সিলেট কি ‘নোংরা নগরী’ই থেকে যাবে
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ জুলাই ২০১৯, ৩:৪৪:৫৯ অপরাহ্ন
গতকাল দৈনিক জালালাবাদে ‘বাতির নীচে অন্ধকার’ শীর্ষক একটি ক্যাপশন নিউজ ছাপা হয়। এতে বলা হয়েছে, যে ভবনে বসে কর্মকর্তারা সিলেট নগরীকে পরিচ্ছন্ন রাখার লক্ষ্যে কাজ করেন সেই নগর ভবনের দু’পাশে ময়লা আবর্জনার স্তূপ। আবর্জনার দুর্গন্ধে নগরের আশপাশের ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। সংবাদটি প্রকাশের পর গতকাল সকাল থেকেই কর্তৃপক্ষ সক্রিয় হয়ে ওঠেন এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার ময়লা আবর্জনা পরিষ্কারে লোকবল নিয়োগ করেন। এটা একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।
তা সত্বেও দীর্ঘদিন ধরে সিলেট নগরীর ললাটে ‘নোংরা নগরী’ ও ‘অপরিচ্ছন্ন নগরী’ এই তকমা লেগে আছে। অর্থাৎ উন্মুক্ত পুঁতিগন্ধময় ডাস্টবিন নিয়ে চলছে সিলেট নগরীর প্রাত্যহিক জীবন। নগরবাসীকে কখনো নাকে রুমাল চেপে, কখনো নিঃশ্বাস বন্ধ করে এসব উন্মুক্ত দুর্গন্ধযুক্ত ডাস্টবিন এলাকা অতিক্রম করতে হচ্ছে। ইতোমধ্যে রিকাবী বাজারের কেন্দ্রীয় ময়লা ভাগাড়ের আধুনিকায়ন হওয়ায় এবং মীরাবাজারের রাস্তার পার্শ্ববর্তী উন্মুক্ত ডাস্টবিনটি ব্যক্তি উদ্যোগে অর্থাৎ মার্কেট নির্মাণের ফলে অপসারিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দা, ব্যবসায়ী ও চলাচলকারী লোকজন অনেকটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন। উপশহরেও পাকা ময়লাঘর তৈরী হওয়ায় এলাকাবাসী হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন।
কিন্তু গুটিকয়েক স্থানে ডাস্টবিন সমস্যার সমাধান হলেও গোটা নগরী জুড়ে এখনো ছড়িয়ে আছে বহু উন্মুক্ত ডাস্টবিন ও ময়লা আবর্জনা ফেলার স্থান। দেখা যাচ্ছে, এসব ময়লা আবর্জনা ডাস্টবিন উপচে চারপাশে রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ছে। অনেক স্থানে গাড়ির চাকার আঘাতে এগুলো আশপাশ ছাড়িয়ে দূরবর্তী স্থান পর্যন্ত বিস্তৃত হচ্ছে। শুকনো মৌসুমে ধূলোবালির সাথে ছড়াচ্ছে রোগজীবাণু। লোকজন শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে এগুলো গ্রহণ করে আক্রান্ত হচ্ছেন নানা রোগে। অনেকের মতে, বিভিন্ন সময়ে নগরীতে ভাইরাস জ্বরসহ নানা ধরণের মৌসুমী রোগব্যাধি ছড়ানোর পেছনেও এ ধরণের পুঁতিগন্ধময় উন্মুক্ত ডাস্টবিনগুলোর ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। আরো দেখা গেছে, রাস্তার পার্শ্বে যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলার দরুন এসব ময়লা নিকটস্থ নালা নর্দমায় গিয়ে পড়ে। ফলে নালা নর্দমা বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। জন্ম নেয় মশককূল।
এছাড়া যত্রতত্র পলিথিন ব্যাগসহ সিনথেটিক পদার্থের বর্জ্য ফেলার দরুন মাটির উর্বরতা শক্তি যেমন নষ্ট হচ্ছে তেমনি ভূগর্ভে এক ধরণের ভ্যাকুয়াম বা শূন্যতা সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে এসব স্থানে বাড়িঘর নির্মাণ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্য মাটিতে না মিশে দীর্ঘকাল মাটির নীচে থেকে যাওয়ায় পরিবেশ দূষণসহ ভূগর্ভের গতিপ্রকৃতি পরিবর্তনের আশংকা সৃষ্টি হয়েছে।
বলাবাহুল্য, দেশের পর্যটন নগরী হিসেবে সিলেটের একটি বিশেষ স্থান ও মর্যাদা রয়েছে। এর মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি ঐতিহাসিক স্থাপনা, সুউচ্চ ইমারত মার্কেট ও অন্যান্য স্থাপনা দেশ বিদেশের পর্যটক দর্শনার্থীদের কাছে আকর্ষণীয় বিষয়। কিন্তু নগরীর নোংরা অপরিচ্ছন্ন দশা এর ভাবমূর্তির পরিপন্থী। শুকনো মৌসুমে ধুলোবালিতে ও বর্ষায় কাদায় মাখামাখি হয়ে এর সকল সৌন্দর্য বিলীন হওয়ার উপক্রম। ময়লা আবর্জনার উন্মুক্ত ডাস্টবিনগুলো এজন্য বিশেষভাবে দায়ী। আমরা ঐতিহ্যবাহী পর্যটন নগরী সিলেটের এসব উন্মুক্ত ডাস্টবিন অপসারণ করে নগরীর বিভিন্ন স্থানে স্বাস্থ্য সম্মত ‘বিন’ স্থাপন এবং সিলেটকে একটি অতি পরিচ্ছন্ন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়রসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।