ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে বন্দরবাজার!
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ নভেম্বর ২০১৯, ৩:০১:০০ অপরাহ্ন
এ টি এম তুরাব :
বিভাগীয় শহর সিলেটের ব্যস্ততম এলাকার মধ্যে বন্দরবাজারের কোর্টপয়েন্ট অন্যতম। এর আশপাশেই রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আদালতপাড়া, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারে কার্যালয়, সার্কিট হাউজসহ সরকারী ও বেসরকারী অফিস। ভোর থেকে এখানে শুরু হয় কর্মজীবী মানুষের পদচারণা। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে মানুষের ছোটাছুটি। আবার সন্ধ্যার পর থেকে অফিস বা কর্মক্ষেত্রে থেকে ঘরমুখো মানুষের ভিড়ে লেগে থাকে জটলা।
এলাকাটি বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। দিন দিন ব্যস্ততম এই এলাকা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। বাড়ছে অপরাধ প্রবণতা। রাত বিরাত নেই সব সময়ই অপরাধীদের আনাগোনা আছে। শুধু বন্দর বাজার নয়, নগরীর বিভিন্ন জনবহুল এলাকাগুলো রাতের রাজপথে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ভয়ঙ্কর অপরাধী চক্র। যারা রাতের যাত্রীবেশী ছিনতাইকারী ও ঝাপটা পার্টি হিসাবে পরিচিত।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নগরীতে কর্মব্যস্ত মানুষের নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছতে অন্যতম সমস্যা হলো যানবাহনের। আর এটি কাজে লাগিয়ে নগরীতে ছিনতাইয়ের ফাঁদ পাতছে বেশ কিছু সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র। তারা যাত্রীদের সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে। তবে পুলিশ বলছে আগের তুলনায় এ ধরনের অপরাধীদের সংখ্যা অনেক কমে এসেছে। হাতেগোনো কয়েকটি ঘটনা প্রতিবেদকের কাছে এলেও বেশির ভাগ ভুক্তভোগী ঝামেলা এড়াতে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন না। আবার ভয়ে ঘটনাটি সংবাদকর্মীদের কাছে বলা থেকেও বিরত থাকেন অনেকেই।
সুত্র জানায়, বন্দর বাজারের উত্তর দিকে শাহজালালের মাজার, এয়ারপোর্ট, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া যায়। পূর্ব দিকে সরকারী ও বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বিপনীবিতান ও নগরী থেকে বাহির হওয়ার রাস্তা। পশ্চিমে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, আদালত পাড়া, দক্ষিণে পাইকারী বাজারের আড়ৎ, সার্কিট হাউজ। তাই বন্দর বাজার বিভাগীয় শহর সিলেটের কেন্দ্রস্থল হিসেবেও পরিচিত লাভ করেছে। এ জন্য সব সময় মানুষের ভিড়ে ব্যস্ত থাকে। এই এলাকাটিকে ঘিরে দিন দিন বাড়ছে অপরাধ ও অপরাধীদের উৎপাত। মহানগরীতে চালক-যাত্রীবেশী ছিনতাইকারী, পকেটমার ও ঝাপটা পার্টির অন্তত শতাধিক সক্রিয় সদস্য রয়েছে। এরা মহানগরীতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে তাদের অপকর্ম চালাচ্ছে। এরা সিএনজি অটোরিকশা চালক বা যাত্রী সেজেও ধোঁকা দিচ্ছে মানুষদের। সিএনজি যাত্রী সেজে পাশে বসে খোশগল্পে ঘনিষ্ঠ হয়ে গন্ধ শুঁকিয়ে ধান্ধা লাগাচ্ছে বা অজ্ঞান করছে। অটোরিকশায় তুলে তারা তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করছে। সব হাতিয়ে নেওয়ার পর যাত্রীকে গাড়ি থেকে রাস্তার পাশে ফেলে দিয়ে সটকে পড়ে। প্রায় প্রতিদিনই তাদের পাতানো ফাঁদে পা দিচ্ছে কেউ না কেউ। মোবাইল-মানি ব্যাগ হারিয়ে বাসায় ফিরতে হচ্ছে মানুষদের।
শাহজালাল উপশহর এলাকার বাসিন্দা ব্যাংক কর্মকর্তা বদরুল ইসলাম জালালাবাদকে বলেন, কয়েক দিন আগে সন্ধ্যার সময় বন্দর বাজার কোর্ট পয়েন্ট থেকে বাসায় ফিরতে সিএনজিতে উঠেন। গাড়ী ওঠেও তিনি মোবাইল ফোনটি পকেটে ছিলো। তিনি উপশহর পয়েন্টে যাওয়ার পর গাড়ী থেকে নেমে যান। এরপর পকেটে হাত দিলে দেখতে পান মোবাইলটি আর নেই। বদরুলের মতো অনেকেই প্রতিদিন মোবাইল মানি ব্যাগ হারাচ্ছেন। তিনি বলেন, বন্দরবাজার এলাকা দিন দিন ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। বাড়ছে চুরি-ছিনতাইয়ের মতো ঘটনাও। বিশেষ করে এসব ঘটনা ঘটছে কোর্টপয়েন্ট, কুদরত উল্লাহ পয়েন্ট, তালতলা, সার্কিট হাউজ, ক্বীনব্রিজ, সুরমা মার্কেট, জেল রোড এলাকায়।
এছাড়াও এসব চক্রের সদস্যরা দাবিয়ে ভেড়াচ্ছে হাওয়াপাড়া, জিন্দাবাজার, মির্জাজাঙ্গাল, লামাবাজার, সাগরদিঘীর পার পূর্ব জিন্দাবাজার, বারুতখানা, নয়াসড়ক, কুমারপাড়া, উপশহর পয়েন্ট, হুমায়ুন রশীদ চত্বর, বাস টার্মিনাল, মুক্তিযোদ্ধা চত্বরসহ প্রভৃতি এলাকায় সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ঝাপটা পার্টির সদস্যরা। ঝাপটা পার্টির সদস্যরা এসব এলাকাকেই তাদের টার্গেটে নিয়েছে।