নগরীর লক্ষাধিক মানুষ বস্তিবাসী : ১৭ হাজার ৪শ পরিবারে ভোটার ৯৬ হাজার
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ জুলাই ২০১৯, ১:৫৮:১৮ অপরাহ্ন
রাজু আহমেদ ::
“ভোট এলে আমাদের খোঁজ নিতে অনেকেই আসে। ভোটের পর আর তাদের দেখা মেলেনা। বেঁচে থাকার তাগিদে আমাদের সংগ্রাম চলছেই। ভোর হতে রাত অবধি হাড়ভাঙ্গা মেহনত করে যা উপার্জন করি তা দিয়ে খাদ্য বস্ত্র আর বাসস্থানের ব্যবস্থা হয়। ছেলে মেয়ের শিক্ষার ব্যবস্থা করতে পারিনা”। বস্তিতে বাসিন্দা খালেক মিয়ার বক্তব্য এটি। সিলেট শহর ও শহরতলীতে বসবাস কারী খালেক মিয়ার মতো প্রায় লক্ষাধিক বস্তিবাসী মানবেতর জীবণ যাপন করছেন। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ২৭ টি ওয়ার্ডের বিভিন্ন জায়গায় এসব বস্তিবাসীর বসবাস। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে জীবণ ও জীবিকার তাগিদে সিলেট শহরে আসা নিম্ন আয়ের লোকজনই বর্তমানে এসব বস্তির বাসিন্দা। পর্যাপ্ত শিক্ষাও সাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত এ সব বস্তিবাসীর অনেকেই বর্তমানে ঝড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধ মূলক কর্মকান্ডে। এ ছাড়া নানা সমস্যায় জর্জরিত তারা।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের বস্তি শাখা থেকে জানা গেছে,সরকারী হিসাব অনুযায়ী সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৯শ ৬৩ টি বস্তি রয়েছে। আর এসব বস্তিতে বসবাস করছেন ১৭ হাজার ৪শ টি পরিবার। এদের মধ্যে ভোটার ৯৬ হাজার ২শ ৬৬ জন। এই লক্ষাধিক ভোটারের প্রায় সবাই শ্রমজীবি আর মেহনতি মানুষ। সামান্য রোদে যেমন তাদের কষ্টের শেষ থাকেনা তেমনি অল্প বৃষ্টিতে দুর্ভোগের ও কমতি থাকেনা। এমন অসংখ্য সমস্যায় জর্জরিত এসব বস্তিবাসীর জীবণমান উন্নয়নে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেনা সিটি কর্পোরেশন। বস্তির ১৭ হাজার ৪শ পরিবারের মধ্যে ১২ হাজার ৯২টি পরিবারকে এ পর্যন্ত স্বাস্থ্য সম্মত ল্যাট্রিন প্রদান করা হয়েছে।
এছাড়াও নিরাপদ পানি সরবরাহের জন্যে নলকুপ দেওয়া হয়েছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন বস্তির বাসিন্দারা। এ ছাড়া বস্তির শিশুদের শিক্ষার জন্যে সেই ১৯৯৪ সালে তৎক্ষালীন সিলেট পৌরসভা যে ৮টি স্যাটেলাইট স্কুল চালু করেছিল সেই ৮ টি স্কুলই জরাজীর্ণ অবস্থায় বর্তমানেও তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। নগরীর ছড়ারপাড়,কুয়ারপাড়, খুলিয়াপাড়া, লালাদীঘির পার, মুন্সিপাড়া, মিরবক্সটুলা, ভাটাটিকর, মিরাবাজার ও আগপাড়ায় প্রতিষ্টিত এসব স্কুল সমূহে ৩০ থেকে ৩৫ জন করে শিক্ষার্থী আর একজন করে শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও অধিকাংশ স্কুলেই ১৫/২০ জনের বেশি ছাত্রছাত্রী নেই। পারিবারিক সচেতনতা না থাকার কারণে ১০ থেকে ১২/১৩ বছরের অধিকাংশ শিশুই কোন না কোন কাজে নিয়োজিত। বস্তির বেশির ভাগ শিশুই নগরীর অভিজাত দোকান সমূহের টি বয়্। নামমাত্র বেতনে এরা সকাল থেকে রাত অবধি পরিশ্রম করে।
বিশেষগরা বলছেন, বস্তির এসব শিশুই এক সময় চুরি ডাকাতিসহ নানা অপরাধ মূলক কর্মকান্ডে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে। এজন্যে প্রয়োজন নগরীর বস্তির লোকজনকে সচেতন করে তোলা। তারা যাতে তাদের ছেলে মেয়েকে স্কুলে পাঠায়। আর এই কাজটি করতে হবে সিটি কর্পোরেশনকে।