হারিয়ে যাচ্ছে কদমের দিন
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ জুলাই ২০১৯, ২:৪৩:৪৩ অপরাহ্ন
মুনশী ইকবাল ::
বর্ষা মানেই যেনো কবিগুরু ভাষায় ‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল’। বৃষ্টির সাথে কদমের ভালোবাসা খুবই নিবিড়। গত কয়েকদিন ধরে আষাঢ়ে বৃষ্টি বাংলার প্রকৃতিতে বর্ষার রূপ লাবণ্য আর কদমের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে বেশ শক্তভাবে। আমাদের শৈশবে ঘরের জানালার কিছুটা দূরে একটি কদম গাছ ছিলো।
বর্ষায় সেই গাছ থেকে সাদা টেনিস বলের মতো বৃষ্টিভেজা স্নিগ্ধ কদম ফুল যখন মাটিতে পড়তো আমরা কুড়িয়ে নিয়ে আসতাম। সাজিয়ে রাখতাম কাঁচের বয়ামের মধ্যে। যখন ঝুম বৃষ্টি হতো, বাইরে যেতে পারতাম তখন জানালার কাছে বিছানায় বসে থাকতাম আর হাতির কানের মতো চ্যাপ্টা কদমের পাতা গড়িয়ে বৃষ্টির জলের সাথে মখমলের মতো কদম ফুলের মাটিতে পড়া দেখতাম মুগ্ধ হয়ে। আমাদের জানালার কাছের সেই কদম গাছ এখন আর নেই। কোনো এক ঝড়ের রাতে তা ভেঙে পড়েছিলো, এরপর তা কেবল আমাদের শৈশবের এক স্মৃতি হয়েই আছে।
এখন আকাশছোঁয়া দালানকোঠা আর কোটি মানুষের ঠাসবুনটের ভীড়ে, কদমের সেই শুভ্ররাগে হৃদয় রাঙিয়ে নেয়ার সুযোগ নাগরিক অবসর কিংবা ব্যস্ততায় প্রায় নেই বললেই চলে। একটা সময় যেদিকেই যেতাম এই সিলেট শহরে দুই একটা কদম গাছ চোখ পড়তো। কিন্তু এখন আর সেইভাবে কদম গাছ দেখা যায়না, ফলে তেমন দেখা মিলেনা কদম ফুলেরও। আষাঢ়ের মেঘ গুড়গুড় ডাকে বর্ষার স্মারক এই স্বর্ণগোলকের সেই প্রাচুর্য্যটা আগের মতো আর নেই। নাগরিক উঠোনে সেই কদমের ঘ্রাণ এখন অনেকটাই যেনো অতীত, নেই আর আগের মতো বিত্ত-বৈভব। আষাঢ়ে বৃষ্টি তো ছুঁয়েছে বৃক্ষ, তবে সেই রিমঝিম জলে কদমের কোমলতা যেনো খুঁজে পাওয়া ভার।
যতোদিন যাচ্ছে ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাচ্ছে ছোট্ট ছেলেমেয়েদের খেলা করা সেই কদম ফুল। কেবল শিশুরা নয় কদম ফুল সবাই পছন্দ করে। আমাদের দেশে দেখা গেলেও কদমের আদি নিবাস ভারতের উষ্ণ অঞ্চল, চীন ও মালয়ে। কদম নীপ নামেও পরিচিত। এছাড়া বৃত্তপুষ্প, মেঘাগমপ্রিয়, কর্ণপূরক, মঞ্জুকেশিনী, পুলকি, সর্ষপ, ললনাপ্রিয়, সুরভি ইত্যাদি মনোহর সব নাম রয়েছে কদমের।
ছোট বলের মতো দেখতে এ ফুলের ভেতর ভাগে রয়েছে মাংসল পুষ্পাধার। যাতে হলুদ রঙের পাপড়িগুলো আটকে থাকে। পাপড়ি মাথায় থাকে সাদা রঙের পরাগ। হলুদ-সাদা কদমফুল গাঢ় সবুজ পাতার ফাঁকে দেখতে সুন্দর লাগে। ফুলে ভরা কদমগাছ দেখতে অসাধারণ হলেও এর আর্থিক মূল্য তেমন একটা নেই। কাঠ নরম বলে আসবাবপত্র তৈরি করা যায় না। তবে এর কাঠ দিয়ে কাগজ, দেয়াশলাই ছাড়াও তৈরি হয়ে থাকে বাক্সপেটরা। আর কদমের ছাল, পাতা কিংবা ফুলের রস কৃমি ও জ্বরনাশক এবং বলকারক।
একসময় কদম গাছ লাগানোর জন্য সরকারিভাবে বেশ প্রচার প্রচারণা করা হতো। এখন আর সেই প্রচারণা নেই, নেই কদমের প্রতি আগের মতো সেই কদর। তাই ঐহিত্য হোক আর পরিবেশের ভরসাম্য রক্ষায় বৃক্ষরোপনের সাথে কদম গাছের প্রতি যতেষ্ট গুরুত্ব দেয়া দরকার।