অসহায় বাংলার দুধ-ভাতের সন্তানেরা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ জুলাই ২০১৯, ১২:৪৩:৫২ অপরাহ্ন
কথায় আছে, ‘আমার সন্তান যেনো থাকে দুধে-ভাতে’। এটা যুগ যুগ ধরে বাংলার সন্তানদের জন্য তাদের মায়ের আকুল প্রার্থনা। কিন্তু বর্তমানে এই দুধ নিয়ে এদেশে যা হচ্ছে, তা রীতিমতো উদ্বেগজনক। সম্প্রতি দ্বিতীয় দফায় দুধের ১০টি নমুনা পরীক্ষা করে সব ক’টিতেই ক্ষতিকর ‘অ্যান্টিবায়োটিক পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল রিসার্চ সেন্টারের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক আ.ব.ম. ফারুক ও তার সহগবেষকেরা।
জানা গেছে, গত সপ্তাহে একই জায়গা থেকে ৫টি কোম্পানীর ৭টি পাস্তুরিত প্যাকেটজাত দুধ ও খোলা দুধের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় ১০টি নমুনাতেই শরীরের জন্য ৪টি ক্ষতিকর অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে। এগুলো হচ্ছে অক্সিটেট্রাসাইক্লিন, এনরোফ্লক্সাসিন, সিপ্রোফ্লক্সাসিন ও লেভোফ্লক্সাসিন। দুধের ৩টি নমুনায় অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে ৪টি, ৬টি নমুনায় ৩টি এবং ১০টি নমুনায় পাওয়া গেছে ২টি অ্যান্টিবায়োটিক। এরআগে গত ২৫ জুন কিছু খাদ্যের গুণগতমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করেন তারা। খাদ্যের মধ্যে ছিলো ঘি, কোমল পানীয়, গুড়াঁ মশলা, হলুুদ, পাম ওয়েল, সরিষার তেল, সয়াবিন তেল ও পাস্তুরিত দুধ।
তরল দুধে ভেজাল ও ক্ষতিকর পদার্থ মেশানোর অভিযোগ এদেশে নতুন নয়। এমনকি ভেজাল তরল দুধ তৈরীতে টুথপেষ্ট ইত্যাদি মেশানোরও অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় অনেকগুলো প্রতিবেদন প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে। এর ফলে দেশের মানুষ তরল দুধ পান ও ব্যবহারে রীতিমতো আতংকিত। অনেক বাজারের তরল দুধ ক্রয় ত্যাগ করেছেন।
তরল দুধে ভেজাল থেকে শংকা শিশুসহ কম বয়সী ছেলেমেয়েদের জন্য অভিশাপ হয়ে দেখা দিয়েছে। তাদের দেহবৃদ্ধি ও প্রাত্যহিক খাদ্য ও পানীয় হিসেবে দুধ ও দুগ্ধজাত সামগ্রী অত্যন্ত প্রয়োজন। কিন্তু দেশের বিভিন্ন কোম্পানীর দুধ নিয়ে শংকা তাদের জন্য দুর্ভোগ হয়ে দেখা দিয়েছে। এভাবে দেশের কোটি কোটি শিশু বঞ্চিত হচ্ছে তাদের দেশের পুষ্টির জন্য অতি প্রয়োজনীয় এই উপাদান থেকে।
এদিকে আড়ং ডেইরী অ্যান্ড ফুডের পরিচালক মোহাম্মদ আনিসুর রহমান বলেন, গবেষণাটিকে রহস্যজনক মনে হয়েছে। আমরা লিখিতভাবে এই গবেষণা পদ্ধতি ও আড়ং দুধের বিস্তারিত ফলাফল জানতে চেয়েছি। দুধে অ্যান্টিবায়োটিক থাকতেই পারে। তবে তা সহনীয় মাত্রায় আছে কি-না, সেটি বিচার্য বিষয়।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের বক্তব্য হচ্ছে, ফার্মাসি অনুষদের তিনটি বিভাগীয় পরীক্ষাগার ও অণুজীব বিজ্ঞান পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এই পরীক্ষার সঙ্গে ৯ জন শিক্ষক ও ৪-৫ জন শিক্ষার্থী জড়িত। এতে অর্থায়ন করেছে সরকারের বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো। খাদ্যে ভেজাল বিষয়ে গবেষণার জন্য এই অর্থায়ন করা হয়েছিলো। তারা বলেন, আমাদের এটি মৌলিক কোন গবেষণা নয়। নমুনা পরীক্ষা করে আমরা যা পেয়েছি, তাই জানিয়েছি। গবেষণার ফলাফল বিজ্ঞান জার্নালে প্রকাশ করে মানুষকে জানাতে দেড় থেকে দুই বছর লাগতো।
বলা বাহুল্য, এদেশের মানুষের ‘মুখ চুন খেয়ে পুড়ে গেছে, তাই দই দেখলেও ভয় জাগে’। দোকান বা বাজার থেকে তরল দুধ বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর বেশীর ভাগ দুধের যে অবস্থা দেখা যায়, তা খাঁটি দুধের সাথে কোনভাবেই মিলে না। এ অবস্থায় গবেষণায় এ ধরণের ফল দুধ সম্পর্কে এদেশের মানুষকে পুরোমাত্রায় সন্দিহান করে তুলেছে।
বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। এদেশে গরুসহ বিভিন্ন পশু পালন হয়। তাই দুধও পাওয়া যায় যথেষ্ট। কিন্তু এই দুধ নিয়ে যখন মহল বিশেষ নিষ্ঠুর তেজারতি শুরু করে, তখন হতাশ ও উদ্বিগ্ন হতে হয়। আমরা এ দিকে দুগ্ধ উৎপাদনকারীসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার কার্যকর পদক্ষেপ কামনা করি। কামনা করি গবেষকসহ সকল সচেতন মানুষের গণস্বার্থে পর্যবেক্ষণ।