বন্যার্তদের জরুরী সাহায্য প্রয়োজন
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ জুলাই ২০১৯, ১:২৪:১৩ অপরাহ্ন
‘রোদে পোড়া আর বৃষ্টিতে ভেজা’ এদেশের সাধারন মানুষের ভাগ্যলিপি বলা যায়। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে বন্যার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি মেনে নিয়েই বেঁচে থাকতে হয় তাদের। ইতোমধ্যে সিলেটসহ দেশের অনেক স্থানে প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বন্যা দেখা দিয়েছে। গতকাল দৈনিক জালালাবাদে ‘সুনামগঞ্জে ডুবছে গ্রাম, ডুবছে শহর’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ইতোমধ্যে সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি হয়েছে। ডুবছে গ্রাম, ডুবছে শহর। ডুবু ডুবু অবস্থায় নতুন নতুন এলাকা। জেলার ৫টি উপজেলার গ্রামগুলো প্লাবিত হয়ে এবার শহরে বন্যা পানি ঢুকছে। শহরের হাসপাতালসহ অনেকগুলো মার্কেট ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়েছে।
বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এ অবস্থায় সুনামগঞ্জের বিভিন্ন নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় জেলার ১৬৮টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়া বন্যায় জামালগঞ্জে পানিবন্দী শতাধিক গ্রামের মানুষ। বহু গ্রামের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করায় বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দিয়েছে। হাটবাজারে পানি ওঠায় বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। অপরদিকে সিলেটের অপর উপজেলা গোয়াইনঘাটে প্রবল বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে ২ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। হাওরাঞ্চলের ২ শতাধিক বাড়িঘরে প্রবেশ করেছে বন্যার পানি। ফলে উপজেলার সাথে জেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
ইতোমধ্যে উপজেলার ৮০ ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হয়ে পড়েছে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত। বিদ্যুতের ৩টি প্রধান খুঁটি ভেঙ্গে পড়েছে। ফসলী জমির শতকরা ৮০ ভাগ বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। পশুখাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। কাজকর্ম বন্ধ থাকায় শ্রমিক ও দিনমজুরেরা পড়েছেন বিপাকে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মানববেতর দিন কাটাচ্ছেন। বলা বাহুল্য, ডেল্টা কান্ট্রি অর্থাৎ বদ্বীপ দেশ বাংলাদেশে বন্যা কোন অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। এটা একটি সাংবাৎসরিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ। যে বছর এটা বেশী হয়, সে বছর বন্যাক্রান্ত এলাকাগুলোর মানুষের দুর্ভোগ বাড়ে। কম হলে দুঃখ দুর্দশাও কম হয়। বাংলাদেশের এই প্রাকৃতিক অবস্থা বা অবস্থানের দরুণ এদেশের সরকারসহ সকল মানুষকে বিশেষভাবে বন্যাপ্রবণ এলাকার মানুষকে প্রস্তুত থাকতে হয় এ ধরণের দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য।
এজন্য বাংলাদেশে রয়েছে ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট অর্থাৎ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ। রয়েছে ত্রাণ মন্ত্রনালয়। এ কথা অনস্বীকার্য যে, ত্বরিৎ সময়োপযোগী ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে সাম্প্রতিক সময়ে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু বন্যার্ত মানুষের দুঃখ দুর্দশা তেমন কমানো যায়নি। বিনা সুদে ঋণদান ও বীজধান সরবরাহসহ বিভিন্ন কর্মসূচী সত্বেও কৃষকদের বন্যায় বিপর্যস্ত এমনকি সর্বস্বান্ত হতে দেখা যাচ্ছে।
এদেশের বন্যা উপদ্রুত হাওর ও নি¤œাঞ্চলের মানুষেরা সংগ্রামী। কিন্তু তাদের এই দুঃখ দুর্দশার সময় তাদের পাশে দাড়াঁনো সরকারসহ দেশের সকল সচেতন মানুষের কর্তব্য। প্রয়োজন তাদেরকে আর্থিক সহায়তাসহ সব ধরণের সহায়তা প্রদান। এ মুহূর্তে সিলেটসহ দেশের অনেকস্থানে অসংখ্য মানুষ পানিবন্দী। সিলেট ও সুনামগঞ্জের কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাদের না আছে খাদ্য, না আছে বিশুদ্ধ পানীয় জল। নেই রোজগারপাতি। শুরু হয়েছে অর্ধাহার অনাহারের জীবন।
এ অবস্থায় সরকারী উদ্যোগে বন্যার্ত মানুষের চিড়ে মুড়ি চাল ডালসহ বেঁচে থাকার সামগ্রী ও আর্থিক সাহায্য প্রদান জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও স্থানে আশ্রয় নেয়া বন্যার্ত মানুষের কাছে খাদ্যসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছানো এখন সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সাহায্য করতে হবে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ও বিপর্যস্ত মানুষকে। আমরা এদিকে ত্রাণ মন্ত্রনালয়সহ সরকারের সকল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও সমাজের বিত্তবান মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।