পথ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ জুলাই ২০১৯, ১২:০২:২৪ অপরাহ্ন
পথ
।। আবদুল হাই মিনার ।।
পলাশগড় নামে এই নিরিবিলি চা বাগানে এখন সারা দিনমান হু হু হাওয়া বয়। ঝরা পাতায় ভরে ওঠে শুকনো ড্রেন আর বালুঢাকা সড়ক। সুনসান পাহাড়ি রাস্তার দুধারে ইউক্যালিপ্টাস আর দেবদারুর সারি বাতাসে দোল খায়। নীলচে সবুজ পাহাড়ের গায়ে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে থাকে লাল টালির বাসা। যখন দুপুরের দিকে মহুয়াবনে শালের জঙ্গলে বাতাস বয় শোঁ শোঁ, আর কী এক কানাকানিতে সোনাগালা রোদ্দুরের চায়ের বন রিমঝিমিয়ে ওঠে, রৌদ্রগন্ধী পাখির ডানায় ভর করে নরম পালকের দুপুরগুলো হারিয়ে যেতে থাকে হিম হিম বিকেলের মাঝে, যখন পাতাঝরা বনে কারা শুধু ফিসফিসিয়ে কথা বলে গান গায়, নীল হলুদ প্রজাপতিগুলো বেদিশা হয়ে ঘুরে বেড়ায় চা বাগানের ঝকঝকে প্রসন্নতায়, তখন বুঝি কোনো অচিন পাখি বুকের ভেতর মিষ্টি সুরে শিঁস দিয়ে ওঠে।
এরকম দিনে পলাশগড় নামে এই নিরিবিলি চা বাগানের একদম উত্তর সীমানায়, যেখানে নীল পাহাড়ের মাথা আকাশ ছুঁই ছুঁই, সেখানে একটেরে দাঁড়িয়ে টিনের চালের ছোট্ট বাড়িটা ঘুমভাঙা অবাক চোখে তাকিয়ে কী এক উচ্ছ্বল আনন্দের বারতা যেন পড়তে চাইবে। এরকম দিনে এর বাসিন্দারা বিশেষ করে সেই শ্যামল দীঘলদেহী মেয়েটি, যার চোখদুটিতে কেমন এক মিষ্টি খুশির ব্যস্ততা হঠাৎ থমকে গেছে, তার সব কিছুতেই ভালোলাগার অবাক অবাক ভাব শুনতে পাবে বুকের দরজায় কড়া নাড়ছে কোন বাতাসের গান। মাফির তখন পলাশগড়ের এই গাছগাছালি আর ধূলাবালির পাহাড়ি সড়ক, অপরাজিতার মতন ঝকঝক নীল আকাশ আর উদ্দাম বাতাসের সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করবে। মাফির সব ভালোর অনুভব তখন পলাশগড়কে ঘিরে গান গেয়ে উঠবে।
আম্মুর আকাশী রঙের নরম শালখানা গায়ে জড়িয়ে বাসার গেট পেরিয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়ায় মাফি। গেটের কাছেই মালাকানার ডালে এক থোকা ফুল ফুটেছে। বাতাসে দুলছে ফুলগুলো। প্রসন্নতায় বুক ভরে শ্বাস নেয় ও তারপর হাঁটতে থাকে বালুঢাকা সড়ক ধরে।
ওর ডানে বায়ে একঝাঁক রঙিন প্রজাপতি উড়ে বেড়াচ্ছে। হাওয়ার দুপুরের এই সুনসান দানাঙ্গাম সড়কে ও এখন একদম একা। ছায়া ছায়া নির্জনতায় এত সুন্দর রাস্তাটা কিছুটা বিষণœও বা। দূরে দূরে অসংখ্য ছোট বড় পাহাড়।
উদ্দাম বাতাসে মাফির চুল ওড়ে। ফ্লানেলের ফ্রকের পকেটে হাত ঢুকিয়ে শিঁস দিতে দিতে ও এবার দানাঙ্গামের রাস্তা ছেড়ে শোহাণীর পাহাড়ি সড়কে উঠে আসে। এখান থেকে খাড়া রাস্তা দুভাগ হয়ে দুদিকে চলে গেছে। ডানেরটা চড়াই বেয়ে বেয়ে উঠে গেছে স্যালাম্যান্ডারের চূড়ায়, বায়েরটা গিয়ে শেষ হয়েছে পুধাউতে। আসলে ওখানেও শেষ হয়নি, ওখান থেকে প্রস্থে একটু সরু হয়ে ওটা উঠে গেছে আরো ওপরে একেবারে তরামুনিতে। এখান থেকে অনেক দূরে বিশাল এক গিরগিটির অস্পষ্ট ছায়া পিঠ চোখে ভাসে। নীলচে সবুজ কুমুপাহাড় হাতছানি দিয়ে ডাকে। কাছের পাহাড় টিলার গায়ে গায়ে চা বাগানের ম্যানেজারদের ছবির মতন বাঙলো। লাল টালির ছাদ, নীল সবুজ রেলিংঅলা বারান্দা। বাঙলোগুলোর চারদিকে রোদ ঝলকানো ইউক্যালিপ্টাস আর দেবদারুর ভিড়, অ্যাকেসিয়া আর সেগুনের ভিড়। ভীষণ লাগে মাফির এই নিরিবিলি পাহাড়ি সড়ক দিয়ে হাঁটতে।
পলাশগড়ের একমাত্র পীচ রাস্তা এটা এঁকেবেঁকে ঘুরে ঘুরে চলে গেছে সেই শোহাণীর পাহাড়ি শহরে। নির্জন পাতাঝরার পথে পথে বাতাস কাঁপে। গাছের ডালপালা কাঁপে। হঠাৎ হঠাৎ সকল নিস্তব্ধতা ভেঙে দিয়ে একখানা দু’খানা জীপগাড়ি বা ভটভটিয়া দ্রুত হারিয়ে যায় পাহাড়ি সড়কের বাঁকের আড়ালে। ওরা কোথা থেকে আসে, কোথায়ই বা যায়?
মাঝে মাঝে ঘুর পথে চন্দ্রর ট্রাষ্টর বা মনাফ-ড্রাইভারের ইটের রঙের ট্রাকটাকেও শণ বা চায়ের পাতি বোঝাই হয়ে এ পথে আসতে দেখতে মাফি। পীচ-সড়কের দু’পাশে কাঁটাতারের বেড়া। লোহার সিঁড়ি বেয়ে কাঁটাতারের বেড়া টপকে সড়কের ও’ পাশে চায়ের বনের ভেতর ঢুকে পড়া যায়। মাফি আজ বনে ঢুকবে না। নৈঃশব্দের শব্দ-ভরা তারই মত এই পথের বাঁকে আজ সে একটুখানি ঘুরে বেড়াবে। পথের বাঁকের শেষে যে মালাক্কা গাছ, সারা দিনমান হু হু হাওয়ার সেই গাছ পাতা পড়ে পথের ওপর, তারই ছায়ায় একটুখানি বসে থাকবে সে। একা একা।
বনের নিস্তব্ধতাকে চমকে দিয়ে ছোট্র এক তেজপাতা গাছ থেকে হঠাৎ গান গেয়ে ওঠে একটা বুলবুলি উড়ে গেল দাংরির দিকে। মাফি মুগ্ধ ব্যগ্র চোখে সেদিকে তাকালো। এ’ সময় চোখে পড়ল চায়ের বনের বালুঢাকা পথ দিয়ে হেঁটে হেঁটে একটা বুড়ো লোক শোহাণীর সড়কে উঠে আসছে। প্রাচীন এক মুন্ডা পুরুষ। কাঁধে লাঠির আঘাত ছোট লাঠির। ধুসর রঙের ফতুয়া আর হাফপ্যান্ট পরণে লোকটা মালাক্কা গাছের নীচে এসে কিছুক্ষণের জন্য দাঁড়াল। মাফির দিকে তাকিয়ে সরল প্রসন্ন হাসির আভায় বলি – রেখাঙ্কিত মুখখানাকে ঝকমকে করে তুলে বলল, কুথা যাবি, নুনি? শোহাণী? তার সাদা চুল বাতাশে ওড়ে। ঋজু দৃঢ় দেহে এক মুক্তা বাজ উড়াল দেয়। তার প্রাচীন বলি-রেখাঙ্কিত মুখে সবুজ পৃথিবীর মমত ঝড়ে পড়ে’ কুঁচকানো সজীব চোখে বনভূমির গভীরতা স্থির হয়ে থাকে। তার গভীর গম্ভীর কন্ঠস্বরন দুরের,-বহু দুরের বিস্মৃত স্মৃতি ভিড় করে আসে। মাফি কিন্তু এসব কিছুই ভাবে না, শুধু বোধের অতীত কী বুক হু হু করা অনুভূতির ছোঁয়ায় তার বড় বড় গভীর চোখ দুটি চিক্চিক্ করে ওঠে। মাথা হেলিয়ে দূরের পথের বাঁকের দিকে হাত তুলে ইশারা করে বলল না শোহাণী না পলাশগড়। ওখানে আমার বাসা কি না। তুমি কোথা থেকে আসছো? এখানে তো তোমাকে দেখিনি কোনোদিন! যাবে কোথায়?
মালাক্কাগাছের বেঁকে নীচু হয়ে আসা একখানা ডালে গাঠ্রিটা ঝুলিয়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াল বুড়ো। চায়ের বনের মাথার ওপর দিয়ে মিষ্টি রোদের দুপুরের গন্ধ বয়ে নিয়ে এলো উন্মনা বাতাসের ঢেউ। বুড়ো হেসে বলল,Ñ‘হামার আসা যাওয়ার কনো ঠিক ঠিকানা নাইকে, নুনি। আজকা ঝইবাসা তো কাল কিলিপড়ং, পরশু আমু, তরশু পলাশগড়,-পথের মানুষ আমি পথ হামকে ঘুরায়ে মারে। সে কোন পথ? এই শোহাণীর, এই পলাশগড়ের বিষন্ন রোদ্দুরে মাখামাখি নিঃসঙ্গ উদাসী হাওয়ার পথ? যেখানে দিন রাত শোঁ শোঁ হাওয়া বয় যেখানে ঝরাপাতায় ভরে ওঠে রুপালী সড়ক? বলল মাফি,- তোমার ছেলেমেয়ে নেই? তোমার ঘরবাড়ি নেই? এ রকম আওয়ারার মতন ঘুরে বেড়ানো তো ভাল কথা নয়। বুড়ো মুন্ডা সেই গাছের নীছে মরা ঘাসের মাটির ওপর বসে পড়ে হাফপ্যান্ট এর পকেট থেকে একটা দুমড়ানো বিড়ি বের করে তাতে দেশালাইএর কাঠি দিয়ে আগুন ধরালো। তারপর একমুখ ধুঁয়া ছেড়ে মাফির দিকে কোমল চোখো তাকিয়ে বলল,-‘তুই তো বহুত দরদী মানুষ হে, নুনি! তোর সাথে কথা বলে সুখ আছে। বসবি নুনি? খানিক বসি যা। মাফির ভাল লাগছে কথা বলতে। শালখানা খোলে নিয়ে বুড়োর গাঠরির কাছেই গাছের ডালে ঝুলিয়ে রাখলো। তারপর হাঁটু মোড়ে বসে পড়ল মরা ঘাসের ওপর। একখানা ভটভটিয়া ভট্ ভট্ আওয়াজ তুলে ওদের কাছাকাছি এসে পড়ল। মাফি চোখ তুলে দেখে পলাশগড়ের এসিস্ট্যান্ট ম্যানোজার বাগানের শ্রমিকরা যাকে ছোট সাহেব বলে ডাকে, সেই নিয়াজীসাহেব ভটভটিয়া হাঁকিয়ে পলাশগড়ের সেকশনের ভেতর ঢুকছেন । যেতে যেতে অবাক কৌতুহলে মালাক্কাগাছের নীছে বসা মাফির দিকে তাকালেন তিনি। ছোটবাবুর এই মেয়েটি আচ্ছা পাগলী তো! কতদিন দেখেছেন ছোট ভাইটিকে নিয়ে বনের ভেতর একা একা ঘুরে বেড়াচ্ছে, চা বাগানিয়াদের সাথে কথা বলছে অনর্গল। বন-জঙ্গল পাহাড় আর এই চা বাগানিয়াদের সাথেই তার যত বন্ধুত্ব। অদ্ভুত!
কাল মায়াবী মুখ আর বড় বড় কাল চোখের এই দীঘলদেহি মেয়েটিকে দেখলেই তার নিজের মেয়ের কথা মনে পড়ে। ভাবেন, পড়াশোনার ক্ষতি না হলে ইরাণীকে এই পলাশগড়েই নিয়ে আসতেন। কিন্তু তা হবার নয়। ইরাণীর মা আসমা জেদী মহিলা মেয়েকে নিয়ে জঙ্গলে পড়ে থাকার কথা সে চিন্তাই করে না।
মোটর সাইকেল ওদের চোখের আড়াল হতেই বুড়ো বলল, তোর নাম কি নুনি?
মাফি মাথা দুলিয়ে হেসে বললো, গুলরুখ শাহরিয়ার। সবাই আমাকে মাফি বলে ডাকে। আমার ডাকনাম মাফি কি না। বলে আবার হাসলো ও। জিজ্ঞেস করলো,
তোমার নাম কী?
পওন। পওন মুন্ডা।
মাফি বলল, পবন?
বুড়ো হাসি হাসি মুখে বলল, হু প-ওন। হুই তিরকুট পাহাড়ের উদিকে সুন নদী সিখানে হামার দেশÑ দাদোর বাপ চলি আইল ই’ আসাম রাজ্যে, সেই থাকি হামি তোদের মানুষ। দিয়া টি এস্টেটে হামার ঘর।
ঘর তাহলে আছে তোমার? পথে পথে তবে কেন ঘুরে বেড়াও? বউ ছেলে-মেয়ে মানা করে না?
কেহই নাই। মানা করার কেউ নাইকে রে ভাই।
বুড়োর চোখে রোদগালা মালনীর জল চিক চিক করে। হেসে বলল, একখান ছাওয়াল ছিল, আর বউ রুহিয়া। হামি যদি নদী হই গন্ডকী কি সুন ই দুজনা তার
পাড় হে! সি পাড় আজি কুথা? শুধু গন্ডকী ভাসি যায়, নি পাড় গন্ডকী’
মাফি বলল, ‘কী সব বলছো তুমি, বুড়ো! আমি কিছু বুঝি না যে!’
পবন মুন্ডা হেসে জানাল, মাঝে মাঝে তার মনে হতো সে বুঝি এক নদী, আর তার বউ আর ছেলে নদীর দুদিকের দুই পাড়। নদীকে আটকে রাখতে হলে পাড়ের প্রয়োজন খুব, কী না। ওদের মৃত্যুতে সে পাড়া কোথায় হারিয়ে গেল। মুক্ত পবন মুন্ড বেরিয়ে পড়ল পাড়হীন পথে-প্রান্তরে। রইল না কোনো পিছুটান। সে এখন সিলেট আসামের চা বাগানগুলোর আদিবাসী ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার জন্যে বাগানে বাগানে ঘুরে ঘুরে তাদের উদ্ধুদ্ধ করার কাজে পথ চলে। চা-বাগানিয়ারা কোনোদিন বড় হবার স্বপ্ন দেখে না। তাদের তুমি জিজ্ঞেস করে দেখো, চা-বাগানের একজন বুড়োকে, কিংবা শাল-সেগুনের মতো একজন তরুণকে- কী হে, জনমভর এই চা-বাগানে কুলিগিরি করেই কাটিয়ে দেবে নাকি, বড় কিছু হবার স্বপ্ন দেখতে ইচ্ছে করে না? খুব বড় ঝলমলে এক পথ দিয়ে হাঁটার স্বপ্ন? বড় কেউ একজন হওয়ার স্বপ্ন, ধরো হাকিম সাহাব, কিংবা ডাক্তার সাহাব, -বাগানের বড় সাহাব, দারোগা বাবু, এই দ্যাশের রাজা?
তখন তারা বোবা বনে যাবে। তোমার কথা কিছুই তারা বুঝবে না। মানুষ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখে, সে ‘সোয়াপন’ সত্য হোক কিংবা মিথ্যা হোক তবু তো দেখে! কিন্তু চা-বাগানিয়ারা ঘুমের ঘোরে শুধু ঘুমায়, শুধুই ঘুমায়! তারা স্বপ্ন দেখতে জানেই না। পবন-মুন্ডা বড় মধুর সব স্বপ্ন দেখে।
তার মতো আদিবাসীরা আবার মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে।
এসব স্বপ্নের কথা চা-বাগানের বুড়োবুড়িদের কানে কানে, তরুণ-তরুণীদের কানে কানে শিশু-কিশোরদের কানে কানে বলে বেড়ানোর জন্যে সে পথে পথে বেরিয়ে পড়ে। পথ তাকে ঘুরায়ে মারে। এইসব সত্য সুন্দর স্বপ্নের কথা ওরাওঁ মুন্ডা সবর রৌতিয়া আহীর-ছত্রী আর সাঁওতাল কুর্মিদের কানে কানে বলে বেড়ানোর জন্যে। ঘুমের ভেতর স্বপ্ন দেখে একদিন তারা জেগে উঠবে।
পবন-মুন্ডার পথ বড়ই সুন্দর।
সে পথে বৃক্ষরা দাঁড়িয়ে থাকে ঘাসের মাটিতে ছায়া ফেলে; সে পথে বুনো জন্তুরা হেঁটে যায়, ঝরনার জলে, জলের তৃষ্ণায়। সে পথে সভ্য মানুষেরা হেঁটে যায় বিশাল থেকে বিশালতর হয়ে ফিরে আসার আশায়। বৃক্ষ, নদী আর পাখি, যন্ত্র, জন্তু আর মানুষ, সবই তাঁর চলার পথের অফুরান পাথেয়। তারই মতো আদিবাসী দ্রাবিড়দের অসীম এক আলোকিত পথের স্বপ্নে বিভোর করতে পথে পথে ঘুরে বেড়ায়। পথ তাকে ঘুরায়ে মারে!
বুড়ো উঠে দাঁড়িয়ে গাঠ্রিটা আবার লাঠির সাথে বেঁধে পিঠে ঝুলিয়ে নিল। মাফিকে বলল, -‘যাইরে নুনি। তোর সাথ্ কথা বোলে জবর ভালো লাগল।’
মাফি বলল, -‘তুমি এখন কোথায় যাবে, বুড়ো? চলো আমাদের বাসায়, একটুখানি জিরিয়ে যাবে।’
পবন-মুন্ডা হেসে বলল, -‘আজ না ভায়া, আরেকদিন আসি তোদের বাসালে যাব।’
মাফি ক্ষুন্ন গলায় শুধু আস্তে করে বলল, -‘বাহ, এ’ পথে তোমার ফেরা কি আর হবে, কোনোদিন?’
বুড়ো নরোম চোখে মাফির মুখের দিকে তাকাল, তারপর তা কাঁধে হাত রেখে কোমল স্বরে বলল, – ‘ফিরব রে ভাই, পথ তো ঘুরে ঘুরে আবার একই পথে মিলে যায়। যায় না? ফিরে আসবো ঠিক।’
‘এসো তাহলে।’ বলল মাফি।
বুড়ো হাঁটে বাতাসে চুল উড়িয়ে।
পথ চুপচাপ পড়ে থাকে পথের ওপর।
নাকি পথও হাঁটে।