মিলিয়নিয়ার আরব শিল্পী গ্রামে থেকেই, শহরে যান না
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ জুলাই ২০১৯, ১:৪৬:১৮ অপরাহ্ন
ইতিহাসে নদী ও সমুদ্রে
।। সারওয়ার চৌধুরী।।
মিলিয়নিয়ার আরব শিল্পী গ্রামে থেকেই, শহরে যান না
কাজেম আল সাহের। ইংরেজি ফ্যান্টাবুলাস শব্দটি বলতে হয়, মানে দুর্দান্ত আরব গীতিকার সুরকার ও শিল্পী। এই সময়ের আরব দুনিয়ার তিন জন শীর্ষ আরব সংগীতশিল্পীর নাম নিলে, এর মাঝে তার নাম আসবে। ইরাকি তিনি। কোনো মদীনায় থাকেন না। মদীনা আরবি শব্দের অর্থ শহর। তিনি থাকেন গ্রামে। ভাবের মানুষ, দরদি দিলের মানুষ। সহজ স্বাভাবিক পরিবেশে থাকবার মানুষ। গান গেয়ে গান লিখে গানে সুর দিয়ে মিলিয়ন মিলিয়ন মিলিয়ন দিনার কামাই করেন কিন্তু শহরে বিলাসী জীবন যাপন করতে চান না। প্রেমের গান লেখেন তিনি। নারী পুরুষের ন্যাচারাল মনোদৈহিক টানের ভাব হৃদয়গ্রাহী হয় তার গানে। ভালোবাসা চর্চার শিল্প বানান। সেখানে যেন ঠিক দেহের কামনা থেকেও নাই। যেন তুরীয়-দেহাতীত এক অনির্বচনীয় বোধকে ধরতে দেহ কেবল মাধ্যম। যেন বহুবিধ যন্ত্রণাতে জড়িয়ে থাকা জীবন ভালোবাসাতে থাকবার প্রেরণা মিলে তার গানের কথায় ও সুরে। তার ভক্তরা বলেন, ‘মন মজে, ভিজে যায়, মন ভালো হয় তার গান শুনলে। ব্যক্তি জীবনে সুন্দর চরিত্রের মানুষ কাজেম আল সাহের। নারীকে খুব সম্মানের নজরে দেখেন।’
খুব জনপ্রিয় তার একটি গানের কয়েকটি লাইনের অনুবাদ-
“তোমার হাসি দেখলে ওগো
শিশুর মতো আমি খুশি
আমার বুকে রাখো মাথা, আসো
আমি নিবো তোমার ঘ্রাণ
তুমি নিবে আমার,
আমরা পরস্পরে বিলীন হলেই মিলে
মায়ার মধুরাস্বাদ,
জানি, তোমার আগুনই জান্নাত”।
কাজেম ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের পক্ষেও গান লিখেছেন। তার মতে, আমেরিকার সা¤্রাজ্যবাদী সরকার আমেরিকার স্বার্থে সাদ্দামকে সরিয়েছে মানবতার জিগির তুলে। পাশের দেশগুলোর আরব শেখেরা আমেরিকার চামচামি করতো বলে সাদ্দামকে ভয় পেতো। আমেরিকা বেহিসাব তেল নিয়ে গেছে ইরাক থেকে। সাদ্দাম পরবর্তী পনেরো বছরে ইরাকের অবস্থা সবদিক থেকে খারাপ। কী উপকার করেছে আমেরিকা ইরাকের জনগণের? তবু ইরাকের মানুষ দুঃখে জ্বলতে জ্বলতে হাসে। ভালোবাসার গান গায়। এটাও দেখা যায়, আরবরা বিপদের মাঝেও বেপরোয়া থাকে।
তাছাড়া, আরব রোমান্টিসিজমের আলাদা একটা টেমপো আছে Í বেশ সঘন একটা দ্রুতি আছে। রোমান্টিসিজম মানেই অবাধ কল্পনায় ভাসা কি? টু প্রমৌট হিউম্যান ওয়েলফেয়ার, স্বভাবে থাকবার, ন্যাচারাল থাকবার, স্বাধীন থাকবার প্রেরণা দেয় রোমান্টিসিজম। যাতে মানুষ আত্মবিশ্লেষণ করে অন্তঃদর্শনে মগ্ন হয়। উল্লেখ্য, রোমান্টিসিজমের বিপরীতে যা আছে বলে ধরা হয়-যথা: ক্লাসিসিজম, রেশনেলিজম। সেখানেও কি কোনোভাবে রোমান্টিসিজম নাই?
আরব সংস্কৃতিতে ভালোবাসাবোধের দ্যুতি বেশ প্রভাবশালী। লায়লা-মজনুন তো আরবের ভালোবাসার শিল্প। নবী মুহাম্মদ সঃ এর আগের ‘সাবআ মুয়াল্লাকা’র প্রধান কবি ইমরুল কায়েস ছিলেন প্রেমের কবি। তার কবিতার একটি পংক্তি এখনো আরবদের মুখে মুখে। ইমরুল কায়েসের মৃত্যুদ- কার্যকর হবার আগে তিনি কাব্যভাষায় বলেছিলেন- “ক্বিফা নাবকি মিন জিকরা হাবিবাঁউ ওয়া মানজিলি।-থামো তোমরা, আমার প্রিয়তমা আর ঘরের স্মৃতি ধরে এসো আমরা কাঁদি।”
আরবের ক্লাসিক ধারার এই কবির কাব্যভাষা খুব ইনফেকশাস। জানা যায়, রসুল সঃ ইমরুল কায়েসের কাব্যভাষার প্রশংসা করেছিলেন।
লেখকঃ জালাল উদ্দিন রুমি গবেষক, অনুবাদক, কবি, আবুধাবি থেকে।