বই পড়া শ্রেষ্ঠ শখ
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ মার্চ ২০২০, ৪:৫৮:১৫ অপরাহ্ন
- স্নিগ্ধা রায়
বই পড়াকে যদি শখ হিসাবেও দেখা হয়, তবে বলতে হবে সেটা মনুষ্য জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ শখ। বই পড়ে ইহলৌকিক নানা জাতীয় লাভের আশা করা দুরাশা। এমনকি বই পড়লেই মানুষ নীতিবাদী হয়ে একটা সমাজকে রক্ষা করবে এমনও নয় তবে বইপড়ায় থেকে যে সংস্কৃতি তৈরি হয় সেটা মানুষকে রুচিবান করে তোলে। এই রুচিশীলতা মানবজীবনের অন্যতম কৃত্য। এই রুচির অভাবের জন্যই আমরা এত অসহিষ্ণু হয়ে পথে-ঘাটে, পার্লামেন্টে যে কান্ড করি তা শুধু হাস্যকরই নয়, রুচিহীন বলেই তা একটা জাতির জীবনে গভীর সংকট সৃষ্টি করে। বইপড়ায় অভ্যস্ত হলে একজন মানুষ যে আনন্দের আস্বাদ পাবে, তা তার মনকে শুধু সজীব করে রাখবে, তা নয় ভালবাসতে শেখাবে প্রকৃতিকে, মানুষকে, তার নিজের কল্পনা শক্তি ক্রমাগত বাড়তে থাকবে।
ফলত জগতকে নিয়ে, জীবনকে নিয়ে নতুন সৃষ্টিময় জগৎ তৈরি করতে উৎসাহিত হবে সেই পাঠক। এইভাবে একটা জাতির জীবনে বইপড়া সংস্কৃতির অঙ্গ হয়ে উঠলে সেই জাতি শুধু সহনশীল রুচিশীল হয়ে উঠবে তাই নয়, পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে তুলতে বহুল পরিমাণে সাহায্য করবে।
বই পড়া যে শিক্ষিত মানুষের একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য, সে বিষয়ে দেশে-বিদেশে কারোরই দ্বিমত থাকার কথা নয়। একালেই অনেক বড় লোকের বাড়িতে মেহগনির তাকে বই সুন্দর করে সাজিয়ে রাখাকে অনেকে কটাক্ষ করেন কিন্তু বাড়িতে বই রাখা যদি ফ্যাশন হয় তবে সেই ফ্যাশনকে আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে মেনে নেব।
আজকের পৃথিবীতে একথা সবাই জেনে গেছে, যে জাতি যত বেশি বই পড়ে সে জাতি তত বেশি শিক্ষিত, সংস্কৃতিবান। এ কথা তো জানা যে, কাব্যচর্চা এক নির্মল আনন্দ। বৃহত্তরভাবে বলা যায়, সাহিত্যচর্চা না করলে সে আনন্দ থেকে মানুষ বঞ্চিত থাকে। তার ভেতরকার সুকুমার বৃত্তিগুলো বিকশিত হতে পারে না। মানবিকতার প্রতি টান রুদ্ধ হয়ে যায়।
বই পড়ার জন্য পৃথিবীর সব দেশেই লাইব্রেরি গড়ে ওঠে। পাড়ায় পাড়ায় যেমন লাইব্রেরি থাকে তেমনি বৃটিশ মিউজিয়াম বা আমাদের ন্যাশনাল লাইব্রেরি, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ গ্রন্থাগার কিংবা এশিয়াটিক সোসাইটির মতো বৃহৎ লাইব্রেরিও গড়ে উঠে। ব্যক্তিগতভাবে বই কিনে নিজের মতো লাইব্রেরি গড়ে তোলা অনেকেরই শখ। এই লাইব্রেরিকে অধ্যাপক আবুল ফজল বলেছেন, ‘মনের হাসপাতাল’। তিনি আরো বলেছেন, এর স্থান স্কুলের অনেক ওপরে। এ কথা সহজে জানা, পাশ হওয়া মানে শিক্ষিত হওয়া নয়। আর সুশিক্ষিত মানেই স্বশিক্ষিত। মনকে সতেজ রাখে সাহিত্য পাঠ। স্বাভাবিকভাবেই নতুন প্রজন্মকে গ্রন্থাগারমুখী করে তোলা দেশের সচেতন নাগরিকদের একটা সামাজিক কর্তব্য।
বইপড়া জ্ঞানচর্চার সহায়ক, বিশ্বজগতের নানা আবিষ্কার, মানুষের উদ্ভব ও ক্রমবিবর্তনের রোমাঞ্চকর কাহিনী যে-কোন পাঠককে মানব প্রজাতি সম্পর্কে আগ্রহী করে তার সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক স্থাপনে তাঁকে তুলবে রুচিশীল এক বিশিষ্ট নাগরিক রূপে। এইভাবে বইপড়া শুধু একজন পাঠককে জ্ঞানী বা প্রাজ্ঞ করে তুলবে না, তাকে এমন এক জগতের সঙ্গে পরিচিত করবে, যে জগৎটি সারা বিশ্বের রুচিশীল মানুষের ভালোবাসায় পরিপূর্ণ।
একজন রুচিশীল নাগরিক হিসাবে আমাদের সামাজিক দায়িত্ব নতুন প্রজন্মের মধ্যে বইপড়ার আকর্ষণ তৈরির সমস্ত সুযোগ সৃষ্টি করে রাখা। এটা শুধু মুখের ভাষাতে হবে না, নিজেদের তা করে দেখাতে হবে। আর তখনই আমরা আমাদের একটা সুস্থ-সবল জাতি হিসাবে গড়ে তুলতে পারব।