কারাগার হোক সংশোধনাগার
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ জুলাই ২০১৯, ৫:৩২:২৪ অপরাহ্ন
জানা গেছে, ঢাকা বিভাগের টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে আটক বন্দীরা তাদের স্বজনদের সাথে টেলিফোনে সরাসরি কথা বলতে পারছেন। প্রতি মাসে ২ বার ১০ মিনিট করে মোট ২০ মিনিট তারা কথা বলছেন। অবশ্য এজন্য প্রতি বন্দীর প্রিজনার ক্যাশ একাউন্ট থেকে কারা কর্তৃপক্ষ ২০ টাকা কেটে নিচ্ছে। কথোপকথনের পুরো তথ্যই কর্তব্যরত কারাক্ষীরা মনিটরিং করেছেন। তবে টেলিফোনে কোনো জেএমবি বা শীর্ষ সন্ত্রাসীকে কথা বলার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না।
কারাগার সংশ্লিষ্টরা জানান, টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে পাইলট প্রকল্পটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলে পরবর্তীতে ধাপে ধাপে দেশের ৬৭ কারাগারে তা চালু করা হবে। ২০২২ সালের মধ্যে সব কারাগারে এই পদ্ধতি চালু করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা রয়েছে।
বলা বাহুল্য, কারাগার হচ্ছে এক ধরণের শাস্তির স্থান। একজন অপরাধীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেয়া হয়, তার অপরাধের গুরুতর অবস্থা বিবেচনা করে। তা সত্বেও কারাগার কোন অমানবিক নির্যাতন ও নিপীড়নের স্থান নয়। কারাভোগকালে একজন বন্দী অপরাধীকে তার অপরাধের জন্য অনুশোচনার সুযোগ দেয়া উচিত। সুযোগ দেয়া উচিত সংশোধনের।
সে যদি কারাগারে থেকে ন্যুনতম মানবাধিকার না পায়, বিশেষভাবে তার পরিবারের লোকজনের সাথে কথা বলার সুযোগ না পায়, তবে সে আরো বেশী অপরাধপ্রবণ ও নিষ্ঠুর হয়ে ওঠতে পারে। এসব বিবেচনায় বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে কারাবন্দীদের আত্মীয়স্বজনদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ, কথাবলা সহ বিভিন্ন সুযোগ দিয়ে থাকে। এভাবে তাদের সুযোগ দেয়া হয় সংশোধনের। উন্নত দেশগুলোর কারাগারগুলোকে কারাগার না বলে সংশোধনাগার বলা যায়।
বাংলাদেশের টাঙ্গাইল কারাগারে বন্দীদের স্বজনদের সাথে কথা বলার যে ব্যবস্থা করা হয়েছে, তা যেমন মানবিক তেমনি বন্দীদের মন মানসিকতা পরিবর্তন ও সংশোধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমরা মনে করি। স্বজনদের কথা-বার্তা ও সান্তনাবাণী তাদের সাহস যোগাবে কারাজীবনের সংকট কাটিয়ে ওঠতে, একটি অপরাধমুক্ত সুন্দর জীবনের কথা ভাবতে। কিছুদিন আগে বাংলাদেশের কারাগারগুলোতে দু’শো বছর ধরে বিদ্যমান রুটিগুড়ের নাস্তার পরিবর্তে রুটি ভাজি ডাল ইত্যাদি চালু করা হয়েছে।
নিঃসন্দেহে এটা একটি মানবিক পদক্ষেপ। এছাড়া ইতোমধ্যে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের মেয়াদ নিয়েও হাইকোর্টে মামলা চলছে। কিছুদিন আগে যাবজ্জীবন মানে আমৃত্যু কারাদন্ড বলে একটি অমানবিক রায় দেয়া হয়। এর বিরুদ্ধে দেশের খ্যাতিমান আইনজীবীরা রুখে দাঁড়িয়েছেন। উচ্চ আদালতে রীট দায়েরের মাধ্যমে এটাকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। আমরা মনে করি, অতীতে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ছিলো ১৪ বছরের একটি দীর্ঘ মেয়াদী কারাদন্ড। কিন্তু সম্প্রতি এটাকে আমৃত্যু কারাদন্ড বলে ঘোষণা বিষয়টিকে জটিল করে তুলেছে।
আইনজীবীদের মতে যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত বন্দীদের আমৃত্যু কারাগারে থাকতে হলে, কারাগারে তাদের জন্য বৃদ্ধাশ্রমের ব্যবস্থা করতে হবে। বৃদ্ধ কারাবন্দীদের সার্বক্ষণিক সেবা শুশ্রƒষার জন্য লোকবল নিয়োগ করতে হবে। বিনাযতেœ সেবাহীনভাবে তাদের মরতে দিলে, সেটা হবে চরম অমানবিক। এরচেয়ে ভালো, যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্তদের মুক্তি দিয়ে শেষ বয়সে আত্মীয় স্বজনের কাছে ফিরিয়ে দেয়া। আমরা উচ্চ আদালতের কাছে এমন কিছুই প্রত্যাশা করছি।
আমরা দেশের বিভিন্ন কারাগারে গৃহীত মানবিক পদক্ষেপগুলোকে স্বাগত জানাচ্ছি। আশা করছি, এর সাথে কারা আইনেও ইতিবাচক পরিববর্তন আনা হবে। বন্দীদেরকে অপরাধী হিসেবে শাস্তিদানের পাশাপাশি মানুষ হিসেবেও সুযোগ-সুবিধা ও মানবাধিকার প্রদান করা হোক।