ইতিহাসে নদী ও সমুদ্রে (শেষ পর্ব)
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ জুলাই ২০১৯, ১:৩২:২৪ অপরাহ্ন
ইতিহাসে নদী ও সমুদ্রে
।। সারওয়ার চৌধুরী ।।
প্রিন্সেস হায়া’র পলায়ন রূপকথার অধিক বিস্ময়
শেখ মোহাম্মদের কাব্যভাষা সাদামাটা বয়ান আকারের। বিশেষত, আরবি প্রকরণে যেসব কবিতা ‘নাবাতি’, মানে সামাজিক রাজনৈতিক ও পারিবারিক সুখ দুখ নিয়ে যেসব কাব্যিক ভাষা বিন্যাস, সেসবে অলংকার থাকে না বললেই চলে।
প্রিন্সেস হায়ার দিকে ইংগিত করে লেখা কবিতাটির কিছু পংক্তি বাংলায় এ রকম হয় “কিছু ভুল ভুল না, প্রতারণা” বা ” “আমার কাছে প্রমাণ আছে তুমি দোষী” বা “এখন তুমি মরো কিংবা বাঁচো, তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না”। আসলে এই যুগে কবিতা যে জায়গায় এসে পৌঁছেছে, তার তুলনায় এসব খেদোক্তি ঠিক কবিতা হয়ে ওঠে না। তবে তার কিছু রোমান্টিক কবিতা বেশ মনোহর।
শেখ মোহাম্মদের কাছে হায়ার বিরুদ্ধে প্রমাণ সত্যিই আছে কীনা আদালতে হয়ত পরিস্কার হবে। ষড়যন্ত্রের শিকারও তো হতে পারেন প্রিন্সেস হায়া। শেখ মোহাম্মদের বিরুদ্ধেও চক্রান্ত থাকতে পারে। ঘটনার নানা দিক এখনো রহস্যাবৃত।
আরব আমিরাতের শরিয়া আইন মোতাবেক পুরুষ সহজেই তালাক দিতে পারে। কিন্তু নারী তালাক নিতে হলে বেশ-একটা লম্বা প্রসেসের ভিতর দিয়ে যেতে হয়। তবু দেখেছি, আমিরাতি নারীরা বাধ্য হয়ে আদালতে যায় বরের কাছ থেকে ‘খোলা তালাক’ নিতে। আমি এ দেশের আদালতে আঠারো বছর আগে একটা ব্ল্যাকমেইল মামলা লড়েছি। মানে এক আরবি ব্ল্যাকমেইলের প্রয়াস নিয়ে উল্টা মামলা করেছিল। নয় মাস লড়েছি। আট এজলাস, তিন জজ বদল হয়, রায় আমার পক্ষে আসে। তার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়।
বৃটেনের আদালতে মামলাটি আরো জটিল হওয়ার কথা। কারণ এতে বহু বিবাহের সম্পর্ক আছে। এই জটিলতা বৃটেনের সাথে দীর্ঘ বন্ধুত্বে ফাটল ধরাতে পারে, কেননা, বর হলেন দুবাইয়ের শাসক ও আরব আমিরাতের প্রধানমন্ত্রী।
‘টাইম’ ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ মোহাম্মদ এরিমধ্যে বৃটেনের হাইকোর্টের পারিবারিক আদালত বিভাগে প্রিন্সেস হায়াকে তালাক দেয়ার মামলা করেছেন এবং দুই সন্তানকে ফেরত দেয়ার আর্জি পেশ করেছেন। গত ২২ মে জাস্টিস মুুউরের কক্ষে প্রথম বৈঠক হয়। পরের তারিখ চলতি জুলাই মাসের ৩০ তারিখ।
বৃটিশ মিডিয়া জানিয়েছে, শেখ মোহাম্মদের পক্ষে লড়ছেন বিখ্যাত ডিভোর্স লইয়ার হেলেন ওয়ার্ড। প্রিন্সেস হায়ার পক্ষে রয়েছেন আইনজীবী ফিওনা শ্যাকলেটন।
উল্লেখ্য, শেখ মোহাম্মদ বিন রাশিদ আল মাকতুমের বড় মেয়ে প্রিন্সেস লতিফা ও আরেক মেয়ে পলায়নের চেষ্টা করায়, প্রিন্সেস হায়া পলায়নের সংগত কারণ থাকতে পারে বলে বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন। ৩৩ বছরের প্রিন্সেস লতিফার একটি ৩৯ মিনিটের ভিডিও মিডিয়ায় প্রকাশ পেয়েছে। ‘ফরেনপলিসি’ রিপোর্ট করেছে, এ ভিডিও-তে লতিফা জানিয়েছেন তার বাবার কঠোর শাসনে তাদের স্বাধীনভাবে কিছু পছন্দ করবার অধিকার নাই। তাছাড়া প্রাসাদে সহিংস পরিবেশে তার দমবন্ধ অবস্থা। প্রিন্সেস হায়াও ইতোমধ্যে জানিয়েছেন শেখ মোহাম্মদ ‘বিপদজনক মানুষ’।
এক যুগের অধিক ফিলানথ্রপি থেকে শুরু করে আন্তরিক পারিবারিক মুহূর্ত পর্যন্ত স্বদেশে ও বিদেশে মুখে মুখে থাকা এ ‘পারফেক্ট কাপল’ আর যৌথ জিবনে থাকবার সম্ভাবনা নাইই বলা যায়। হয়ত সময় সবকিছু খোলাসা করবে। (সমাপ্ত)
লেখক: জালাল উদ্দিন রুমি গবেষক, অনুবাদক, কবি, আবুধাবি থেকে