হালাল উপার্জনের গুরুত্ব ও পদ্ধতি
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ জুলাই ২০১৯, ২:৩৯:৫৭ অপরাহ্ন
হালাল উপার্জনের গুরুত্ব ও পদ্ধতি
।। মুস্তাকিম আল মুনতাজ ।।
মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। আর এই শ্রেষ্ঠ জীব তথা মানবজাতিকে আল্লাহ তা’য়ালা পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন একমাত্র তাঁর ইবাদতের জন্য। মানুষ আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করবে। ইবাদত-বন্দেগির জন্য প্রয়োজন শরীর ও সম্পদের। তাই ইবাদতের উপকরণ হিসেবে প্রয়োজনমতো সম্পদ থাকা দরকার। কেননা পৃথিবীতে আমরা কেউ একাকী নয়। প্রত্যেকেরই পিতামাতা, পুত্রকন্যা, স্ত্রী, আত্মীয়স্বজন এবং আরো অনেকেই আছেন। যাদের ভরণপোষণ ও প্রয়োজন মিটানো প্রত্যেকের দায়িত্ব। এমন কি অনেক ক্ষেত্রে ফরজও বটে। আর সম্পদ না থাকলে এ দায়িত্বগুলো পালন করা যায় না। তাই আল্লাহর ফরযকৃত ইবাদত আদায়ের পর নফল ইবাদতবন্দেগি করার পূর্বে আরেক ফরয হলো প্রয়োজনমতো নিজের ও পোষ্যদের ভরণপোষণের জন্য হালাল ও বৈধ পন্থায় উপার্জন করা। আর এই হালাল উপার্জনকে আরবিতে কাসবুল হালাল তথা হালাল উপার্জন বলে। আর ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় নিজের ও ভরণপোষণের জন্য বৈধ পন্থায় উপার্জিত অর্থকে হালাল উপার্জন বলে।
হালাল রুজি ও উপার্জনের গুরুত্বঃ হালাল রুজি উপার্জনের গুরুত্ব সম্পর্কে কুরআনে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন- ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদেরকে আমি যেসব পবিত্র বস্তু দিয়েছি তা হতে আহার কর। আর তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ বিভিন্ন হাদীসে হযরত রাসূল সা. হালাল রুজি অন্বেষণের তাগিদ দিয়েছেন, তাই এটা ফরয ইবাদত। হালাল খাবারই আত্মার সঠিক খাদ্য। আর হালাল উপার্জনের প্রতি গুরুত্বারোপ করে হযরত রাসূল সা. ইরশাদ করেন, ফরয ইবাদত আদায়ের পর হালাল রুজি উপার্জন করা ফরয। (বায়হাকী) তাছাড়া হালাল বস্তু গ্রহণের প্রতি ইংগিত করে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, “তোমরা পবিত্র বস্তু খাও, যা আমি তোমাদেরকে জীবিকারুপে দান করেছি। (সূরা-বাকারা-১৭২) সুতরাং, হালালকে হালাল আর হারামকে হারাম মনে করাই বাঞ্ছনীয়। এর ব্যতিক্রম করা গুরুতর অপরাধ। কারণ আল্লাহ তা’আলা হালাল রুজি অন্বেষণকে ফরয করেছেন। তাছাড়া হাদীস থেকে জানা যায় যে, হালাল রুজি ভক্ষণ না করলে ইবাদত কবুল হয় না। আর ইবাদত কবুল না হলে পরকালে মুক্তিলাভ করা যাবে না। আর পরকালে মুক্তিলাভের জন্য হালাল উপার্জন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোন ভাবেই হেলা বা অবহেলা করা যাবে না। আর যারা হালাল ছেড়ে হারাম পথে উপার্জন করে। তাদের সম্পর্কে রাসূল সা. বলেন, হারাম খাদ্য পরিপুষ্ট যে দেহ, জাহান্নামের আগুনই তার জন্য উপযুক্ত স্থান।
রাসূল সা. আরো বলেন, যার জীবিকা হারাম তার দু’আ কবুল হয় না। হালাল উপার্জনের উপায়ঃ হালাল উপার্জনের বহুবিদ মাধ্যম রয়েছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- দৈহিক শ্রমের বিনিময়ে হালাল কাজ করে তার বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণের মাধ্যমে হালাল উপার্জন করা। সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান- সমূহে নির্দিষ্ট পারিশ্রমিকের বিনিময়ে চাকরি করে হালাল উপার্জন করা যায়। ব্যবসা বানিজ্যের মাধ্যমেও হালাল রুজি উপার্জন করা যায়। কেননা আল্লাহ তা’য়ালা ব্যবসাকে হালাল করেছেন। এছাড়াও পশুপাখি পালন, হাঁস মুরগির খামার প্রতিষ্ঠা, মৎস্য চাষ, বৃক্ষরোপণ, নার্সারি প্রতিষ্ঠা ও নানারকম কুটির শিল্পের মাধ্যমে বৈধ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। সুতরাং, মানুষ যে পেশাতেই থাকুক না কেন তার সুষ্ঠু জীবন পরিচালনার জন্য হালাল উপার্জন করা কর্তব্য। কেননা মানুষের মন যদি দ্বীন ও শরীয়ত মোতাবেক চলার জন্য উদ্বুদ্ধ হয়, তবেই শরীয়তের ওপর সুদৃঢ় থাকা সম্ভব হয়, অন্যথায় নয়। কেননা অন্তঃকরণ হচ্ছে শরীরের চালক। তাই সকলের উচিত নিজ নিজ অন্তঃকরণের পরিশুদ্ধ অর্জনে সচেতন হওয়া। আল্লাহ তা’য়ালা সবাইকে তাওফিক দান করুন।
লেখক: শিক্ষক, জামেয়া রহমানিয়া মৌলভী বাজার।