স্বাধীনতাবোধে জাগ্রত কবি : আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ মার্চ ২০২০, ১:০৯:৪৩ অপরাহ্ন
- কামাল আহমেদ
পদভারে চারপাশে ঘিরে থাকা অহংকারী শব্দাবলী ছুঁয়ে না দেখা কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ। ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ এবং ‘বৃষ্টি ও সাহসী পুরুষের জন্য প্রার্থনা’ আধুনিক বাংলা কবিতায় দুটো বিষ্ময়কর যোজনা। কবিতা-দুইয়ের কবি হিসেবে আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ নিজের বড় পরিচিতিকেও ছাড়িয়ে গেছেন। বাংলা কবিতার সমসাময়িক ডাকসাইটে কবিদেরও হতবাক করে দিয়ে আপন অবস্থান পাঠক ভালোবাসায় সিক্ত করেছেন। একজন স্বাধীন শব্দাবলীর আপন বুননশৈলীর কবি, একজন কবি হিসেবে নিজস্ব পথ রচনার কারিগর তিনি। বিত্তপ্রতাপে চঞ্চল হননি, জীবন-জৌলুষে প্রলুব্ধ হননি কবি। তাই চির পরিচিত সহজ শব্দসম্ভার তাকে কবি হিসেবে পৌঁছে দিয়েছে এক অনন্য উচ্চতায়। তাই তার কবিতায় শৈশব, কৈশোর, মা, মানুষ, প্রকৃতি, গ্রামীণ আবহ, পাখি, ফুল, নদী, মাঠ, চাঁদ, রাত্রির মোহাচ্ছন্নতা ললিত প্রলেপ। মানবতা, বিষণ্নতা, প্রতিবাদ, এক অজানা দুঃখের আবেশ আর স্বাধীনতাবোধের বিস্তার তার কবিতায়।
আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জের ক্ষুদ্রকাঠি গ্রামে ৮ ফেব্রæয়ারি, ১৯৩৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা আব্দুল জব্বার খান পাকিস্তানের আইন পরিষদের স্পিকার ছিলেন। ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে ১৯৪৮ সালে মাধ্যমিক, ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ হতে এম.এ. পাস করে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। ১৯৮২ সালে তিনি সচিব হিসেবে অবসর নেন এবং মন্ত্রীসভায় যোগ দেন। কৃষি ও পানি সম্পদ মন্ত্রী হিসেবে দুই বছর দায়িত্ব পালন করে ১৯৮৪ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে যোগ দেন। পরবর্তীতে ১৯৯২ সালে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের অতিরিক্ত মহাপরিচালক হিসেবে যোগ দেন বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থায়। ১৯৯৭ সালে তিনি একই সংস্থা থেকে পরিচালক হিসেবে অবসর নেন।
তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ-সাতনরী হার, কখনো রং কখনো সুর, কমলের চোখ, আমি কিংবদন্তির কথা বলছি, সহিষ্ণু প্রতীক্ষা, প্রেমের কবিতা, বৃষ্টি ও সাহসী পুরুষের জন্য প্রার্থনা, আমার সময়, মসৃণ কৃষ্ণ গোলাপ প্রভৃতি। কবি ১৯৭৯ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও ১৯৮৫ সালে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হন। ২০০১ সালের ১৯ মার্চ এই কবির কীর্তিময় জীবনের অবসান হয়।
কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর কবিতায় মা, মাটি, মানুষ, কবিতার প্রতি ভালোবাসা, পূর্বপূরুষের ঐতিহ্যের টান, স্বাধীনতাবোধ যতোটা স্বাতন্ত্র্য পেয়েছে, তা বিরল। বড়পদের অহংবোধ, বিত্ত-জৌলুষ, চারপাশ ঘিরে থাকা মোসাহেব, নগরজীবনের রঙিন আবেশ- সবকিছু পেছনে ফেলে নিরহংকারী শব্দাবলীর আচ্ছন্ন আবেশকে সঙ্গীকরে মা, মানুষ, প্রকৃতি, পাখি, ফুল, নদী, মাঠ, চাঁদ, রাত্রির মোহাচ্ছন্নতা নিয়ে তাঁর সাহিত্যজীবনে যে কেউ আকৃষ্ট হতে বাধ্য। সব মিলিয়ে তাঁর এই সতন্ত্র জীবন আবেশ হাজার বছর বাঁচিয়ে রাখবে পাঠক মনে।