একজন মানবিক প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ অক্টোবর ২০২০, ৯:৩১:০০ অপরাহ্ন
আবু হোসেন :
নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী Jacienda Ardner যুগান্তকারী ভোট পেয়ে (৬৪%) আবার তার দেশের লেবার দলের বিজয় ছিনিয়ে আনেন এবং প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন । গতবছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে ১৫ ই মার্চ ক্রাইস্ট চার্চ মসজিদে শুক্রবার জুমার দিনে যে নৃশংস হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় যেখানে ৫১ জন মানুষকে হত্যা এবং ৪০ জনকে আহত করা হয়। মূলত সেই ঘটনা থেকে পৃথিবীর মানুষের কাছে তিনি বেশি পরিচিতি লাভ করেন। White supremacy নামে একটি বর্ণবাদী সংগঠনের সদস্য Brenton Tarrent নামের এক কুখ্যাত বর্ণবাদী এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের নায়ক।
প্রধানমন্ত্রী Jacinda Ardner যেভাবে নিউজিল্যান্ডের মুসলিম সমাজকে হৃদয় থেকে ভালোবাসা দিয়ে, সহানুভূতি দিয়ে, সম্মান দিয়ে ঘটনাটি মুকাবিলা করেছিলেন সেজন্য পৃথিবীর লক্ষ কোটি মানুষের শ্রদ্ধা আসন প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। সাথে সাথে নিউজিল্যান্ডে আগ্নেয়াস্ত্র নিষিদ্ধ করা হয়। তাঁর মতো রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, বুদ্ধিমত্তা, সততা, মানবতাবোধ সর্বোপরি মানুষের প্রতি ভালোবাসা বর্তমান পৃথিবীতে সরকার প্রধানদের মধ্যে বিরল। করোনাভাইরাসের প্রভাব মোকাবেলা করতে পৃথিবীর প্রত্যেকটি রাষ্ট্রপ্রধানকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কিন্তু তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে যুগোপযোগী ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে তাঁর দেশে মৃতের সংখ্যা মাত্র ৩৫ জন।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে তার বিখ্যাত “go hard go early” অ্যাপ্রোচ অত্যন্ত কার্যকরী হওয়ার ফলে আজ নিউজিল্যান্ডবাসী স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে। তিনি অত্যন্ত করিৎকর্মা, তাইতো দেখা যায় ইলেকশনের পরের দিনই তাঁর অফিস কাজকর্মে মুখর হয়ে গেল। ইলেকশনে পাস করেই সাথে সাথে সিনিয়র এমপিদের সঙ্গে কফি আপ্যায়নে মিলিত হন। বিলেতে যেখানে দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে ফুটবল প্রতিযোগিতা হয় সেখানে নিউজিল্যান্ডের বিখ্যাত Bledisle Cup ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ইডেন পার্কে হাজার হাজার লোকের উপস্থিতি প্রমাণ করে নিউজিল্যান্ড ছোট্ট দেশ হলেও পৃথিবী থেকে আলাদা।
তাদের প্রধানমন্ত্রী Jecinda Andler এর রাষ্ট্রপরিচালনা প্রমাণ করে এরকম রাষ্ট্রপ্রধান পৃথিবীতে ক্ষণজন্মা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে নিউজিল্যান্ডের ৮০ বছরের মধ্যে এবারই প্রথম এত বেশি সংখ্যক ভোটার লেবার দলকে ভোট দিয়েছেন। তার বিখ্যাত স্লোগান “Be strong be kind” মানুষের মনে মন্ত্রপাঠের মত কাজ করেছে। তিনি নিউজিল্যান্ডবাসীকে শক্তিশালী হওয়ার পরামর্শ দেন সাথে সাথে দয়ালু কিংবা মানুষের প্রতি দরদ এবং মানবতাবাদের দীক্ষা দেন।
করনা ভাইরাসের কারণে মাত্র একমাস ইলেকশন দিতে দেরি হয়েছিল বলে সমালোচকরা ট্রানজিশন নিয়ে সমালোচনা করতে দ্বিধাবোধ করেনি। তাই সাথে সাথে ইলেকশন ডিক্লেয়ার করে দেন। Jacinda Ardner কার্যক্রম বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় তার সাফল্যের পেছনে দুটি জিনিস প্রাধান্য পায়, যখনই কোনো কিছু প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে সেটা যত বড় শক্তিশালী হোক না কেন তিনি ত্বরিৎ সিদ্ধান্ত নেন, সিদ্ধান্তে অটল থাকেন এবং বাস্তবায়নে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এবারে নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসের বিখ্যাত ইলেকশন প্রমাণ করে তাঁর ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তার কারণেই লেবার পার্টি এত বড় সাফল্য অর্জন করেছে। লেখক ঃ সভাপতি, বাংলাদেশী টিচার্স এসোসিয়েশন ইউ.কে