টের সিলিন্ডার থেকে গ্যাস জালিয়াতি করতে গিয়ে একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। গ্যাস ট্রান্সফার করাকালীন সময়ে প্রচন্ড শব্দে সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে পৌর এলাকার খাসিখাল ব্রীজ সংলগ্ন এলাকা ও সদর ইউনিয়নের রাণাপিং তাহিপুরে পৃথক দুটি ঘটনায় কমপক্ষে ১০ জন লোক প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়ে সারা জীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে অনেককে। তারপরও জালিয়াত চক্র থেমে নেই। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ফাঁকি দিতে গিয়ে ঘন ঘন স্থান পরিবর্তন করে তারা গ্যাস সিলিন্ডার জালিয়াতি কার্যক্রম চালিয়েই যাচ্ছে।
দেশের সরকারি মালিকানাধীন অন্যতম এলপিজি গ্যাস কোম্পানীর অবস্থান হচ্ছে গোলাপগঞ্জে। গোলাপগঞ্জের ৭টি কূপ থেকে উত্তোলিত জ¦ালানি পদার্থ থেকে এলপি সংগ্রহ করে বোতল জাতের মাধ্যমে এলপিজি প্লান্ট পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান এশিয়াটিক এনার্জীর মাধ্যমে তা বিক্রি করছে। বিভিন্ন সরবরাহকারী ও ডিলার ওইসব প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সিলিন্ডার ভর্তি গ্যাস সংগ্রহ করে বিভিন্ন জনের কাছে বিক্রি করে। আর তাদেরই একটি দল ওইসব সিলিন্ডার গোলাপগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে রেখে সাড়ে ১২ কেজি ওজনের সিলিন্ডার থেকে গ্যাস বের করে ২টা দিয়ে ৩টি সিলিন্ডার ভর্তি করে। এতে একদিকে গ্রাহকরা প্রতারিত হচ্ছেন, অন্যদিকে দুর্ঘটনায় জানমালের বড় ধরনের আশংকার সৃষ্টি হয়। গোলাপগঞ্জ থানার পুলিশ গোপন সংবাদে জানতে পারে হেতিমগঞ্জ বাজারের একটি দোকানে বাহিরের দিকে তালা লাগিয়ে দরজা বন্ধ করে গ্যাস সিলিন্ডার জালিয়াতি করছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে পুলিশ ঘরটি ঘেরাও করে ৩ শ বোতল সিলিন্ডার আটক করে। এসময় জালিয়াত চক্রের অন্যান্যরা পালিয়ে গেলেও ধরা পড়ে বরিশাল জেলার হিজলা থানার দোয়াবাড়িয়া গ্রামের মৃত মুহাম্মদ আলীর পুত্র তানবীর আলী (৩৫)। বিগত ২ বছর পূর্বে ফুলবাড়ী ইউনিয়নের কিছমত মাইজভাগ গ্রামের একটি বাড়ী থেকে গ্যাস জালিয়াতি কালীন সময়ে তানভীর আলী পুলিশের হাতে ধরা পড়ে।
এদিকে বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত সংবাদে জানা যায়, গোলাপগঞ্জের এলপিজি প্লান্টকে কেন্দ্র করে একটি অপরাধীচক্র দীর্ঘদিন থেকে তাদের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। গতকাল পুলিশ জালিয়াত চক্রের কবল থেকে ৩ শ বোতল এলপি সিলিন্ডার আটক করার পর জালিয়াত চক্রের মধ্যে অনেকটা আতংকের সৃষ্টি হয়। পুলিশি অভিযানের ভয়ে অনেকেই তাদের জাল জালিয়াতি কার্যক্রম অনেকটা বন্ধ করে দেয়।
এ ব্যাপারে গোলাপগঞ্জ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মিজানুর রহমান প্রতিবেদকে জানান তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। রাতেই পুলিশ বাদী হয়ে দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করবে। জালিয়াত চক্রের অন্যান্য স্থানেও অভিযান চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলে তিনি প্রতিবেদককে জানান।