‘এমনিতে নাচুনী বুড়ি তার ওপরে ঢোলের বাড়ি’
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ জুলাই ২০১৯, ২:২১:৪০ অপরাহ্ন
সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান তার এক বক্তব্যে বলেছেন, বিধি অনুযায়ী সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সরল বিশ্বাসে কোনো দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়লে সেটা অপরাধ হবে না। পাঁচদিন ব্যাপী ডিসি সম্মেলনের শেষ দিন গত বৃহস্পতিবার ডিসিদের সাথে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ সংশ্লিষ্ট কার্য অধিবেশন শেষে এক প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিকদের তিনি এ কথাগুলো বলেন।
দেশে দুর্নীতি দমনের দায়িত্বে নিয়োজিত সংস্থার শীর্ষ ব্যক্তির উপরোক্ত বক্তব্যে অনেকে বিস্মিত হয়েছেন। এদেশের মধ্যে খোদ সেতু ও সড়ক মন্ত্রীও রয়েছেন। দেশের সচেতন মহল মনে করেন, এ ধরণের বক্তব্য এমনিতেই দুর্নীতিপরায়ণ সরকারী কর্মকর্তাদের দুর্নীতিমূলক কর্মকান্ডে অধিকতর উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করবে। কারণ বিষয়টি যেমন স্পর্শকাতর তেমনি ব্যাখ্যা সাপেক্ষ।
দেশের প্রচলিত আইন এমনকি বৈশ্বিক আইন অনুসারে, যে কোন অপরাধের ক্ষেত্রে এর মোটিভ বা অভিপ্রায় কী, তা খঁজে বের করার চেষ্টা করা হয়। এর ভিত্তিতেই এর বিচার ও শাস্তির মাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এ ক্ষেত্রে সরল বিশ্বাসে কৃতকর্মের একটি বড়ো ভূমিকা রয়েছে। যদি দেখা যায়, কোন ব্যক্তি সরল বিশ্বাসে দায়িত্ব পালন বা ভালো কাজ করতে গিয়ে তার কাজের ফল অপরের জন্য বা তার প্রতিষ্ঠানের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তবে এজন্য সে ইমপিউনিটি বা দায়মুক্তি পেতে পারে। অর্থাৎ সে তার কৃতকর্মের দায় থেকে রেহাই পেতে পারে। কিন্তু এক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে, সরল বিশ্বাসের বিষয়টি প্রমাণ করতে হবে।
বিষয়টি স্পর্শকাতর বা নাজুক প্রকৃতির এজন্য যে, যে কোন অপরাধী বা অপরাধপ্রবণ ব্যক্তি দুর্নীতি বা অপরাধমূলক কাজে যাতে সরল বিশ্বাসের মতবাদকে ব্যবহার করতে না পারে, সেদিকে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ বিশেষভাবে বিচার বিভাগকে কড়া নজর রাখতে হয়। এ কথা স্বীকৃত সত্য যে, দেশের অধিকাংশ সরকারী বিভাগ ও সংস্থার কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ বিদ্যমান। তাদের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণসহ অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এদের প্রতিরোধ ও দমনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দুদক অর্থাৎ দুর্নীতি দমন কমিশন। কিন্তু দেশের বিভিন্ন বিভাগ ও সংস্থায় দুর্নীতির এমন জোয়ারের বিষয়টি জানা সত্বেও দুদুক চেয়ারম্যান যদি তাদের ব্যাপারে বিন্দুমাত্র প্রশ্রয়ের সুরে কথা বলেন বা বক্তব্য রাখেন, তবে তারা আশকারা প্রশ্রয় পেয়ে তাদের দুর্নীতিমূলক কর্মকান্ড দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে, হয়ে ওঠতে পারে অধিক বেপরোয়া।
বলা যায়, এ ধরণের বক্তব্য ‘এমনিতে নাচুনী বুড়ি তার ওপরে ঢোলের বাড়ি’ হয়ে দেখা দিতে পারে। অনেকের মতে, সরল বিশ্বাসে দুর্নীতিতে জড়ালে অপরাধ হবে না-মর্মে তার এই বক্তব্য পরিস্থিতি, পরিবেশ ও সময়ের প্রেক্ষাপটে দেশে দুর্নীতিবাজদের উৎসাহিত করবে। দুর্নীতি করে সেটাকে সরল বিশ্বাসে করেছে বলে সাফাই গাইবে, অজুহাত কাড়া করবে।
আমরা আইনের এই সুক্ষ্ম বিষয় নিয়ে দুদক চেয়ারম্যানের এ ধরণের অসময়োপযোগী ও ব্যাখ্যা সাপেক্ষ বক্তব্যের ঢালাও প্রকাশকে কোনভাবেই সমর্থন করতে পারি না। যখন দুর্নীতির জোয়ার প্রতিরোধে কঠোর হুঁশিয়ারী, বক্তব্য ও পদক্ষেপ প্রয়োজন, তখন দুর্নীতিবাজদের দায়মুক্তি ও বাঁচানোর লক্ষ্যে প্রদত্ত কোন বক্তব্য দেশ ও জনগণের কল্যাণ যে বয়ে আনবে না, এ কথা আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে পারি।