রেস্টুরেন্টে রমরমা ব্যবসার আড়ালে পচাঁবাসি খাবার!
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ জুলাই ২০১৯, ৯:১২:৫৬ অপরাহ্ন
ক’দিন পরপরই অভিযান চলে, হয় জেল জরিমানাও। পচাঁবাসি খাবার আর
বিল পরিশোধ নিয়ে প্রতিদিনই কাউন্টারে ক্রেতা-ম্যানেজার বাকবিতন্ডা
রাজু আহমেদ ::
দুপুর আর রাত সব সময় একটা ভীঢ় লেগেই আছে। আর লোক সমাগম দেখলে মনে হয় সবাই যেন নিমন্ত্রণ খেতে এসেছে। কেউ আসছেন মৌলভীবাজার থেকে গাড়ি রিজার্ভ করে আবার কেউ আসছেন সুনামগঞ্জ কিংবা হবিগঞ্জ থেকে। টেবিলে টেবিলে মানুষের ঝটলা। একদল বসে খাচ্ছেন তো আরেকদল টেবিলের পাশে ঠায় দাড়িয়ে আছেন। আর খাবার সরবরাহের কাজে নিয়োজিতদের এদিক ওদিক ছোটাছুটি আর দৌড় জানান দিচ্ছে এই মনে হয় সব শেষ হয়ে গেল। নিজেদের হাড়ভাঙ্গা মেহনত আর বাড়তি আয়ের কষ্টার্জিত অর্থ ব্যয় করে এমন প্রতিযোগীতাপূর্ণ খাবার গ্রহনের চিত্র নগরবাসীর দৃষ্টি কাড়ে প্রতিদিন।
হ্যাঁ, সিলেট মহানগরীর জিন্দা বাজার ও জল্লার পারের কয়েকটি খাবার হোটেলে প্রতিদিনের চিত্র এটি। কোন পরিবেশ থেকে কিভাবে খাবারটি টেবিলে নিয়ে আসছে সেদিকে বিন্দু মাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই ক্রেতাদের। যা ই টেবিলে আসছে তা খেয়েই অসহায়ের মতো বিল পরিশোধ করে যাচ্ছেন তারা। অপরিচ্ছন্ন আর নোংরা পরিবেশ থেকে সরবরাহকৃত সুস্বাদু আর মুখরোচক এসব খাবার খেয়ে কত না রোগবালাইয়ের শিকার হচ্ছেন তার কোন পরিসংখ্যান নেই। চিকিৎসকরা বলছেন, বর্তমানে মানবদেহে নানা অসুখবিসুখের অন্যতম কারণ হচ্ছে বাইরের খাবার গ্রহন। বিশেষ করে হোটেল রেস্টুরেন্টের খাবার। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে বেশির ভাগ হোটেলে খাবার তৈরির আভিযোগ করে তারা এসব হোটেলের খাবার গ্রহন থেকে বিরত থাকার আহবান জানিয়েছেন।
খোজঁ নিয়ে জানা গেছে, সিলেটের খাবার হোটেলের ব্যবসা এখন সম্পুর্ণ জিন্দাবাজার কেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। নগরীর বিভিন্ন জাযগায় গড়ে ওঠা অনেক নামকরা অভিজাত হোটেল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এর কারণ হিসেবে বন্ধ হয়ে যাওয়া কয়েকজন হোটেল মালিক বলছেন, সস্তা খাবারের নামে পচাবাসি পণ্যের সাথে নানা প্রকারের মসলা আর মেডিসিন প্রয়োগ করে এরা নি¤œমানের খাবার কে সুস্বাদু করে ক্রেতাদের ঠকাচ্ছে প্রতিদিন। তারা জানান, কাঁচা মাংস আর রান্না করা তরকারী একই ফ্রিজে রেখে ক্রেতাদের খাওয়ানো হয়। বোকার মত ক্রেতা সাধারণ এমন খাবারই ঘিলছেন প্রতিদিন। বিএসটিআই বলছে, কদিন পর পরই তারা অভিযান পরিচালনা করে পচাঁবাসি খাবারের সন্ধান পান আর জরিমানা করেন । কিন্তু পরবর্তিতে আবার এই একই চিত্র দেখা যায়। তার মানে এরা প্রতিদিনই কোন না কোন বাসি খাবার পরিবেশন করছে ভোক্তাদের কাছে।
সম্প্রতি সিলেটের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের একজন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট এর নেতৃত্বে পুলিশ র্যাব আর বিএসটিআই যৌথভাবে এক আভিযান করে সিলেট নগরীর হোটেল রেষ্টুরেন্ট এ। এসময় পানসি পাচঁভাই ভোজন বাড়ি খ্যাত বেশ কয়েকটি হোটেলে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে পচাঁবাসি খাবার পরিবেশনের দায়ে জরিমানা করা হয়েছে। শুধু জরিমানা নয় পাঁচভাই হোটেলের ম্যানেজারকে আটক করে জেলে পাঠানো হয়। কিন্তু তার পরও হোটেল ওয়ালারা সতর্ক হয়নি। প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন ক্রেতা রেস্টুরেন্টের কাউন্টারে গিয়ে দেখা যায় অভিযোগ করে যাচ্ছেন পচা আর বাসি খাবারের। এ ছাড়াও বিল পরিশোধ নিয়ে প্রায়ই দেখা যায় বাকবিতন্ডা হচ্ছে। নগরীর রামেরদীঘির পারের বাসিন্দা এমদাদুর রহমান তার আমেরিকা প্রবাসী পরিবারকে নিয়ে পানসি হোটেলে খেতে গিয়ে এমন বিড়ম্বনায় পড়েন সম্প্রতি। তার অভিযোগ, হোটেল কর্তৃপক্ষ পচা মোরগ রান্না করে তাদের পরিবেশন করে অতিরিক্ত বিল আদায় করেছে তার কাছ থেকে। নানা ঝক্কি ঝামেলার কারণে তিনি তখন ভোক্তা অধিকার আইনের শরনাপন্ন হননি।