ইসরাইল-ইরান লড়াই হবে কি ?
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ জুলাই ২০১৯, ২:২০:২৫ অপরাহ্ন
ইতিহাসে নদী ও সমুদ্রে
।। সারওয়ার চৌধুরী ।।
ইসরাইল-ইরান লড়াই হবে কি ?
কিছুদিন পর পর ইরান ও ইসরাইলের নেতারা পর¯পরের বিরুদ্ধে হুমকি-ধমকি দেন। বেশ চড়া বাক্য বিনিময়। রাজনীতির রেটোরিক বলে কথা। রাষ্ট্রের জনগণের মনে চেত লাগে যাতে, জোশ আসে যাতে, বা ভয় লাগে যাতে তেমন কথা।
১৪ জুলাই ২০১৯ ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রি বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ন্যাশনাল সিকিউরিটি কলেজের বক্তৃতায় বলেছেন, “দুনিয়ায় একমাত্র ইসরাইলি আর্মি সব সময় প্রস্তুত ইরানের সাথে লড়তে।” তিনি বলেছেন “ইরানের জন্যে আইডিএফ (ইসরাইলি ডিফেন্স ফোর্স) যথেষ্ট”। ১৭ জুলাই ২০১৯ ইরানের শুরা কাউন্সিলের রাজনীতি শাখার ¯িপকারের সহকারি হোসেন আমির আবদুল্লাহিয়ান দামেস্কে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সাথে সাক্ষাৎ করে বলেন, “ইসরাইল হল ক্যান্সার। মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নষ্ট হচ্ছে ইসরাইলের শাসকের দ্বারা”। তিনি বলেন, “এই অঞ্চলে জায়নবাদীদের কোনো ভবিষ্যত নাই”। হোসেন বলেন, ” আমেরিকার উদ্যোগে নেয়া শান্তি প্রক্রিয়া হল এ অঞ্চলের নতুন মানচিত্র দিবার ষড়যন্ত্র”।
এটা ঠিক যে, এ অঞ্চলে ইসরাইল তার নিজের অস্তিত্বের ভয়ে আর কাউকে নিউক্লিয়ার পাওয়ারের অধিকারী হতে দিতে চায় না। ইরানের নেতৃত্বের তরফ থেকে আগেও বলা হয়েছে ইসরাইল ধ্বংস করবার কথা। পাল্টাপাল্টি গরম কথা বহু বছর ধরেই পর¯পরের মধ্যে চলছে। ইসরাইল ইতিপূর্বে ইরানের বন্ধুদেশ সিরিয়ার ইউরেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট সাইট বোমা ফেলে ধ্বংস করেছে। ইরানেরটাও করবে বলে জানাচ্ছে।
উল্লেখ্য, যায়নবাদিরা ইসরাইল প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পর্যায়ক্রমে আমেরিকার সহায়তা নিয়ে দখলদারি অব্যাহত রেখেছে। সিরিয়ার গোলান মালভূমি নিয়েছে। ওটা দামেস্ককে চাপে রাখবার স্ট্রাটেজিক পয়েন্ট। জেরুসালেমও নিল দখলে। আরবদেশগুলো ও ইরান চেয়ে চেয়ে দেখেছে কেবল। হামাস ও হেজবুল্লাহ ইসরাইলকে ব্যতিব্যস্ত রাখলেও ইসরাইল তার যা করবার করে চলেছে জোরপূর্বক। এই জোর খাটানো হয়তো দূর ভবিষ্যতে তাদের জন্যে খারাপ পরিণাম আনবে।
সেই প্রাচীন প্যালেস্টিনা রাজ্যের সাথেও বনি ইসরাইলের বনিবনা ছিল না। নবি ও বাদশা সুলাইমানের সাথেও লড়াই হয়েছে। বর্তমান গাজা ভূখ-টি ছিল প্রাচীন প্যালেস্টিনা অঞ্চল। এখন আমেরিকা তার নিজের প্রয়োজনেই ইসরাইল, সৌদি আরব ও কাতারকে হাতে রাখে কাতার সৌদি জোটের সাথে না থাকা সত্বেও। কাতারের গ্যাস পাইপলাইন যদি সিরিয়ার ভিতর দিয়ে যেতে দিতো বাশার আল আসাদ, সিরিয়ার এতো দুরবস্থা হতো না। সিরিয়া দেয় নি কারণ ইরানের সাথে মিলে গ্যাস ব্যবসার ভাগ নিতে। ইরানের কাছে বিস্তর গ্যাস। ওদিকে সৌদ রাজবংশ ক্ষমতায় থাকার জন্যেই শিয়া সুন্নির পার্থক্য বেশি করে দেখাচ্ছে। আক্বিদাগত পার্থক্য-যে আছে তাও ঠিক। মিমাংসা করা সহজ না। আরবের থিংক ট্যাংক ও ধনকুবের কেউ কেউ ইহুদি আর আরব মুসলমানের পার¯পরিক হিংসা-বিদ্বেষমুলক মনোভাবের পরিবর্তন চান। পশ্চিম তীরে মুসলমান ও ইহুদিরা পাশাপাশি ঘরে ঘরে থাকছিল কেমনে, এর উপর একটা ভিডিও ডকুমেন্টারি দেখেছিলাম বেশ আগে। দেখা গেল, এক এলাকায় তারা ধর্ম নিয়ে তর্ক করে- কে ঠিক কে বেঠিক, কিন্তু মারামারি করে না।
উল্লেখ্য, ইরানের সাথে স¤পর্ক ঘনিষ্ঠ করবার কথা খুবএকটা বলেন না আরব বুদ্ধিজীবীরা। আরব-ফারেস সাংস্কৃতিক বিরোধও অনেক পুরান। এখন ইসরাইলি ডিফেন্স ফোর্স খুব চৌকষ ও মেধাবি। তারা সর্বাধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত। ইরানের ডিফেন্স সে-তুলনায় অনেক পিছিয়ে। কিন্তু বিশ্ব রাজনীতিতে রাশিয়া চায়না জোটের সাথী ইরানের ইউরেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পে ইসরাইল আঘাত করবার ঝুঁকি নিবে কি? নিলে বড় ধরনের যুদ্ধ হবার সম্ভাবনা আছে। কারণ যায়নবাদি মানে কেবল ইসরাইল না। তারা বিশ্বের অর্থব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ করছে অপ্রত্যক্ষভাবে। মুসলিম বিশ্বের ধনকুবেররাও যায়নবাদিদের সাথে।
লেখকঃ জালালউদ্দিন রুমি গবেষক, অনুবাদক, কবি, আবুধাবি থেকে।