সুনামগঞ্জে বজ্রাঘাতে চার বছরে নিহত ১০২
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ জুলাই ২০১৯, ১:০০:৪৯ অপরাহ্ন
জাহাঙ্গীর আলম ভুঁইয়া :
বজ্রাঘাতের আতঙ্কে আছে সুনামগঞ্জের হাওরবাসী। সুনামগঞ্জের ১১টি উপজেলায় বিভিন্ন গত বছরের ব্যবধানে বজ্রাঘাতে ১০২ জন নিহত হয়েছে। গত ১৩ জুলাই তাহিরপুর উপজেলায় দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের মানিকখিলা গ্রামের বৌলাই নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতে মানিকখিলা গ্রামের হারিদুল (৪৫) ও তার ছেলে তারা মিয়ার (১০) মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ১০ জুলাই জেলার জামালগঞ্জ উপজেলায় একটি স্কুল থেকে সাবিতুল নিজ সন্তানদেরকে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে হেলিপ্যাড মাঠে বজ্রাঘাতে মারা যান বাবা সাবিতুল ও পুত্র অন্তর।
সুনামগঞ্জের হাওরপাড়ের অনেকেই আশঙ্কা করছেন হাওরাঞ্চলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে। কারণ বর্তমান সময়ে বন্যায় ঝুঁকি ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মাঝেই তারা স্কুলে যাচ্ছেন হাওর পাড়ি দিয়ে। তারা বিশেষ বিবেচনায় বন্যা ও দুর্যোগকালীন সময়ে বিদ্যালয়গুলো বন্ধ রাখার দাবী জানান।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১৫-১৭ সাল পর্যন্ত জেলার দিরাইয়ে ১৭ জন, তাহিরপুরে ৯ জন, শাল্লায় ৮ জন, সুনামগঞ্জ সদরে ৭ জন, ধর্মপাশায় ৭ জন, দক্ষিণ সুনামগঞ্জে ৬ জন, জগন্নাথপুরে ৪ জন, দোয়ারাবাজার ৪ জন, ছাতকে ২ জন, জামালগঞ্জে ২ জন, বিশ্বম্ভরপুরে ১ জনসহ মোট ৬৮ জন বজ্রপাতে মারা যান। এর মধ্যে ২০১৫ সালে ৩৭ জন, ২০১৬ সালে ২০ জন ও ২০১৭ সালে ১১ জন ও ২০১৮ সালে বজ্রপাতে ২৪ জনসহ মোট ৯২ জনের মৃত্যু হয়। চলতি বছরের ১৫ জুলাই পর্যন্ত বজ্রাঘাতে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। বজ্রপাতের আহত হয়েছে প্রায় অর্ধশত ব্যক্তি।
সুনামগঞ্জে বজ্রপাত বেড়ে যাওয়া জন্য মানবসৃষ্ট পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক পরিবেশের পরিবর্তনকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। খোলা মাঠে ও হাওরে মাছ ধরার কাজে বেশি সময় কাটান হাওরবাসী। আবহাওয়া জ্ঞান সম্পর্কে অসচেতনতা ও উন্মুক্ত হাওর এলাকায় গাছপালার অভাব এবং সীমান্তবর্তী মেঘালয় পাহাড়ের কারণে বজ্রপাত বেশি হচ্ছে।
হাওরপাড়ের কৃষক জহিরুল ইসলাম, বাবলু মিয়াসহ সচেতন এলাকাবাসীর সাথে কথা বললে তারা জানান, সুনামগঞ্জের শেষ প্রান্তে মেঘালয় পাহাড়ের অবস্থান। তাই স্থায়ীভাবে তৈরী মেঘ ও জলীয় বাষ্প সরাসরি পাহাড় অতিক্রম করতে পারে না। ফলে আকাশে একটি গভীর কালো মেঘমালার ফ্রেমের তৈরী হয়ে বজ্রপাত হয়। বজ্রপাতে যারা মারা যান তাদের বেশির ভাগই হাওর এলাকার প্রান্তিক ও অর্থনৈতিক ভাবে অস্বচ্ছল পরিবারের লোকজন। তারা আরো জানান, আবহাওয়া ও বজ্রপাতের তথ্য না পাওয়া এবং সচেতনতার অভাবে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা। তাই দ্রুত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেবার দাবী জানান হাওরবাসী।
কৃষকসহ সর্বস্তরের জনসাধারনের জীবন রক্ষার্থে হাওরাঞ্চলে বজ্রপাত নিরোধন যন্ত্র স্থাপন করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবী জানিয়ে তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, পূর্বে এত বজ্রপাত হত না। হলেও বজ্রাঘাতে এভাবে মানুষ মরা যেত না। বজ্রপাতের মূল কারণ প্রাকৃতিক পরিবেশের পরির্বতন।
সুনামগঞ্জ স্থানীয় সরকার বিভাগ উপ-পরিচালক এমরান হোসেন বলেন, হাওর এলাকায় তালগাছসহ বিভিন্ন প্রকার গাছ লাগিয়ে বজ্রপাতে প্রতিরোধে আমাদের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ইদানিং বজ্রপাতে বেশি মৃত্যু হওয়ার কারণ হলো ধান বিলম্বে পরিপক্ক হওয়ায় পুরো বজ্রপাত মৌসুমে হাওরের খোলা আকাশের নিচে কৃষকসহ সর্বস্থরের মানুষ বেশি অবস্থান করেন এবং কোনও কোনও সময় বজ্রাঘাতে মারা যান। বজ্রপাত ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনার জন্য সবার সচেতনতা এবং সর্তক থাকতে হবে।