হতাশার চাদর থেকে বেরোতে পারেনি সিলেট
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ জুলাই ২০১৯, ২:২৯:০০ অপরাহ্ন
পাশের হারে এগিয়ে মেয়েরা, জিপিএ-৫ এগিয়ে ছেলেরা
আবু বকর সিদ্দিক ::
উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলে এবারো পিছিয়ে সিলেট। আট শিক্ষাবোর্ডের মধ্যে সিলেটের অবস্থান এবার সাত নম্বরে। সিলেট বোর্ডের ফলাফল মাঝে মধ্যে আশার ঝিলিক দেখালেও পাশের হার বেশিরভাগই হতাশার চাদরে মোড়ানো। এবার সারাদেশে পাশের হার যখন ৭৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ সিলেটে পাশের হার ৬৭.০৫ শতাংশ। আর ৪৭ হাজার ২শ ৮৬ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ অর্জন করলেও সিলেট বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ হাজার ৯৪ জন। মোট ফলাফলে দেখা যায় পাশের হারে সিলেটের মেয়েরা এগিয়ে থাকলেও জিপিএ-৫ এর দিক থেকে ছেলেরা এগিয়ে রয়েছে।
গত বছরের চেয়ে সিলেট বোর্ড এবার কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও সারা দেশের তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে সিলেট। গত বছর পাশের হার ছিল ৬২.১১ শতাংশ আর জিপিএ-৫ ছিল ৮শ ৭৩। এবার পাশের হার গত বছরের চেয়ে ৪.৯৪ শতাংশ বেশি এবং জিপিএ-৫ দুই‘শ ২১ জন বেশি পেয়েছেন। আর ২শ ৮৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সাতটি প্রতিষ্ঠানের সবাই পাস করেছেন বলে জানিয়েছে শিক্ষাবোর্ড।
উচ্চ মাধ্যমিকের সার্বিক ফলাফলে সিলেট বোর্ডে ছন্দপতন হচ্ছে বারবার। আট শিক্ষাবোর্ডের মধ্যে কখনো প্রথম দিকে আবার কখনো সবার নীচে অবস্থান ছিল সিলেটের। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে ৭২ শতাংশ ফলাফল অর্জন করে চমক দেখালেও ২০১৮ সালে ধ্বস নেমে ৬২.১১ শতাংশ হয়। কিন্তু এর আগে ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে ৭৯.১৩, ৭৯.১৬ এবং ৭৪.৫৭ শতাংশ অর্জন করেছিল সিলেট বোর্ড।
বুধবার ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষে সিলেট শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. কবির আহমদ সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় ফলাফলের সার্বিক দিক তুলে ধরে বলেছেন, এবার ইংরেজীতে কিছুটা খারাপ করায় সিলেট শিক্ষাবোর্ড কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে।
ইংরেজীতে ৭৪.১০ শতাংশ শিক্ষার্থী পাশ করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি, প্রশ্ন কাঠামোর পরিবর্তনের পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়ের কলেজগুলোতে শিক্ষক সংকট, শিক্ষকদের দক্ষতা এবং শিক্ষার্থীদের অমনোযোগিতার কারণে ফলাফলে ছন্দপতন হচ্ছে।
ঘোষিত ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়- বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় প্রশাসন তিন বিভাগে ৭৬ হাজার ৮শ ৯৮ পরীক্ষার্থীর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছেন ৭৬ হাজার ২শ ৫১জন। ১ হাজার ৯৪ জন জিপিএ-৫ এর মধ্যে এগিয়ে রয়েছে ছেলেরা। আর পাশের হারে এগিয়ে রয়েছে মেয়েরা। এবারের পরীক্ষায় ৬৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ মেয়ে পাস করেছে। অপরদিকে ছেলেদের পাসের হার ৬৪ দশমিক ৯১ শতাংশ। আর ৬শ ৪৪ জন ছেলে জিপিএ-৫ পেলেও ৪ শ ৫০ জন মেয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯শ ৪৪ জন, মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯১ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫৯ জন।
চার জেলার মধ্যে পাশের হার ও জিপিএ-৫ এর দিক থেকে এগিয়ে সিলেট। আর পিছিয়ে মৌলভীবাজার জেলা। সিলেটে পাশের হার ৭০.৫৯ শতাংশ। হবিগঞ্জে ৬৭.৮০ শতাংশ, সুনামগঞ্জে ৬৫.৩৯ শতাংশ এবং মৌলভীবাজার জেলায় ৬০.৯৬ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাস করেছেন।
সিলেট জেলায় ৩০ হাজার ৯শ ২৩ জন অংশগ্রহনকারী শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছেন ২১ হাজার ৮শ ৩০জন। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৭শ ৭২ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ছেলে ৪শ ৭৯ ও মেয়ে ২শ ৯৩ জন। ছেলেদের পাশের হার ৬৮.৫৫ এবং মেয়েদের পাশের হার ৭২.৪২ শতাংশ।
হবিগঞ্জে ১৪ হাজার ৯শ ৪৯ অংশগ্রহনকারী মধ্যে মোট পাস করেছেন ১০ হাজার ১শ ৩৫জন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ৪শ ৩৩ জন ছেলে এবং ৫ হাজার ৭শ ২ জন মেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। জেলায় ৮৭ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছেন। এদের মধ্যে ৪৫ জন ছেলে এবং ৪২ জন মেয়ে।
মৌলভীবাজারে ১৫ হাজার ৯শ ১৫ জন অংশগ্রহনকারীর মধ্যে পাস করেছেন ৯ হাজার ৭শ ১জন। এদের মধ্যে ছেলে ৪ হাজার ১শ ২১ এবং ৫ হাজার ৫শ ৮০ জন মেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। এই জেলায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২শ ৭ জন। এর মধ্যে ১শ ১০ জন ছেলে এবং ৯৭ জন মেয়ে।
সুনামগঞ্জ জেলায় ১৪ হাজার ৪শ ৬৪ অংশগ্রহনকারী মধ্যে পাস করেছেন ৯ হাজার ৪শ ৫৮ জন। এদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছেন মাত্র ২৮ জন। এর মধ্যে ১০ জন ছেলে এবং ১৮ জন মেয়ে। তবে এই জেলায় ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের পাশের হার বেশি। ছেলে ৬২.১৩ এবং মেয়েদের পাশের হার ৬৭.৯২ শতাংশ।
এ বছর সিলেট শিক্ষা বোর্ডে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৭৬ হাজার ২শ ৫১ জন। এদের মধ্যে ছেলে ৩৪ হাজার ৬শ ৪৯ জন এবং মেয়ে ৪১ হাজার ৬শ ২ জন। অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থীদের মধ্যে পাস করেছে ৫১ হাজার ১শ ২৪ জন। এদের মধ্যে ছেলে ২২ হাজার ৪শ ৯০ জন এবং মেয়ে ২৮ হাজার ৬ শ ৩৪ জন। সিলেটে বিষয়ভিত্তিক পাশের হারে ইংরেজীতে ৭৪.১০, আইসটিতে ৯১.৩৭ শতাংশ মার্কস পেয়েছেন উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা।
প্রসঙ্গত, ১ এপ্রিল চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের তত্ত্বীয় পরীক্ষা শুরু হয়ে শেষ হয় ১১ মে। এরপর ১২ মে থেকে ব্যবহারিক পরীক্ষা শুরু হয়ে ২১ মে শেষ হয়। দেশের দুই হাজার ৫শ ৭৯টি কেন্দ্রে এবার উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় ১৩ লাখ ৫১ হাজার ৫শ ৫ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন।