বিকাশে ভুলে আসা ৩০ হাজার টাকা ফেরত দিলেন বানিয়াচঙ্গের শিরফল
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ জুলাই ২০১৯, ২:০০:২৪ অপরাহ্ন
হবিগঞ্জ সংবাদদাতা::
হত্যা, ধর্ষণ, মাদকসহ দূর্নীতির একের পর এক সংবাদে দেশবাসী যখন উৎকণ্ঠিত তখন বিকাশের ভুল নম্বরে আসা ৩০ হাজার টাকা ফেরত দিয়ে সততার নজির স্থাপন করেছেন বানিয়াচঙ্গের টাইলস মিস্ত্রি শিরফল মিয়া (৪০)। মঙ্গলবার এ টাকা তিনি ফেরত দিয়েছেন। তিনি উপজেলা সদরের বানেশ্বর বিশ্বাসের পাড়া গ্রামের ফকির চান মিয়ার ছেলে।
জানা যায়, গত ১১ জুলাই রাতে ০১৭৪৬-৬১৬৪৬৭ নম্বরে ৩০ হাজার টাকা বিকাশ আসে। এর পর থেকে এ টাকা ফেরত দেওয়ার জন্যা অস্থির হয়ে পড়েন শিরফল মিয়া। এর পরদিন তার নম্বরে পটুয়াখালি থেকে ফোন আসে।
তাতে তিনি টাকা আসার কথা স্বীকার করেন এবং সাথে সাথে পৃথিবীর বিখ্যাত গ্রাম বানিয়াচং ঘুরে যাওয়ার জন্য তাদের আমন্ত্রণ জানান। এতে আরো দু’ বন্ধুকে সাথে নিয়ে বানিয়াচঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার আসেন টাকার মালিক মো. আল আমিন (২৯)।
আল আমিন পটুয়াখালি জেলার বাউফল উপজেলার মদনপুরা গ্রামের আব্দুস সাত্তার হাওলাদারের ছেলে। তিনি একটি বেসরকারি কোম্পানীতে কর্মরত। এ টাকা ফেরত পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন আল আমিন মিয়া।
তিনি জানান, যখন জানতে পারি ৩০ হাজার টাকা বিকাশের ভুল নম্বরে হবিগঞ্জের বানিয়াচঙ্গে গিয়েছে তখন ফেরত পাব বলে বিশ্বাস স্থাপন হয়েছে। কারণ এখানকার মানুষ অনেক সৎ ও ভালো হিসেবে জানি। সে বিশ্বাসের প্রতিফলন আজ পেয়েছি। টাকা ফেরত পেয়ে খুশি হয়ে শিরফল মিয়াকে ২ হাজার টাকা দিয়েছেন তিনি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, দৈনিক খোয়াই পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার শিব্বির আহমদ আরজু, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি শেখ সাগর আহমদ ও রেজাউল করিম।
এ ব্যাপারে বিশিষ্ট সমাজসেবক শেখ আজিজুর রহমান বলেন, শিরফল মিয়া অতি দরিদ্রতার মাঝে থেকেও পটুয়াখালি থেকে আসা টাকা ফেরত দিয়ে বানিয়াচঙ্গের সম্মান আরো বৃদ্ধি করেছেন।
বর্তমান সমাজে শিরফল মিয়ার মতো নির্লোভ মানুষরা যে এখনও সততাকে আকড়ে ধরে বেঁচে আছেন সেটা এ সমাজে একটি বড় দৃষ্টান্ত। বানিয়াচং যাত্রাপাশা দারুল আরকাম মাদরাসার হেড ইনচার্জ মাওলানা মোশাহিদ আহমদ বলেন, শিরফল মিয়ার মাঝে আল্লাহর ভয় আছে। হাদীসে বর্ণিত আছে, কেউ কারো টাকা বা অন্য কোন হক আত্মসাত করলে পরকালে তাকে তা ফিরিয়ে দিতে হবে।
হয়তো নিজের পুন্য তাকে দিয়ে দিতে হবে। পুন্য না থাকলে তার গুনাহ নিজের কাধে নিয়ে জাহান্নামে যেতে হবে।
উল্লেখ্য, শিরফল মিয়া বিদেশ ফেরত এক যুবক। তিনি প্রবাস থেকে অর্থ-কড়ি খুইয়ে বাড়িতে এসেছেন প্রায় ৫ বছর। পেশা হিসেবে টাইলস মিস্ত্রি। কিন্তু ৫ সদস্যের সংসারে অর্থের টানাপোড়েন লেগেই আছে। এমতাবস্থা থেকেও শিরফল মিয়া সেই টাকার প্রতি বিন্দুমাত্র লোভ করেননি।