উৎমা সীমান্তের এডিএম’র বাগান থেকে চলছে অবৈধ পাথর উত্তোলন
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ জুলাই ২০১৯, ১:১৩:১৩ অপরাহ্ন
আবুল হোসেন ::
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ সীমান্তের উৎমা পাথর কোয়ারি এলাকার বনপুর মৌজার সেই বিশাল আয়তনের ‘এডিএম সাবের’ বাগান থেকে আবারও অবৈধ পাথর উত্তোলন শুরু করেছে পাথরখেকো চক্র।
গত কয়েক বছর দৌরাত্ম্য বন্ধ থাকার পর গত ঈদুল ফিতরের আগে থেকে স্থানীয় একটি পাথরখেকো চক্র বোমা ও লিস্টার মেশিন লাগিয়ে পাথর উত্তোলন করছে। ফলে অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে বাগানটি। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন। শুধু বাগানের জায়গা থেকে নয়, সীমান্তের জিরো লাইন থেকেও পাথর উত্তোলন চলছে। পাথরখেকোদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গত ৩০ জুন জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছেন নগরীর মিরের ময়দানের বাসিন্দা ও বাগান মালিকের ছেলে ভিকারুল ইসলাম চৌধুরী।
অভিযোগ থেকে জানা যায়, এর আগেও একই চক্র বাগানের গাছপালা কর্তনসহ পাথর উত্তোলন করে নেয়। সম্প্রতি উচ্চ আদালতের রায় ইজারাদারের পক্ষে যাওয়ার পরও পাথরখেকোরা আবারও লুটপাটে নামে। ইতোমধ্যে ৪ টি স্থানে বোমা মেশিন লাগিয়ে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। ১৯৬৩ সালে সিলেট নগরীর মিরের ময়দান এলাকার বাসিন্দা এডিএম (পরবর্তীতে জেলা প্রশাসক) সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী উৎমা সীমান্ত এলাকার বনপুর মৌজায় ২০ একর ভূমি ইজারা নিয়ে বাগান করেন। আশির দশকে তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে এসআই চৌধুরী (অবসরপ্রাপ্ত সচিব) বাগানটি দেখভাল করছেন। ইজারার মেয়াদ থাকাবস্থায় মালিককে না জানিয়ে ২০০৪ সালে স্থানীয় ভূমি অফিস ইজারা বাতিল করে। সর্বশেষ ২০০৯ সালে বাগান মালিক হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন করেন। রিটের প্রেক্ষিতে ২০১১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ হোসাইন ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম দীর্ঘ মেয়াদী ইজারা নবায়নসহ সরকারকে খাজনা গ্রহণের নির্দেশ দেন। খাজনা গ্রহণের নির্দেশ বাস্তবায়ন না করে জেলা প্রশাসন আপিল করে। উচ্চ আদালতের আপিলের রায় পান ইজারাদার। সুপ্রিমকোর্টে সম্প্রতি রিভিউ করে সরকার পক্ষ। রিভিউ এর শুনানী এখনো হয়নি। এ অবস্থায় জনৈক মোহাম্মদ আলী ও তার লোকজন একাধিক স্থানে গর্ত করে পাথর উত্তোলন করছে।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিজেন ব্যানার্জী জানান, মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। তাদেরকে লিখিতভাবে অভিযোগ দিতে বলেছি অথবা মামলা করার জন্য বলেছি। তারপরও এসিল্যান্ডকে সরেজমিন পরিদর্শন করে পাথর উত্তেলন করতে নিষেধ করা হয়েছে। অভিযোগ পেলে বাগান ধ্বংস ও পাথর উত্তোলনের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ অবস্থায় ৩০ জুন জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছেন নগরীর মিরের ময়দানের বাসিন্দা ও বাগান মালিকের ছেলে ভিকারুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি আবেদনে উল্লেখ করেন, তার পিতা সাবেক এডিএম ও জেলা প্রশাসক মরহুম সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ও ভগ্নিপতি মরহুম সৈয়দ মামদ উল্লাহ কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বনপুর মৌজায় ২০ একর অকৃষি ভূমি স্থায়ীভাবে বন্দোবস্ত গ্রহণ করে সেখানে একটি বাগান সৃষ্টি করেন। যা স্থানীয়ভাবে ‘‘এডিএম সাবের’’ বাগান হিসেবে পরিচিত। বন্দোবস্ত মোতাবেক ওয়ারিশ সূত্রে খাজনাদি পরিশোধ করে ভোগদখল করে আসা অবস্থায় স্থানীয় ভূমি অফিস ভুলক্রমে ওই জায়গা খাস খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত করে।
ভিকারুল ইসলাম চৌধুরী আবেদনে আরও উল্লেখ করেন, তার বড় ভাই অবসরপ্রাপ্ত সচিব সাইফুল ইসলাম উচ্চ আদালতে মামলা করলে রায় পক্ষে আসে। পরে সরকারের পক্ষে আপিল করলে পূর্বের রায় বহাল থাকে। এলাকার একটি পাথরখেকো চক্র দীর্ঘদিন ধরে বাগান থেকে গাছ কর্তন করে নিচ্ছে। সম্প্রতি গর্ত খনন করে বোমা মেশিন দ্বারা খনিজ সম্পদ পাথর উত্তোলন করছে। আবেদনে তিনি জরুরি ভিত্তিতে দায়িদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও বাগানটি রক্ষায় জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।