সিলেট পুলিশে বদলী আতঙ্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ অক্টোবর ২০২০, ৫:৪১:৩৯ অপরাহ্ন
এ টি এম তুরাব :
সিলেটে পুলিশ সদস্যদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ‘বদলি আতঙ্ক’। শুরু হয়েছে তালিকা তৈরির কাজ। এ তালিকায় থাকছেন দীর্ঘদিন ধরে মহানগরীর থানা, পুলিশ ফাঁড়ি বা সদরদপ্তরে কর্মরত বিতর্কিত পুলিশ সদস্যরা। সম্প্রতি বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে যুবক রায়হান হত্যাকাণ্ডের পরে জনমনে পুলিশের যে ইমেজ সংকট সৃষ্টি হয়েছে তা থেকে মুক্তি পেতে শুরু হয়েছে ‘বদলি অভিযান’। একজন বড় কর্মকর্তাকে দিয়েই ইতোমধ্যে এ অভিযান শুরু হয়েছে। বিতর্কিত অফিসারদের সরিয়ে সৎ ও দক্ষ অফিসার পদায়ন শুরু হয়েছে। বদলি করা হয়েছে মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার গোলাম কিবরিয়াকে। এরপর থেকেই এসএমপি’র ছয় থানা ও পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরতদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।
সুত্র জানায়, সিলেটে পুলিশের অনেকেই আছেন যারা এক থানায় কনস্টেবল হিসেবে বদলি হয়ে এসে পদোন্নতি নিয়ে কিছু সময়ের জন্য অন্য থানায় বা কোর্টে অথবা ডিবি কিংবা এসবিতে যান। কয়েক মাসের মধ্যে তদবির করে আবার থানায় ফিরে আসেন। এদের কেউ কেউ একই থানায় ঘুরেফিরে ৪-৫ বছর কাটিয়ে দিয়েছেন। অনেকেই সিলেট রেঞ্জেই কাটাচ্ছেন এক দশকের বেশি সময়। এছাড়া এসএমপি এবং জেলা পুলিশের বিভিন্ন থানায় এক যুগের বেশি সময় ধরে কর্মরত আছেন বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী পুলিশ কর্মকর্তা। এরকম অনেক কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্য মেট্রোপলিটন ও জেলা পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে, গ্রেফতার বাণিজ্য, ঘুষ-দূর্ণীতি ও অপরাধীদের সঙ্গে আঁতাতসহ অসংখ্য অভিযোগ।
পুলিশ প্রবিধানে স্পষ্ট বলা আছে, কোনো পুলিশ সদস্য দুই বছর এক স্থানে থাকতে পারবেন না। তবে বিশেষ প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করলে সময়ের মেয়াদ কিছুদিন বাড়াতে পারে। এ কারণে মাঝে মাঝে থানা বদল করলেও এসএমপিতেই আছেন তারা।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, কনস্টেবল থেকে ইন্সপেক্টর এমনকি সহকারী পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি পেয়েও তাদের বদলি নেই। সিলেটে কনস্টেবল থেকে এডিশনাল ডিআইজি পর্যন্ত পদমর্যাদার সহস্রাধিক পুলিশ সদস্য বহাল তবিয়তে আছেন। দীর্ঘদিন ধরে থানা, জোন, জেলা, মহানগর ও রেঞ্জে কর্মরত তারা। এরকমও নজির আছে প্রায় এক দশক ধরে এ-থানা ও-থানা করে অনেকে আছেন সিলেটে। কারো কারো অন্যত্র বদলির আদেশ হলেও তদবিরের জোরে তা বাতিল হয়ে যায়! অনেক ক্ষেত্রে ৫ থেকে ১০ বছর ধরে একই থানায় থেকে পদোন্নতি পেলেও এসএমপি’র বাইরে বদলি হননি এসব কর্মকর্তা। আবার শাস্তি বা অন্য কোনো কারণে কোনো কর্মকর্তা এসএমপি’র বাইরে বদলি হলেও কিছু দিন পরই তাকে আবার এসএমপিতে ফিরে আসতে দেখা যায়।
এ রকমই একজন ওসি আখতার হোসেন। তিনি চাকরি জীবনে বেশি কাটিয়েছেন সিলেটের বিভিন্ন থানায়। ইতোমধ্যে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের সবকটি থানায় দায়িত্বপালন শেষে বর্তমানে দক্ষিণ সুরমা থানায় ওসি’র দায়িত্বপালন করছেন। এসএমপি’র এ-থানা থেকে ও-থানায় ঘুরেঘুরে প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে পার করেছেন। এ সময়ে মধ্যে বেশ কয়েকবার বিতর্কিতও হয়েছেন ওসি আখতার। কয়েক মাস আগে শাহপরাণ (রহ.) থানায় দায়িত্বপালনকালিন সময়ে তার অনিয়মের বিরুদ্ধে স্থানীয়রা বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও রাস্তা অবরোধ কর্মসূচী পালন করে। এরপর তোপের মুখে তাকে বদলি করা হয় এসএমপি’র মোগলাবাজার থানায়।
কয়েক মাসের মাথায় সেখান থেকে ফের বদলি করা হয় দক্ষিণ সুরমা থানায়। ওসি আখতারের মতো অনেক ওসি, এসআই ও এএসআই সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের বিভিন্ন থানা, ফাঁড়ি ও দপ্তরে আছেন। এ তালিকায় আছেন কয়েকজন অতিরিক্ত উপ-কমিশনার, সহকারী কমিশনার।
সংশ্লিষ্ট বলছেন, অনেকে প্রভাব খাটিয়ে পছন্দসই থানায় দায়িত্ব পালন করলে বাহিনীর অন্য সদস্যদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। এক ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে একই এলাকায় অবস্থান করলে সেখানকার অপরাধী ও প্রভাবশালীদের সঙ্গে এক ধরনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়। অপরাধ বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা থাকে। পাশাপাশি ওই এলাকার ভিকটিমদের সঠিক বিচার না পাওয়া। এ ছাড়া পুলিশের কিছু দলবাজ সদস্যরা রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে থাকেন। ফলে তাদের কাছ থেকে জনগণ সঠিক সেবা পায় না। তারা এসএমপি’র বিভিন্ন থানা ও ইউনিটে ঘুরে ফিরে পোষ্টিং নিয়ে নিজের ইচ্ছে মতো দায়িত্ব পালন করছেন।
এ রকম একজন পুলিশ সদস্য হলেন যুবক রায়হান হত্যা মামলায় গ্রেফতার হওয়া কনেষ্টবল টিটু চন্দ্র দাস। টিটু দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ কোতোয়ালী মডেল থানা এবং ওই থানার অধিনস্থ বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত আছেন। এ মেয়াদের বেশি সময় কাটিয়েছেন ‘মধু হাঁড়ি’ খ্যাত বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে। কনেষ্টবল পদবি হলেও টিটুর দাপট ছিলো অফিসারের মতো। নিজের ইচ্ছে মতো দায়িত্ব পালন করতেন। যাকে মন চাইলো তাকে ফাঁড়িতে ধরে এনে করতেন নির্যাতন। পরে মোটা অংকের টাকা নিয়ে ছেঁড়ে দিতেন। তার বিরুদ্ধে এরকম অভিযোগ শতশত। সম্প্রতি রায়হান হত্যাকান্ডের পর ঘটনাটি চাউর হলেও শুরু হয় তোলপাড়। জনমনে দেখা দেয় ক্ষোভ।
এ ব্যাপারে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার পরিতোষ ঘোষ বলেন, বদলি ও পদায়নের এ পদক্ষেপ পুলিশের রুটিন কাজ। তবে এসএমপির’র পুলিশ সদস্যদের ব্যাপারে অভিযোগের ব্যাপারে তিনি কোন কথা বলতে রাজি হননি।