জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিনের যোগদান: উন্নয়ন বিষয়ক কথামালা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ জুলাই ২০১৯, ৫:২২:৪৫ অপরাহ্ন
জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিনের যোগদান: উন্নয়ন বিষয়ক কথামালা
।। মোহাম্মদ আবু তাহের ।।
মৌলভীবাজারে নবাগত জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগ দিয়েছেন নাজিয়া শিরিন। বাংলাদেশের জেলা সমূহের মধ্যে মৌলভীবাজার নয়নাভিরাম নৈসর্গিক লীলাভূমি হিসেবে অনেক খ্যাতি রয়েছে। মৌলভীবাজারের মানুষ শান্তি প্রিয়। নাজিয়া শিরিন আমাদের প্রিয় মৌলভীবাজারের প্রথম নারী জেলা প্রশাসক হিসাবে যোগদান করায় আমরা আনন্দিত ও গর্বিত। ইতিপূর্বে নীলফামারী জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালীন তিনি কর্মদক্ষতার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করেছেন শুনেছি। রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনে তার সততা ও নিষ্ঠা প্রশংসিত হয়েছে।
সংবিধানের ২১(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের যেমন দায়বদ্ধতা রয়েছে সংবিধানের কাছে, তেমনি রয়েছে জনগনের কাছেও। আমরা বিশ্বাস করতে চাই জেলা প্রশাসক হিসাবে নাজিয়া শিরিন কর্মদক্ষতা, নিষ্ঠা ও মানবিকতার মাধ্যমে মৌলভীবাজরের সর্বস্তরের নাগরিকের আপনজন হয়ে ওঠবেন। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার প্রসার, মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করন, নৈতিক শিক্ষার উন্নয়ন, মাদক নিয়ন্ত্রণ, ভেজাল খাদ্য রোধ, বাল্যবিবাহ বন্ধ, পরিবেশ বিপর্যয় রোধ, প্রবাসীদের কল্যাণসহ বিভিন্ন জনকল্যাণমুখী উদ্যোগ গ্রহণে মৌলভীবাজার সমৃদ্ধ হবে এবং তিনি সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি। তার নেতৃত্বে মৌলভীবাজার জেলায় সুশাসন ও আইনের শাসন আরও বেশী বেগবান হবে বলে আমরা আশাবাদী।
আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য নাগরিকদেরও এগিয়ে আসতে হয়। এটি সরকারের একার কাজ নয়। মৌলভীবাজারের শান্তিপ্রিয় মানুষ প্রশাসনকে কল্যাণমূলক কাজে সহযোগিতা করে থাকেন সবসময়। সুশাসন একটি রাষ্ট্রের সব নাগরিককে তাদের জীবনকে সঞ্চালিত করতে সহায়তা করে। একটি উন্নতর সমাজ গঠনে উদ্ধুদ্ধ করে। আমরা সেই উন্নততর সমাজের প্রত্যাশা করি। জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়নের ৫নং লক্ষ্যে বলা হয়েছে, Achieve gender equality and empower all women and girls” বাংলাদেশ সেই লক্ষ্য অর্জনের পথে। বাংলাদেশ সরকারের সচিব পদে বেশ কিছু নারী কর্মকর্তারা অনেক পূর্ব থেকেই দায়িত্ব পালন করছেন। প্রথম বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে সিলেটে দায়িত্ব পালন করেছেন ড. নাজমুন আরা সুলতানা।
জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার হিসাবে বিভিন্ন জেলায় নারী কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করছেন। বিপুল সংখ্যক নারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে জনপ্রতিনিধি ও জনসাধারণের সাথে উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছেন সমানতালে। এখন জনগনের কাছে মহিলাদের প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ বড় বড় পদবী আর ব্যতিক্রমি বলে মনে হয়না। বাংলাদেশ এখন আর আগের অবস্থানে নেই, পরিবর্তন হয়েছে অনেক কিছুর। মানুষের গড় আয়ু, গড় আয়, দেশের অর্থনীতির আকার, বাজেটের আকার, রিজার্ভ, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স সবকিছুতেই পরিবর্তন হয়েছে। উন্নতি হয়েছ কয়েকগুণ। দেশের বহু উন্নয়ন এবং অর্জন বিশ্বের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। এক সময়ের তথাকথিত তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ এখন দর্শনীয় ঝুড়িতে পরিণত হয়েছে। সামাজিক বহু সূচকে অভাবনীয় সাফল্যে অবাক বিস্ময়ে বিশ্ব তাকিয়ে থাকে বাংলাদেশের দিকে। বাংলাদেশের সাফল্যে বিস্ময় প্রকাশ করে বাংলাদেশ থেকে বিশ্বকে শিক্ষা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদরা।
এমন বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনাময় জনপদের নাম মৌলভীবাজার। একটি অগ্রসরমান ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ অঞ্চল মৌলভীবাজার। সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে এই জেলার বনজ ও খনিজ সম্পদ, পর্যটন শিল্প, চা শিল্প, আগর শিল্প ইত্যাদি। ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী মৌলভীবাজার প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিকে করছে সমৃদ্ধ। মৌলভীবাজারের কিছু সংখ্যক নাগরিক এবং প্রবাসীদের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক সামাজিক সংগঠন ‘মৌলভীবাজারের উন্নয়নে আমরা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড গ্রুপ’। আমরা মনে করি সংগঠনের ছায়ায় ব্যক্তি নিজেকে বিকশিত করার সুযোগ লাভ করে, সংগঠন মানুষকে সহনশীলতা শেখায়।
বর্তমানে মানুষে মানুষে যে অসহিষ্ণুতা, অস্থিরতা এগুলো দুর করা সম্ভব সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে। একটি ভালো সামাজিক সংগঠন সামাজিক সুস্থতা বজায় রাখতে ভূমিকা রাখতে পারে। আমরা বিশ্বাস করি পৃথিবীর সর্বকনিষ্ঠ শব্দ হলো ও অর্থাৎ আমি। ও কখনো ডব ছাড়া সার্থক হয়না। ও যখন সঙ্গী সাথী নিয়ে ডব এর বৈশিষ্ট্য ধারণ করে তখনই কল্যাণের রাস্তা খুজে পাওয়া সহজ হয়। মৌলভীবাজারের উন্নয়নে আমরা সংগঠন হিসেবে বেশ প্রাচীন না হলেও আমাদের এই সংগঠনের সহযোগিতা ও উদ্যোগে কল্যাণমূলক বেশ কিছু কার্যক্রম গ্রহন করা হয়েছে। যা সকলের জ্ঞাতার্থে উপস্থাপন করা হলো।
১। ‘মৌলভীবাজারের উন্নয়নে আমরা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড গ্রুপের’ যুক্তরাজ্য প্রবাসী সদস্যদের অর্থায়নে মৌলভীবাজার শহরে ঈষড়পশ টাওয়ার নির্মানাধীন।
২। মৌলভীবাজার শহরকে পরিবেশ দূষণ থেকে রক্ষা করতে পৌরসভার মাধ্যমে শতাধিক গার্ভেজবীন (ডাস্টাবিন) প্রদান।
৩। অসচ্ছল মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ।
৪। বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অসচ্ছল মানুষের জন্য বিনামূল্যে টিউবওয়েল স্থাপন (সহযোগিতায় আই জেড আই ফাউন্ডেশন)
৫। নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করার দাবীতে মহান জাতীয় সংসদের এমপি সহ জন প্রতিনিধি, সুশীল সমাজ, সাংবাদিক, প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, শ্রমিক প্রতিনিধি সহ সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিরবর্গের অংশগ্রহনে সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
৬। ড্রাইভারদের সচেতনতার লক্ষ্যে নিরাপদ সড়কের জন্য সংগঠনের পক্ষ থেকে লিফলেট বিতরণ।
৭। মৌলভীবাজার ৩ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য নেছার আহমদ সহ অন্যান্য সংসদ সদস্য প্রার্থীদের কাছে ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ইং এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে মৌলভীবাজারে সরকারি মেডিকেল কলেজ ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, শমসের নগর বিমানবন্দর পুনরায় চালু সহ ১৩ দফা দাবীনামা উপস্থাপন।
নবনিযুক্ত জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিনের গতিশীল নেতৃত্বে আমাদের প্রিয় মৌলভীবাজারকে দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ জেলায় পরিণত করতে সক্ষম হবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি। শেষ করার আগে রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলতে চাই..
মানুষ নির্মাণ করে প্রয়োজনে / সৃষ্টি করে আনন্দে, বুদ্ধির পরিচয় দেয় জ্ঞানে / যোগ্যতার পরিচয় দেয় কৃতিত্বে, নিজের পরিচয় দেয় সৃষ্টিতে। মৌলভীবাজারে নবাগত জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন এই মর্মবাণীর উজ্জল দৃষ্টান্ত হবেন এমনটাই আমরা প্রত্যাশা করি।