যুক্তরাজ্যে উপার্জনে পিছিয়ে কেনো বাংলাদেশীরা?
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ জুলাই ২০১৯, ৫:১১:১১ অপরাহ্ন
সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে যুক্তরাজ্যে ‘উপার্জনে পিছিয়ে বাংরাদেশীরা’ শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। দৈনিকের লন্ডন প্রতিনিধি প্রেরিত এই সংবাদে বলা হয়েছে, ১০টি ভিন্ন শ্রেনীতে বিভক্ত এই আয়ের তালিকায় একদম নীচে বাংলাদেশীরা। বাংলাদেশীদের গড় আয় ঘন্টায় ৯ দশমিক ৬ পাউন্ড। ঘন্টায় ১০ পাউন্ড গড় আয় নিয়ে বাংলাদেশীদের চেয়ে এক ধাপ ওপরে আছে পাকিস্তানীরা।
অপরদিকে শ্বেতাঙ্গ জাতি গোষ্ঠীর চেয়ে বাংলাদেশীদের গড় আয় ২০ শতাংশ কম। অবশ্য যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাংলাদেশী নারীরা পুরুষদের চেয়ে বেশী আয় করেন। এছাড়া যুক্তরাজ্যে জন্ম নেয়া একজন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্যক্তি একজন শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশের চেয়ে ৮ শতাংশ কম আয় করেন। আর যুক্তরাজ্যের বাইরে জন্ম নেয়া একজন বাংলাদেশীর ক্ষেত্রে এ আয়ের পার্থক্য ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ কম।
উপরের পরিসংখ্যানটি যুগপৎ বেদনাদায়ক এবং আই ওপেনার অর্থাৎ দৃষ্টি উন্মীলনকারী। বেদনাদায়ক এজন্য যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত ব্রিটেনের পুনর্গঠনে বাংলাদেশ ভূখন্ড থেকে ঐ দেশে ইমিগ্র্যান্ট-শ্রমিক হিসেবে যাওয়া লোকজন অর্থাৎ যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাংলাদেশীদের অবদান অবিস্মরণীয়। সত্যি বলতে কি, বর্তমান যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের বেশীর ভাগের পূর্ব পুরুষদের শ্রম ও ঘামে গড়ে ওঠেছে বর্তমান ব্রিটেন। তাদের হাঁড়ভাঙ্গা খাটুনি সচল রাখতে সাহায্য করেছে বিশ্বের এই গুরুত্বপূর্ণ দেশটির অর্থনীতিকে। কিন্তু এই প্রবাসী ও তাদের উত্তর পুরুষেরা আজো পিছিয়ে আছে অর্থ উপার্জনে। ব্যর্থ হচ্ছে নিজেদের কাংখিত লক্ষ্যে পৌঁছতে। এটা প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য কোনভাবেই সন্তোষজনক ও সম্মানজনক নয়। সন্দেহ নেই, যুক্তরাজ্যে শ্বেতাঙ্গ ও অশ্বেতাঙ্গ এবং অন্যান্য কারণে আয়ের ক্ষেত্রে অনেক বৈষম্য বিদ্যমান। কিন্তু এক্ষেত্রে বাংলাদেশী প্রবাসীরাও কম দায়ী নন।
অতীতে এদেশ থেকে যারা ভাউচারের মাধ্যমে কিংবা ইমিগ্র্যান্ট অর্থাৎ পারিবারিক ভিসা নিয়ে ব্রিটেন গিয়েছেন তাদের অধিকাংশই ছিলেন অশিক্ষিত ও অদক্ষ লোক। ইংরেজী ভাষায় তাদের দখল ছিলো না বললেই চলে। ফলে হোটেল রেস্তোরাঁয় কিংবা কলকারখানায় অদক্ষ শ্রমিকের চাকুরী ছাড়া আর কিছুই জোটেনি তাদের ভাগ্যে। ফলে তাদের পজিশন ছিলো যেমন নীচে তেমনি আয়ও ছিলো কম। এ অবস্থা চলেছে কয়েক যুগ। ইতোমধ্যে কিছু বাংলাদেশী হোটেল রেস্তোরাঁ খুলে বা ব্যবসা করে বেশ অর্থ বিত্তের মালিক হলেও বাংলাদেশী শ্রমিক-কর্মীদের ভাগ্যের তেমন কোন উন্নতি হয়নি।
বিগত বেশ কয়েক বছর যাবৎ এ অবস্থার বেশ কিছু পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক শিক্ষিত বাংলাদেশী ইমিগ্র্যান্ট হয়ে যুক্তরাজ্য গিয়েছেন। তারা ভালো চাকুরী ও আয় করেছেন। এছাড়া অনেক প্রবাসীর সন্তানেরা সেখানে পড়াশোনা করে অনেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে ভালো অবস্থানে আছেন। এতকিছু সত্বেও এখনো যে সব বাংলাদেশী যুক্তরাজ্যে যাচ্ছেন বা যাওয়ার চেষ্টা করছেন, তাদের দক্ষতা ও যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ রয়েছে। ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ ইমিগ্র্যান্টদের ইংরেজী শেখার ওপর বার বার গুরুত্বারোপ করা সত্বেও ব্রিটেন গমনেচ্ছু বাংলাদেশীদের সেদিকে তেমন গুরুত্ব দিতে দেখা যাচ্ছেনা।
এছাড়া বিদেশে বিশেষভাবে যুক্তরাজ্যে ভালো চাকুরী লাভের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও যোগ্যতা অর্জনেও তাদের মাঝে প্রয়োজনীয় আগ্রহ পরিচালিত হচ্ছে না। এদিকে সরকারের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট অভিবাসন প্রত্যাশী তথা ব্রিটেন গমনেচ্ছুদের মনোযোগ দেয়া এখন জরুরী। আমরা আশা করি, দক্ষতা, যোগ্যতা, চাকুরীতে অবস্থান ও আয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশীরা অতীতের দুর্বলতা ও বৈষম্য কাটিয়ে অচিরেই সম্মানজনক আসন ও অবস্থানে পৌঁছতে সক্ষম হবে।