ঢাকাদক্ষিণ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ অসহায় হয়ে ইউএনও’র সহায়তা চাইলেন
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ জুলাই ২০১৯, ৯:৫৬:০৫ অপরাহ্ন
গোলাপগঞ্জ প্রতিনিধি ::
গোলাপগঞ্জে ঢাকাদক্ষিণ সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষসহ শিক্ষকদের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে ফরম বাণিজ্য বন্ধে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা চেয়ে আবেদন করেছেন। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ছাত্রদের একটি গ্রুপ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বড় অংকের টাকা আদায় করে নামমাত্র টাকা কলেজ ফান্ডে জমা দিয়ে বাকী টাকাগুলো তারা হাতিয়ে নেয়। শেষ পর্যন্ত কলেজ কর্তৃপক্ষ অসহায় হয়ে প্রশাসনের সহযোগিতা চাইতে বাধ্য হলেন। দীর্ঘ ৪/৫ বছর ধরে এভাবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ছাত্র ও প্রাক্তন ছাত্রদের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ গ্রুপ হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। শিক্ষকরা এর প্রতিবাদ করতে চাইলে হুমকী ধমকীর শিকার হন বলে প্রতিবেদককে জানান। মান-ইজ্জতের ভয়ে এতোদিন অধ্যক্ষসহ শিক্ষকরা নিরবতা পালন করলেও শেষ পর্যন্ত গত বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিতভাবে বিষয়টি জানানো হয়।
প্রাপ্ত সংবাদে জানা যায়, শিক্ষকদের পক্ষ থেকে ইউএনও বরাবর দেয়া অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকাদক্ষিণ সরকারি ডিগ্রি কলেজের বর্তমান ও সাবেক ছাত্রদের সমন্বয়ে বিশেষ গ্রুপ ডিগ্রী (পাস) তৃতীয় বর্ষের ফরম পূরণ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করছে। বিগত বেশ ক’বছর ধরে এভাবে ঐ গ্রুপের লোকজন টাকা আদায় করলেও নিরাপত্তাজনিত কারণে অধ্যক্ষ বা একাডেমিক কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত শিক্ষকরা এর প্রতিবাদ করতে সাহস পাননি। এ ব্যাপারে গত বৃহস্পতিবার কলেজের অধ্যক্ষ অনুরঞ্জন দাসের নেতৃত্বে শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধি দল উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণ সংক্রান্ত বিষয়ে বিশেষ গ্রুপ কর্তৃক টাকা পয়সা হাতিয়ে নেয়ার বিষয়টি তিনি অবহিত করলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মামুনুর রহমান লিখিত অভিযোগ দেয়ার জন্য পরামর্শ দেন। পরে কলেজের অধ্যক্ষ অনুরঞ্জন দাস, একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যবৃন্দের মধ্যে মোহাম্মদ এরশাদ আলী, মোহাম্মদ আব্দুর রহিম, ফয়ছল আহমদ, মোহাম্মদ ইউসুফ আলী, মোছাঃ কলছুমা বেগম, একেএম মাহমুদুল আলম, শারমিন আক্তার মুক্তা, মোহাম্মদ আল-মাসুদ, ফরিদা ইয়াসমিন, নন্দিতা পাল, বিধান চন্দ্র দাস, সাঈদ আহমদ হাসান রিমন কলেজের প্যাডে লিখিত ভাবে বিস্তারিত বিষয়ে উল্লেখ করে অভিযোগ করেন। এর অনুলিপি কপি উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এডভোকেট ইকবাল আহমদ চৌধুরীকেও দেয়া হয়।
এ ব্যাপারে কলেজ অধ্যক্ষ অনুরঞ্জন দাস প্রতিবেদককে জানান, বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। প্রতি বছরই ওরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিভিন্ন ভাবে ৫/৬ হাজার টাকা আদায় করে কলেজ ফান্ডে মাত্র দু/আড়াই হাজার টাকা জমা দেয়। এ ব্যাপারে কোন প্রশ্ন করলে হুমকী ধমকী দেয়া হয়। বিষয়টি কলেজ পরিচালনা কমিটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মজির উদ্দিন চাকলাদার ও আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুস শহীদ খান জিলা মিয়া সহ অনেককেই অবহিত করা হলে তারাও ব্যর্থ হন। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে ঢাকাদক্ষিণ ডিগ্রি কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক এজিএস ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মনসুর আহমদসহ ফরণ পূরণে অর্থ আদায়কারী শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হলে এখানে অধ্যক্ষ কলেজের আর্থিক বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, কলেজের ফান্ড একেবারে শূন্যের কোঠায়, শিক্ষকদের বেতন ভাতা প্রদান করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ঐসব বিষয়গুলো বৈঠকে তুলে ধরা হলেও কোন কাজ হয়নি বলে অধ্যক্ষ জানালেন। এরপর বাধ্য হয়ে তিনি একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যদের নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের সহায়তা চেয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন বলে স্বীকার করেন।
এদিকে ঢাকাদক্ষিণ ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থীদের অনেক অভিভাবকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে জানা যায়, একটি গ্রুপের কাছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা জিম্মি হয়ে পড়েছে। ভর্তি থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রে ঐ গ্রুপের লোকজনকে শিক্ষার্থীরা টাকা দিতে হয়। এখানে তাদের সন্তানদের ভাগ্য অনেকটা ঐ গ্রুপের উপর নির্ভর করে। তাদের বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থী বা অভিভাবকরা প্রতিবাদ করলে কলেজ ক্যাম্পাস না হয় ঢাকাদক্ষিণ বাজারে নাজেহাল হতে হয়। এমন ঘটনা অতীতে অনেকবার ঘটেছে। যার ধরুন শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষের পরিবর্তে ঐ গ্রুপের হাতেই টাকা পয়সা দিতে হয়।
এদিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মামুনুর রহমান জানান, কতিপয় ছাত্র কর্তৃক কলেজে ছাত্র ভর্তি, ফরম পূরণ, পরীক্ষা ফি, টিউশন ফি ইত্যাদি বিষয়ে বাধা প্রদান করার বিষয়ে ঢাকাদক্ষিণ ডিগ্রি কলেজের প্রিন্সিপাল সহ ১২ জনের স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগের বিষয়টি পেয়ে তিনি এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য গোলাপগঞ্জ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জকে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন। আজ শনিবার গোলাপগঞ্জ থানার পুলিশ কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে জানান। প্রয়োজনে তিনি নিজে ঢাকাদক্ষিণ ডিগ্রি কলেজে যাবেন বলে জানালেন। যারা দীর্ঘদিন ধরে ঐসব অপকর্ম করে আসছে তাদের নেতৃত্বে যিনি রয়েছেন রাজনৈতিক কারণে সব সময় তিনি ধরা ছোঁয়ার বাহিরে রয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে তাকেও আইনের আওতায় আনার জন্য বিভিন্ন মহলের পক্ষ থেকে জোর দাবী জানানো হয়েছে।