সরকারি টাকায় হজ্ব ও কিছু কথা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ জুলাই ২০১৯, ১:৩৭:৪১ অপরাহ্ন
এবার সরকারি খরচে সিইসি, প্রতিমন্ত্রী, সচিবসহ ১০ জনের একটি ‘ভিআইপি গ্রুপ’ হজ্বে যাচ্ছেন। এবারই প্রথম অর্ধশতাধিক আলেম-উলামাও সরকারি খরচে হজ্ব করছেন বলে সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে।
হজ্ব মিশনের তত্ত্বাবধানে হজ্বযাত্রীদের ‘সেবার জন্য’ বরাবরই ডাক্তার, গাইড সহ বিপুল সংখ্যকক কর্মকর্তা হজ্বে যান। এ দলে প্রকৃত কর্মীর সাথে মন্ত্রী, সচিব, রাজনৈতিক বিবেচনায় অনেকে যান। এ প্রথা বহুদিন থেকে চলে আসছে। কিন্তু এবার যোগ হলেন আলেম-উলামা এবং সর্বশেষ ‘ভিআইপি গ্রুপ’।
হজ্ব ইসলামের পাঁচ মৌলিক স্তম্ভের একটি। এটি একটি ফরজ ইবাদত। তবে সবার জন্য নয়। যাদের হজ্বের যাওয়ার মতো যথেষ্ট আর্থিক স্বচ্ছলতা আছে শুধু তাদের জন্যই হজ্ব ফরজ। আরেকটি শর্ত আছে হজ্ব হতে হবে হালাল টাকায়। ফরজ হজ্ব নিজের টাকায় না হলে ফরজ আদায় হবে না, আর জনগণের টাকা তথা সরকারি টাকায় নফল হজ্ব করা ইসলামী শরিয়তে জায়েজ কি-না সে ব্যাপারে উলামায়ে ক্বেরাম অধিক জ্ঞাত। কিন্তু সেই আলেম উলামাদের একটি বড়ো গ্রুপ সরকারি টাকায় হজ্বে যাওয়ায় ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষ কিংকর্তব্যবিমূঢ়।
‘সরকার কা মাল দরিয়া মে ঢাল’ এ প্রথা যুগযুগ ধরে চলে আসছে। মানুষের কাছে বিষয়গুলো ‘গা সওয়া’ হয়ে গেছে। কিন্তু যারা ধর্মের আলোকে এ জাতীয় ধর্মের আবরণযুক্ত কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবেন তারা নিজেরাই ‘টোপ’ গিলে বসে আছেন- এই চরম অধার্মিকতার জবাব কে দেবে?
শোনা যাচ্ছে এরই মধ্যে হজ্ব যাত্রার জন্য তালিকাভুক্ত কিছু আলেম সরকারি টাকায় হজ্বে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমরা তাকওয়াবান এই আলেমদের সিদ্ধান্তকে অভিনন্দন জানাই।
এদেশের উলামায়ে কেরাম খেয়ে না খেয়ে যুগের পর যুগ শুধু আল্লাহর ওয়াস্তে দ্বীনের খেদমত করে গেছেন এবং সাধারণভাবে আমাদের উলামাশ্রেণী তুলনামূলক গরীব। তাদের এই গরীবী অবস্থায় ‘হজ্বে যাওয়ার’ মতো পরম আকাক্সিক্ষত একটি ‘টোপ’ থেকে কেবল তাকওয়াবান আলেমরাই বেঁচে থাকতে পারবেন।
আমাদের সিইসি, মন্ত্রী, এমপি, সচিব এই ‘ভিআইপি গ্রুপে’ যারা যাচ্ছেন তাদের কেউ কেউ হয়তো বিষয়টির ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ সর্ম্পকে অজ্ঞাত। এদেশের হক্কানী উলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট বক্তব্য রাখলে হয়তো যারা না বুঝে এই পথের অতীতে যাত্রী হয়েছেন, বর্তমানে হচ্ছেন বা ভবিষ্যতে হওয়ার আকাংখা পোষণ করেন-তারা সরকারি টাকায় হজ্ব করে নিজেদের আমল নষ্ট করতে চাইবেন না।
সকলেই পূণ্যের আশায় হজ্বে যেতে চান। পাপ কামানোর জন্য নয়। কোনটিতে পূণ্য আর কোনটিতে পাপ এ বোধ অনেকেরই নেই। এ ব্যাপারে অজ্ঞ মানুষজনকে সঠিক দিক নির্দেশনা দেয়ার দায়িত্ব আলেম সমাজের। এক্ষেত্রে আমরা তাকওয়াবান আলেম সমাজের যথাযথ ভূমিকা কামনা করি।