সুনামগঞ্জে ডুবছে গ্রাম, ডুবছে শহর
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ জুলাই ২০১৯, ৩:০৬:২৬ অপরাহ্ন
জসিম উদ্দিন, সুনামগঞ্জ থেকে ::
সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি হয়েছে। ডুবছে গ্রাম, ডুবছে শহর। ডুবুডুবু অবস্থায় নতুন নতুন এলাকা। জেলার ৫টি উপজেলায় গ্রামগুলো প্লাবিত হয়ে এবার শহরে বন্যার পানি ডুকেছে। সুরমা নদীর পানি বেড়ে পৌর এলাকার নবীনগর, ষোলঘর, কাজীর পয়েন্ট, পশ্চিম বাজার নতুন পাড়া, পশ্চিমবাজার, তেঘরিয়া, সাহেব বাড়ির ঘাট, বড়পাড়া, মল্লিকপুর, ওয়েজখালী, জলিলপুরসহ বেশ কিছু এলাকায় বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। শহরের বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, পশু হাসপাতাল, মার্কেটসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়েছে। গতকাল বেলা ১২ টায় সুনামগঞ্জের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপদ সীমার ৯৭ সেন্টিমিটার বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ২০০৪ সালে পৌর এলাকায় বন্যার পানি ঢুকায় নৌকা দিয়ে লোকজনকে চলাচল করতে হয়েছিলো। বন্যা পরিস্থিতি অবনতি ঘটলে আবারও শহরে নৌকা দিয়ে চলাচল করতে হবে লোকজনের। এবার পশ্চিম বাজার থেকে সাহেববাড়ী পর্যন্ত পায়ে হেঁটে চলার পথ থাকলেও পানি বাড়ায় নৌকা দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে লোকজনদেরকে। শহরের আরপিননগরে জলাবদ্ধতায় অসহনীয় দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। মধ্য বাজারে হাঁটু পর্যন্ত পানি গড়াচ্ছে। উকিলপাড়া, কাজীর পয়েন্টে, নতুনপাড়া, জামতলায় কোমড় পানি মাড়িয়ে চলাচল করতে হচ্ছে পাড়ার বাসিন্দাদের।
এদিকে, তাহিরপুর উপজেলা সদরে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পানি ঢুকে পড়েছে। জেলার সবক’টি গ্রামীণ সড়ক, বাজার পানিতে টইটুম্বর করছে। এ উপজেলার প্রায় শতাধিক গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছেন। বর্ষণের সাথে ঝড়ো হাওয়া বেড়ে গেলে ঢেউয়ের আঘাতে বাড়ি ঘরে হানা দেবে। দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামই প্লাবিত হচ্ছে। এরা অনেকেই স্বপ্রনোদিত হয়ে স্কুল মাদ্রাসায় আশ্রয় নিয়েছে। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সাথে তাহিরপুর, সুনামগঞ্জ সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। সদর উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের ১৪টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। দক্ষিণ সুনামগঞ্জের শিমুলবাক ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ পানিবন্দী জীবন যাপন করছেন। সর্দারপুর গ্রামের আব্দুল লতিফ জানান, গ্রামের ভিতরে পানি ঢুকে পড়ায় ঘর থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না। এমন ভাবে ক’দিন বর্ষণ হলে বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে যাবে। পানিবন্দী হওয়ায় রান্নাবান্নাসহ নানাবিধ কাজ করতে বিঘœ ঘটছে।
মোহনপুর ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল হক জানান, ইউনিয়নের ১৬ টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দী, ভেঙ্গে যাচ্ছে রাস্তা-ঘাট, ঘরবাড়ি। ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বড়দল উত্তর ইউপি চেয়ারম্যান এম এ কাশেম জানান, আমার ইউনিয়নের ৩১ টি গ্রামের ২৬ টি গ্রামই পানিবন্দী। তাদের মধ্যে পরিষদের পক্ষ থেকে চাল এবং আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে চিড়া, গুড় ও মুড়ি বিতরন করছি। ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দক্ষিণ সুনামগঞ্জের পশ্চিম পাগলা ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল হক জানান, আমার ইউনিয়নের বেশ কিছু ঘরে পানি প্রবেশ করছে। পানিবন্দী রয়েছে ৬ টি গ্রামে। পানি বাড়তে থাকলে দুর্ভোগ বাড়বে। সাচনা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন, ইউনিয়নের ২৭ টি গ্রামের মধ্যে ২০ টি গ্রামই পানিবন্দী। বন্যা দুর্গতের মধ্যে শুকনো খাবার ভিতরন করা হয়েছে। চাল ও আর্থিক সহায়তা এখনো দেয়া হয়নি। সাচনা ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান বলেন, প্রায় দুই শতাধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বাড়ি-ঘরে পানি প্রবেশ করায় দুর্ভোগ বাড়ছে। এখনও সরকারি কোন সহায়তা পৌছায়নি। সাচনা বাজার ইউনিয়নের সুজাতপুর গ্রামের আলী হোসেন বলেন, আমার একটি ফিসারী ছিল কিন্তু বন্যার পানি তিন লক্ষ টাকার মাছ ভেসে গেছে। রাধানগর গ্রামের দিলাল আহমেদ জানান, গ্রামের প্রায় দেড় শতাধিক ঘরবাড়িতে রান্না বন্ধ রয়েছে। এখন পর্যন্ত কোন সহায়তা পৌঁছায়নি। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান বলেন, জেলায় বন্যায় ১২৮০০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বন্যার্তদের মাঝে ৩ শ মেট্রিকটন চাল, ৩৭৬৫ কার্টুন শুকনো খাবার ও ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে। দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের অধীন ১০ আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। এছাড়া স্কুলগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, সুরমার পানি ৯৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টিপাত বাড়লে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হবে।