হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন শুধু আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ : সিলেটের আইনজীবী নেতৃবৃন্দের প্রতিক্রিয়া
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ জুলাই ২০১৯, ৭:৩২:২৩ অপরাহ্ন
মো. মুহিবুর রহমান ::
দীর্ঘদিনের ভোগান্তি বিচারপ্রার্থী জনগণের। এ ভোগান্তি হতে পরিত্রাণ পেতে সিলেটে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন জরুরী। সিলেট বিভাগীয় সদরে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপিত হচ্ছেনা দীর্ঘদিন ধরে। সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতি ও বিভিন্ন সংগঠন এ দাবী জানিয়ে এলেও তা আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এতে সিলেটের বিচারপ্রার্থী জনগণকে মামলার আপীল ও রিভিশনের জন্য উচ্চ আদালতের আশ্রয় নিতে রাজধানীতে হাইকোর্টে যাতায়াতসহ নানা ভাবে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এ দুর্ভোগ থেকে পরিত্রাণ পেতে সিলেটে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন জরুরী বলে মনে করেন আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থী জনগন।
সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতি কর্তৃক গঠিত সিলেটে হাইকোর্টের বেঞ্চ স্থাপন বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি আইনজীবী মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান চৌধুরী জানান, পর্যটন নগরী সিলেট ও শিল্প নগরী চট্টগ্রামে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনে বার বার আশ্বাস দেওয়া হলেও তা করা হয়নি। সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমদ ২০১১ সালের ২ অক্টোবর চট্টগ্রামে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকালে চট্টগ্রামে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের বিষয়টি সরকারের বিবেচনায় রয়েছে বলে উল্লেখ করেছিলেন। সংবিধান অনুযায়ী হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের এখতিয়ার প্রধান বিচারপতির উল্লেখ করে তখন ব্যারিস্টার শফিক আহমদ বলেছিলেন, প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতির সাথে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। এ বিষয়ে তিনি তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার সাথে আলোচনা করেন। প্রধান বিচার পতি এস কে সিনহা সিলেটে এসে আইনজীবী সমিতির নৈশভোজ অনুষ্ঠানে সিলেটে হাইকোর্টের বেঞ্চ স্থাপনের কথা তাঁর বিবেচনায় আছে বলে জানিয়েছিলেন। তখন সিলেটে হাই কোর্টের বেঞ্চ স্থাপনের জন্য সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতি ২০১১ সালের ১৭ অক্টোবর বেলা ২টায় সমিতির ২ নম্বর বার হলে এক তলবী সাধারণ সভা ডাকে।এতে সিলেট বিভাগীয় সদরে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের দাবী জানানো হয়। এ তলবী সাধারণ সভায় এ দাবী বাস্তবায়নের জন্য মানববন্ধন ও সিলেট বিভাগের তিনটি জেলা আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় সভা করে দাবী বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলন হয়। কিন্তু এখনও দাবী বাস্তবায়ন করা হয়নি।
এব্যাপারে এডভোকেট মুজিবুর রহমান বলেন, দেশের বিভাগীয়শহর গুলোতে হাইকোর্টের বেঞ্চ স্থাপন হচ্ছেনা আইনজীবীদের একটি চক্রের কায়েমী স্বার্থ রক্ষার্থে। দেশের কেন্দ্রে বসে জনগনকে জিম্মি রেখে বিচার ব্যবস্থাকে সংকুচিত করে দেশে সুশাসন সম্ভব নয়। সিলেটে জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও প্রবীন আইনজীবী ফারুক চৌধুরী জানান, সিলেটে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন সিলেট বাসীর দীর্ঘদিনের ন্যায্য দাবী। কিন্তু কোন সরকারও এ দাবী বাস্তবায়ন করেন নি। তবে সিলেটসহ কয়েকটি এলাকায় সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন করে ছিলেন। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিচারপতি সাহাব উদ্দিন আহমদ তা হাইকোর্টে ফিরিয়ে নেন। বর্তমানে যেভাবে জনসংখ্যা বেড়েই চলছে। তাতে ঢাকায় গিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হাইকোর্টে আপীল ও রিভিশন মামলা পরিচালনা করা কষ্টকর হয়। ঢাকার বাইরে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনে হাইকোর্টের কিছু আইনজীবী চক্রান্ত করেন। য়ার ফলে কোন সরকারই তা বাস্তবায়ন করতে পারেন না। তিনি সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি থাকাকালে এ সংক্রান্ত এক সভায় ঢাকায় গিয়ে বক্তব্য রাখার কথা উল্লেখ করে বলেন, এখনও কিছু হাইকোর্টের আইনজীবী সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনে বিরোধীতা করেন। তারা চায় না ঢাকার বাইরে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন হোক।
সিলেট জেলা আইনজীবী সিমিতির সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম জানান, বাংলাদেশ সংবিধানের ১০০ অনুচ্ছেদ মোতাবেক দেশের প্রত্যেকটি বিভাগীয় সদরে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতির নিকট সুপারিশ করলে রাষ্ট্রপতি যে কোন বিভাগীয় সদরে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন করতে পারেন। সে অনুযায়ী আমাদের দাবী প্রধান বিচারপতির সুপারিশের মাধ্যমে সিলেটে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন করা হোক। এমনিতেই সিলেটে মামলা মোকাদ্দমা বেশী, মামলা জট, মামলা ব্যয় কমাতে এখনই সিলেটে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন করতে হবে। তিনি আরো বলেন, এরশাদ সরকারের শাসনামলে সিলেটে হাইকোর্টের স্থায়ী সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন হলেও তা বাংলাদেশের সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে বাতিল করা হয়।
সিলেটের প্রবীন আইনজীবী মুক্তিযোদ্ধা বেদানন্দ ভট্টাচার্য্য জানান, সিলেটে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন করলে হাইকোর্টের মামলা জট কমে আসবে। সিলেটের জনগন ঢাকায় গিয়ে দুর্ভোগ পাওয় থেকে পরিত্রাণ পাবে। তিনি মনে করেন দেশের প্রত্যেক বিভাগে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন জরুরী। সংবিধান অনুযায়ী প্রত্যেক বিভাগের সদরে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন হলে জনদুর্ভোগ, মামলা ব্যয় ও মামলা জট অনেকাংশে কমে আসবে।
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেটের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ দেশের প্রত্যেকটি বিভাগে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন জরুরী বলে মনে করেন। কারণ প্রত্যেক বিভাগে যদি হাইকোর্টের বেঞ্চ স্থাপন করা হয় তাহলে উচ্চ আদালতে বিচার পেতে জন দুর্ভোগ কমে আসবে। মামলার ব্যয়ভার ও হ্রাস পাবে। এজন্য সরকার ও বিভিন্ন সময় উদ্যোগ করছেন। তবে তা বাস্তবায়ন সময় সাপেক্ষ ব্যাপার বলে তিনি মনে করেন। তিনি সিলেটে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের জোর দাবী জানান। তিনি আরো বলেন, সিলেটে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন হলে মামলা জট কম্র সাথে সাথে সিলেটে আইন পেশার মান ও বৃদ্ধি পাবে।
সিলেটের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ও বিএনপি নেতা এডভোকেট আব্দুল গাফ্ফার জানান, দেশে অনেক কিছুর বিকেন্দ্রীকরণ হচ্ছে। যার ফলাফল খারাপ হচ্ছে না। তাই বিচার বিভাগকে বিকেন্দ্রীকরণ করা হলে তার ফলাফলও ভালো হবে। সিলেটের অনেক আইনজীবী হাইকোর্টে প্র্যাকটিস করেন এবং সিলেট জেলা বারেভালো ভালো আইনজীবী রয়েছেন। যার ফলে সিলেটের বিজ্ঞ আইনজীবীরাও কাজের সুযোগ পাবেন। জনসাধারণ ঢাকায় গিয়ে মামলা চালাতে নানাভাবে ভোগান্তি পেতে হয়। তাই সিলেট বিভাগীয় শহরে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন জরুরী বলে আমি মনে করি। কারণ হাইকোর্টে এখন মামলা জট বেশী। তা হ্রাস করতে প্রত্যেক বিভাগীয় শহরে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন এখন সময়ের দাবী বলে তিনি মনে করেন।
সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট এ.কে.এম শামিউল আলম জানান, সিলেট জেলা ও মহানগর দায়রাসহ বিশেষ জজ আদালতে বিভিন্ন মামলার রায় ও ডিক্রি ঘোষণার পর বিচার পেতে বিচারপ্রার্থী জনগনকে উচ্চ আদালতের আশ্রয় নিতে হয়। উচ্চ আদালত মামলায় বিচার পেতে হলে সিলেটের বিচারপ্রার্থী জনগন নানাভাবে ভোগান্তির শিকার হতে হয়। এ ভোগান্তি থেকে পরিত্রাণ পেতে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার কাছে দাবী জানালে তিনি এ বিষয়ে সরকারের সাথে একটি প্রক্রিয়া চলছে এবং এ প্রক্রিয়া শেষ হলে সিলেটকে প্রাধান্য দিবেন বলেও আশ্বাস দিয়ে ছিলেন। কিন্তু এ আশ্বাস আর আলোর মুখ দেখেনি। আমরা মনে করি সিলেট হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন হলে সিলেটের বিচারপ্রার্থী জনগন উপকৃত হবেন।
সিলেট জেলা আইনজীবী সিমিতির সভাপতি এডভোকেট জামিলুল হক জামিল বলেন, সিলেটে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন সময়ের দাবী। কারণ হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন হলে বিচারপ্রার্থী জনগণের খরচ কমবে, মামলা জট হ্রাস পাবে। তিনি বলেন, এ দাবী সরকারের কাছে আমরা সব সময় জানিয়ে আসছি। জনদূর্ভোগ কমতে সিলেটে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন করতে হবে।
সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার প্রয়াগমহল গ্রামের মৃত আলহাজ্ব আব্দুল মোতালেবের পুত্র মো. আফরোজ মিয়া। তিনি উচ্চ আদালতে মামলা চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। তিনি জানান, সিলেটে সুযোগ থাকলে তিনি মামলায় অন্তর্ভুক্ত হতেন। তিনি প্রয়াগমহল পুরাতন জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি। তাঁর বাড়ির পিছনের কিছু ভূমি নিয়ে এক স্বত্ব মামলা রয়েছে। এ মামলায় দরখাস্তকারী আদালতে কমিশনের আবেদন করলে তাদের পক্ষে আদেশ হয়। পরে জেলা জজ আদালতে আপীল করেন দরখাস্তকারী। এ আদালতের আদেশও তাদের পক্ষে আসে। পরে অন্যপক্ষ আব্দুল আজিজ তার ভাতিজাকে নিয়ে উচ্চ আদালতে রিভিশন করেন। কিন্তু ঢাকায় গিয়ে মামলা চালাতে অর্থ ব্যয়, যাতায়াত কষ্ট চিন্তা করে তিনি পক্ষভুক্ত হননি। সিলেটে সুযোগ থাকলে তিনি এ মামলার পক্ষভুক্ত হতেন।
শিল্প নগরী চট্টগ্রামে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনে বার বার আশ্বাস দেওয়া হলেও তা করা হয়নি। সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমদ ২০১১ সালের ২ অক্টোবর চট্টগ্রামে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকালে চট্টগ্রামে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের বিষয়টি সরকারের বিবেচনায় রয়েছে বলে উল্লেখ করেছিলেন। সংবিধান অনুযায়ী হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের এখতিয়ার প্রধান বিচারপতির উল্লেখ করে তখন ব্যারিস্টার শফিক আহমদ বলেছিলেন, প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতির সাথে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। এ বিষয়ে তিনি তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার সাথে আলোচনা করেন। প্রধান বিচার পতি এস কে সিনহা সিলেটে এসে আইনজীবী সমিতির নৈশভোজ অনুষ্ঠানে সিলেটে হাইকোর্টের বেঞ্চ স্থাপনের কথা তাঁর বিবেচনায় আছে বলে জানিয়েছিলেন। তখন সিলেটে হাই কোর্টের বেঞ্চ স্থাপনের জন্য সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতি ২০১১ সালের ১৭ অক্টোবর বেলা ২টায় সমিতির ২ নম্বর বার হলে এক তলবী সাধারণ সভা ডাকে।এতে সিলেট বিভাগীয় সদরে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের দাবী জানানো হয়। এ তলবী সাধারণ সভায় এ দাবী বাস্তবায়নের জন্য মানববন্ধন ও সিলেট বিভাগের তিনটি জেলা আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় সভা করে দাবী বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলন হয়। কিন্তু এখনও দাবী বাস্তবায়ন করা হয়নি।
এব্যাপারে এডভোকেট মুজিবুর রহমান বলেন, দেশের বিভাগীয়শহর গুলোতে হাইকোর্টের বেঞ্চ স্থাপন হচ্ছেনা আইনজীবীদের একটি চক্রের কায়েমী স্বার্থ রক্ষার্থে। দেশের কেন্দ্রে বসে জনগনকে জিম্মি রেখে বিচার ব্যবস্থাকে সংকুচিত করে দেশে সুশাসন সম্ভব নয়। সিলেটে জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও প্রবীন আইনজীবী ফারুক চৌধুরী জানান, সিলেটে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন সিলেট বাসীর দীর্ঘদিনের ন্যায্য দাবী। কিন্তু কোন সরকারও এ দাবী বাস্তবায়ন করেন নি। তবে সিলেটসহ কয়েকটি এলাকায় সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন করে ছিলেন। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিচারপতি সাহাব উদ্দিন আহমদ তা হাইকোর্টে ফিরিয়ে নেন। বর্তমানে যেভাবে জনসংখ্যা বেড়েই চলছে। তাতে ঢাকায় গিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হাইকোর্টে আপীল ও রিভিশন মামলা পরিচালনা করা কষ্টকর হয়। ঢাকার বাইরে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনে হাইকোর্টের কিছু আইনজীবী চক্রান্ত করেন। য়ার ফলে কোন সরকারই তা বাস্তবায়ন করতে পারেন না। তিনি সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি থাকাকালে এ সংক্রান্ত এক সভায় ঢাকায় গিয়ে বক্তব্য রাখার কথা উল্লেখ করে বলেন, এখনও কিছু হাইকোর্টের আইনজীবী সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনে বিরোধীতা করেন। তারা চায় না ঢাকার বাইরে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন হোক।
সিলেট জেলা আইনজীবী সিমিতির সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম জানান, বাংলাদেশ সংবিধানের ১০০ অনুচ্ছেদ মোতাবেক দেশের প্রত্যেকটি বিভাগীয় সদরে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতির নিকট সুপারিশ করলে রাষ্ট্রপতি যে কোন বিভাগীয় সদরে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন করতে পারেন। সে অনুযায়ী আমাদের দাবী প্রধান বিচারপতির সুপারিশের মাধ্যমে সিলেটে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন করা হোক। এমনিতেই সিলেটে মামলা মোকাদ্দমা বেশী, মামলা জট, মামলা ব্যয় কমাতে এখনই সিলেটে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন করতে হবে। তিনি আরো বলেন, এরশাদ সরকারের শাসনামলে সিলেটে হাইকোর্টের স্থায়ী সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন হলেও তা বাংলাদেশের সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে বাতিল করা হয়।
সিলেটের প্রবীন আইনজীবী মুক্তিযোদ্ধা বেদানন্দ ভট্টাচার্য্য জানান, সিলেটে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন করলে হাইকোর্টের মামলা জট কমে আসবে। সিলেটের জনগন ঢাকায় গিয়ে দুর্ভোগ পাওয় থেকে পরিত্রাণ পাবে। তিনি মনে করেন দেশের প্রত্যেক বিভাগে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন জরুরী। সংবিধান অনুযায়ী প্রত্যেক বিভাগের সদরে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন হলে জনদুর্ভোগ, মামলা ব্যয় ও মামলা জট অনেকাংশে কমে আসবে।
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেটের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ দেশের প্রত্যেকটি বিভাগে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন জরুরী বলে মনে করেন। কারণ প্রত্যেক বিভাগে যদি হাইকোর্টের বেঞ্চ স্থাপন করা হয় তাহলে উচ্চ আদালতে বিচার পেতে জন দুর্ভোগ কমে আসবে। মামলার ব্যয়ভার ও হ্রাস পাবে। এজন্য সরকার ও বিভিন্ন সময় উদ্যোগ করছেন। তবে তা বাস্তবায়ন সময় সাপেক্ষ ব্যাপার বলে তিনি মনে করেন। তিনি সিলেটে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের জোর দাবী জানান। তিনি আরো বলেন, সিলেটে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন হলে মামলা জট কম্র সাথে সাথে সিলেটে আইন পেশার মান ও বৃদ্ধি পাবে।
সিলেটের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ও বিএনপি নেতা এডভোকেট আব্দুল গাফ্ফার জানান, দেশে অনেক কিছুর বিকেন্দ্রীকরণ হচ্ছে। যার ফলাফল খারাপ হচ্ছে না। তাই বিচার বিভাগকে বিকেন্দ্রীকরণ করা হলে তার ফলাফলও ভালো হবে। সিলেটের অনেক আইনজীবী হাইকোর্টে প্র্যাকটিস করেন এবং সিলেট জেলা বারেভালো ভালো আইনজীবী রয়েছেন। যার ফলে সিলেটের বিজ্ঞ আইনজীবীরাও কাজের সুযোগ পাবেন। জনসাধারণ ঢাকায় গিয়ে মামলা চালাতে নানাভাবে ভোগান্তি পেতে হয়। তাই সিলেট বিভাগীয় শহরে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন জরুরী বলে আমি মনে করি। কারণ হাইকোর্টে এখন মামলা জট বেশী। তা হ্রাস করতে প্রত্যেক বিভাগীয় শহরে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন এখন সময়ের দাবী বলে তিনি মনে করেন।
সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট এ.কে.এম শামিউল আলম জানান, সিলেট জেলা ও মহানগর দায়রাসহ বিশেষ জজ আদালতে বিভিন্ন মামলার রায় ও ডিক্রি ঘোষণার পর বিচার পেতে বিচারপ্রার্থী জনগনকে উচ্চ আদালতের আশ্রয় নিতে হয়। উচ্চ আদালত মামলায় বিচার পেতে হলে সিলেটের বিচারপ্রার্থী জনগন নানাভাবে ভোগান্তির শিকার হতে হয়। এ ভোগান্তি থেকে পরিত্রাণ পেতে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার কাছে দাবী জানালে তিনি এ বিষয়ে সরকারের সাথে একটি প্রক্রিয়া চলছে এবং এ প্রক্রিয়া শেষ হলে সিলেটকে প্রাধান্য দিবেন বলেও আশ্বাস দিয়ে ছিলেন। কিন্তু এ আশ্বাস আর আলোর মুখ দেখেনি। আমরা মনে করি সিলেট হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন হলে সিলেটের বিচারপ্রার্থী জনগন উপকৃত হবেন।
সিলেট জেলা আইনজীবী সিমিতির সভাপতি এডভোকেট জামিলুল হক জামিল বলেন, সিলেটে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন সময়ের দাবী। কারণ হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন হলে বিচারপ্রার্থী জনগণের খরচ কমবে, মামলা জট হ্রাস পাবে। তিনি বলেন, এ দাবী সরকারের কাছে আমরা সব সময় জানিয়ে আসছি। জনদূর্ভোগ কমতে সিলেটে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন করতে হবে।
সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার প্রয়াগমহল গ্রামের মৃত আলহাজ্ব আব্দুল মোতালেবের পুত্র মো. আফরোজ মিয়া। তিনি উচ্চ আদালতে মামলা চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। তিনি জানান, সিলেটে সুযোগ থাকলে তিনি মামলায় অন্তর্ভুক্ত হতেন। তিনি প্রয়াগমহল পুরাতন জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি। তাঁর বাড়ির পিছনের কিছু ভূমি নিয়ে এক স্বত্ব মামলা রয়েছে। এ মামলায় দরখাস্তকারী আদালতে কমিশনের আবেদন করলে তাদের পক্ষে আদেশ হয়। পরে জেলা জজ আদালতে আপীল করেন দরখাস্তকারী। এ আদালতের আদেশও তাদের পক্ষে আসে। পরে অন্যপক্ষ আব্দুল আজিজ তার ভাতিজাকে নিয়ে উচ্চ আদালতে রিভিশন করেন। কিন্তু ঢাকায় গিয়ে মামলা চালাতে অর্থ ব্যয়, যাতায়াত কষ্ট চিন্তা করে তিনি পক্ষভুক্ত হননি। সিলেটে সুযোগ থাকলে তিনি এ মামলার পক্ষভুক্ত হতেন।