করোনাভাইরাস ও ষড়যন্ত্র তত্ব
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ মার্চ ২০২০, ১১:২৪:০৭ অপরাহ্ন
- সারওয়ার চৌধুরী
করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী যে-গতিতে ছড়াচ্ছে, তার চেয়ে অনেক বেশি গতিতে ছড়ানো হচ্ছে গুজব ও ষড়যন্ত্র তত্ব। আমেরিকার প্রভাবশালী পত্রিকা ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ বিশ্ববাসীকে জানালো, করোনাভাইরাস নিয়ে তিন সপ্তাহে প্রায় দুই মিলিয়ন টুইট হয়েছে এই মর্মে যে, চীনের দ্বারা বায়োলজিক্যাল অস্ত্র বানানোর প্রয়াস থেকে এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব। খবরে প্রকাশ, বিশ্বে করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা লক্ষাধিক শতাধিক দেশে, আর গুজব ও ষড়যন্ত্র তত্ব ছড়িয়েছে মিলিয়ন মিলিয়ন। এতে আতংক ব্যবসায়ীদের লাভ হয়, আর ভয়াক্রান্ত মানুষ জরাগ্রস্ত হয়, মারাও যায় আনপ্রিডিক্টেবল পেনিক এ্যাটাকে।
সোশ্যাল মিডিয়া ও মূলধারার গণমাধ্যমেও আরো নানা ধরনের গুজব দম-ধাপ্পাবাজি দেখা যাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেডরস এডহেনোম ষড়যন্ত্র তত্বের প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘আমাদেরকে কোভিড-১৯ প্রতিরোধ প্রয়াসের পাশাপাশি ভুল তথ্য, ষড়যন্ত্র তত্ব মোকাবেলা করতে হচ্ছে। কারণ রোগটি প্রতিরোধের প্রয়াসকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে গুজব-জল্পনা ইত্যাদি।
আল জাজিরা রিপোর্ট করেছে, আমেরিকা অস্ট্রেলিয়া মালয়েশিয়াসহ আট দেশের সাতাশ বিজ্ঞানী ইতোমধ্যে করোনাভাইরাস নিয়ে ষড়যন্ত্র তত্ব ছড়ানোর নিন্দা জানিয়েছেন। তারা বলেন, এ ভাইরাসের প্রাকৃতিক অরিজিন নাই-এমন ষড়যন্ত্র তত্ব পক্ষপাতদুষ্ট গুজব। এমন খামাখা প্রচার মানবজাতিকে বিপন্ন করছে। এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের কাছে এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ও ধরণ সম্পর্কে পরিস্কার উত্তর নাই।
ষড়যন্ত্র তত্ব হল, কোনো প্রতিষ্ঠান বা গোষ্ঠী বা দেশ বিশ্ব নিয়ন্ত্রণ বা ধ্বংসের প্রয়াস চালাচ্ছে, তাই তাদের বিরুদ্ধে কল্পিত বিশ্বাস চাপিয়ে দেয়া, মানুষকে আতংকিত করা।
ডানা এ্যাশলি নামের একজন ইউটিউবার, যার রয়েছে লাখ লাখ ফলোয়ার ফেসবুকসহ, তিনি একটি ভিডিও-তে ব্যাখ্যা করলেন এই মর্মে যে, চীনের উহান শহরে ৫জি মোবাইল টেকনোলজি ছড়িয়ে পড়ায়, সেখান থেকে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব হয়েছে। উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একটি ওয়েবসাইট চালু করেছে ষড়যন্ত্র তত্ব ও গুজব মোকাবেলার জন্যে। তারা বিশ্ববাসীকে জানাচ্ছে অপ্রমানসিদ্ধ কথা যেন কেউ বিশ্বাস না করেন।
ষড়যন্ত্র তত্বের ইতিহাস অনেক পুরোনো। চৌদ্দ শতকে ইউরোপে মহামারি প্লেগের প্রাদুর্ভাব হলে, কী কারণে এ মহাবিপদ এলো কেউ বুঝতে পারছিলেন না। শুরু হলো গুজব ও ষড়যন্ত্র তত্ব ছড়ানো। বলা হলো, ইহুদীরা দুনিয়ার নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্যে প্লেগের বিষ ছড়িয়েছে। একইভাবে ১৯১৮-২০, দুই বছরে, ‘স্পেনিশ ফ্লু’ নাম দেয়া রোগে লাখ লাখ লোক মারা গিয়েছিল। ১৯৩০ সাল পর্যন্ত ঐ প্লেগের কারণ অজানা ছিল। কিন্তু ষড়যন্ত্র তত্ব ছড়ানো হয় যে, জার্মান সৈন্যরা অস্ত্র হিসাবে পেথাগন ব্যবহার করায় প্লেগ মহামারি আসে। গত শতকের আশির দশকে এইডস নিয়েও ষড়যন্ত্র তত্ব ছড়িয়েছিল সোভিয়েত গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবি। বলেছিল, এইডস আমেরিকার বানানো বায়োলজিক্যাল মারনাস্ত্র। তারা বলে ফোর্ট ডেট্রিকে বন্দীদের মাঝে আমেরিকা পরীক্ষামুলক ব্যবহার করেছে। অবশ্য তখন আমেরিকা বলছিল আফ্রিকা থেকে এইডসের প্রাদুর্ভাব।
এভাবে যুগে যুগে দেশে দেশে রোগ ছড়ানোর সাথে সাথে অধিক দ্রæত গতিতে ছড়ানো হয় গুজব ও ষড়যন্ত্র তত্ব। বেশিভাগ মানুষ এতে বিভ্রান্ত হয়, আতংকিত হয়, জরাগ্রস্ত হয়। সচেতন যারা তাদের উচিত বিভ্রান্তি, গুজব ও ষড়যন্ত্র তত্বের ব্যাপারে বিশ্ববাসীকে জানানো।
লেখক: সহকারী সম্পাদক, দৈনিক জালালাবাদ