ঘড়া ভরা মোহর
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ মার্চ ২০২০, ৪:০৯:২৭ অপরাহ্ন
- আঞ্জুমন আরা
মিদারের একমাত্র ছেলে হীরা। ছেলেটি ছিলো লম্পট ও বদ মেজাজি। জমিদার তার অযোগ্য ছেলের কর্মকান্ডে বিরক্ত হয়ে একসময় এক কঠিন সিদ্ধান্তে নিলেন তার অর্জিত ধন সম্পদ তিনটি ঘড়ায় ভরে প্রাসাদের পিছনে নির্জন জায়গায় মাটির নিচে লুকিয়ে রাখলেন। নির্দিষ্ট জয়গাটি চিহ্নিত করার জন্য তার উপরে একটি চারা রোপণ করলেন। বয়স বাড়ার সাথে সাথে জমিদারের চিন্তাশক্তি ও শাসন ক্ষমতা লোপ পেলো। এক সময় তিনি মারা গেলেন। ছেলে হীরার অলসতা ও অযোগ্যতার কারনে ধীরে ধীরে বাবার জমিদারি হাত ছাড়া হতে লাগলো। কিছুদিন যেতে না যেতে বসত ভিটাসহ বাকি সব সম্পত্তি কিনে নিলেন এক ধনী ব্যক্তি। এবার তিনি হলেন নতুন জমিদার। আর জমিদার পুত্র হীরা বসে বসে খেয়ে দরিদ্র দিন মজুরে পরিনত হলো। যারা এই জমিদারি কিনেছেন তারাই তাকে ডেকে ডেকে কাজ করাতেন। দিন যায় মাস যায় ধীরে ধীরে জমিদার পুত্র হীরারও বয়স বাড়তে থাকে। আর তার বাবার হাতে লাগানো সেই বৃক্ষ এখন মহিরূহে পরিনত হলো। নতুন জমিদার কন্যার বিয়ে ঠিক হলো।
তাই লাকড়ির জন্য বড় গাছটি কাটার চিন্তা করলেন তিনি। অমনি ডাক পরলো শ্রমিক হীরার। পরদিন সকালবেলা দুটো পান্তা খেয়ে কাধে কুঠার নিয়ে জমিদারের বাড়িতে আসলো পুরোনো জমিদার পুত্র হিরা। বিসমিল্লাহ বলে যখন বৃক্ষে কোপ মারলো তারপর আর বেশি দিন লাগলো না গাছ কেটে শেষ করতে। বৃক্ষ পরিনত হলো লাকড়িতে। জমিদারকে সমস্ত কাঠ ডাল পালা বুঝিয়ে দিয়ে বাড়ি গেলো হীরা।
বৌ তাকে প্রশ্ন করলো-
জমিদার কি গাছের মূড়া টাও (গাছের শিকড়) নিয়েছে?
হীরা বললো-
কিযে বলো? ভালো লাকড়িতেই তো বাড়ি ভরে গেছে মূড়া দিয়া কি করবে সে ?
তাহলে ওটা কেটে আনো। কিছুদিন অন্তত শান্তিতে রান্না করতে পারবো। আমার আর লাকড়ি কুড়াতে ভালো লাগেনা।
পরদিন সকালে হীরা গেলো জমিদারের কাছে এবং বৌয়ের কথাটা জানালো। জমিদার আর অমত করলেন না। মনে মনে ভাবলেন জঞ্জাল সরিয়ে ফেলাই ভালো। তাছাড়া গাছটি তো ওর বাবারই লাগানো।
যেমন বলা তেমন কাজ। হীরা রোজ গাছের শিকড়ের কিছু কিছু করে কাটতে লাগলো আর টুকরি ভরে বাড়ি নিয়ে যেতে লাগলো। এতো বড় গাছের শিকড় কাটা চারটেখানি কথা নয়। কারণ গাছের চেয়ে শিকড় শক্ত। হীরার শক্তিতে আর কুলিয়ে উঠছে না তাই বাড়ি গিয়ে বৌ কে বকা ঝকা দিতে লাগলো। বৌ ও পাল্টা জবাব দিলো।
তুমি যদি সব কিছু পারতে তাহলে কি আর জমিদারি হাতছাড়া হয়। আজ তোমার কষ্ট তুমি নিজেই ডেকে এনেছো। এখন তো কষ্ট করতেই হবে। যাও বাকিটুকুও কেটে আনো অনেক দিন রান্না করতে পারবো।
অগত্যা কি আর করা? হীরা আবার গেলো গাছের শিকড় কাটতে। আজ পুরোনো দিনের কথা মনে করে হীরার চোখের জল টপ টপ করে মাটিতে পরতে লাগলো। শিকড় কাটতে কাটতে তার প্রচন্ড পিপাসা পেল। আর সে অন্য একটি গাছের নিচে বসে বিশ্রাম নিলো ও অনেক কাঁদলো। মনের কষ্টে দীর্ঘশ্বাস ফেলতে ফেলতে আবার কুড়ালখানা হাতে নিয়ে মাটির গভীরে চলে যাওয়া শিকড়ে কোপ মারলো কিন্তু একি? ঝন করে আওয়াজ হলো কেন?
কাঠে কোপ লাগার শব্দ তো এটা নয় ! তারপর কুড়াল রেখে হাত দিয়ে মাটি সরাতে লাগলো সে। এবার দরিদ্র হীরার চোখ ছানাবড়া।
একে একে বেরিয়ে এলো তিনটি মাটির ঘড়া। ঘড়ার ঢাকনা খোলার পর সে যা দেখলো তা আর কাউকে বলা যাবেনা। সব মাটি চাপা দিয়ে দিলো।
সন্ধ্যে ঘনিয়ে এলে হীরা মোহর ভর্তি ঘড়া অনেক যতেœ তুলে আনলো আর মাথার গামছা বিছিয়ে দিয়ে খুব সাবধানে টুকরিতে মোহর গুলো রাখলো এবং তার উপরে শেকড়ের ছোট ছোট টুকরা ভরে নিলো। কারো বোঝার সাধ্যটি নেই হীরার মাথায় কি আছে। বাবার লুকিয়ে রাখা সোনার মোহর তার কাছে আবার ফিরে এলো। এগুলো বিক্রি করে হীরা ধনী হয়ে গেলো এবং সে হলো জমিদার। সেই থেকে হীরার আর কোনো অভাব রইলো না।
হীরার বৌ বললো, জীবনে অনেক ভুল করেছো আর নয়। হীরা খুব ভালো করে বুঝতে পারলো অবহেলা ও অলসতায় ক্ষমতা হারালে কতটা দুর্ভোগ পোহাতে হয়।