কোটিপতি বাড়ছে, দরিদ্র হচ্ছে জনগণ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ জানুয়ারি ২০২১, ৮:৪৬:৩৪ অপরাহ্ন
করোনা মহামারীর কারণে যখন দেশের সাধারণ সীমিত আয়ের মানুষের মাথাপিছু আয় কমেছে ২০ শতাংশ এবং দেশের ৭২ শতাংশেরও বেশী পরিবারের আয় হ্রাস পেয়েছে। তখন গত ৬ মাসে দেশে কোটিপতি বেড়েছে ৪ হাজার ৮৬৩ জন।
১৭ কোটিরও বেশী জনসংখ্যার বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় এখনো দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অধিকাংশ দেশের তুলনায় অনেক নীচে। এমন কি ক্ষমতাসীন দলের নেতানেত্রীদের মূখে অকার্যকর ও ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেব উচ্চারিত পাকিস্তানের চেয়েও বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় কম। দিন যতো যাচ্ছে এই আয় ততোই হ্রাস পাচ্ছে। অপরদিকে একশ্রেণীর মানুষ অর্থবিত্তে ফুলে ফেঁপে উঠছে।
ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, বাংলাদেশের কিছু আগে কিংবা একই সময়ে দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশ স্বাধীন হলেও গত ৫০/৬০ বছরে এসব দেশ অর্থনৈতিক দিক দিয়ে অভাবনীয় উন্নতি করেছে। এক্ষেত্রে মালয়েশিয়া ভিয়েতনাম ইত্যাদি দেশের কথা উল্লেখ করা যায়। আর চীন তো বিশে^র সবচেয়ে ধনী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পাল্লা দিচ্ছে। কিন্তু গত ৫০/৬০ বছরে বাংলাদেশে শুধু একশ্রেণির সুবিধাভোগি মানুষের অর্থ-বিত্তই বৃদ্ধি পেয়েছে। সাধারণ মানুষের ভাগ্যের তেমন উন্নতি হয়নি।
বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে গত ৯/১০ মাস যাবৎ করোনা মহামারির প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের অসংখ্য লোক চাকুরী হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন, লাখ লাখ মানুষের আয় উপার্জন হ্রাস পেয়েছে এবং দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে দিনাতিপাত করতে হিমশিম খাচ্ছেন। তখন এদেশে কোটিপতির সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে বিশে^র সবচেয়ে ধনী দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও চীনকে। এদেশের এসব নব্য কোটিপতির অধিকাংশই যে ক্ষমতাসীন দলের কিংবা তাদের ঘনিষ্ট লোকজন, এতে কোন সন্দেহ নাই। গত একযুগে এদের উত্থান ঘটেছে বিস্ময়রকর দ্রুত গতিতে। সৎপথে নয়, জনগণের সম্পদ লুট করেই তাদের এই উন্নতি হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। ক্ষমতাকে ব্যবহার করে কিংবা ক্ষমতাসীনদের সাথে স্বার্থের ভাগাভাগি করে তারা দেশের কোটি কোটি মানুষের সম্পদ কারসাজির মাধ্যমে আত্মসাত করেছে। বিগত সময়ে শেয়ারবাজার লুট, ব্যাংকের অর্থ-আত্মসাত, কুইকরেন্টাল, বিদ্যুৎ, পেঁয়াজ, কেলেংকারী এবং সর্বশেষ আলু ও চাল নিয়ে কারসাজির মাধ্যমে এদেশের কোটি কোটি দীন-দরিদ্র ও সীমিত আয়ের মানুষের পকেট কেটে হাজার হাজার কোটি টাকা তারা আত্মসাত করেছে। এর ফলে দরিদ্র মানুষ আরো দরিদ্র হয়েছে ও বেড়েছে সম্পদ বন্টনে বৈষম্য।
নতুন করে দেশের কোটি মানুষ নেমে গেছে দারিদ্রসীমার নিচে, বেড়েছে বেকারত্ব। এক দশকে দেশে শিল্পকারখানা ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি না পেলেও ব্যাংকের সংখ্যা বেড়েছে অনেক। আর এসব ব্যাংকের সংখ্যা অধিকাংশেরই মালিক লুটেরা গোষ্ঠী। বিগত বছরগুলোতে দেশে যে কোন উন্নয়ন কাজ হয়নি এমন নয়। এ সময়ে পদ্মা সেতুর মতো যুগান্তকারী প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। বেশ কিছু দরিদ্র ও গৃহহীন মানুষ থাকার আশ্রয় পেয়েছে। অনেকে পেয়েছেন বয়স্ক ভাতা। গোটা দেশে বেশ কিছু রাস্তাঘাট ও স্থাপনা গড়ে উঠেছে। তা স্বত্বেও প্রয়োজনের তুলনায় এগুলো পর্যাপ্ত নয়। দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে এগুলো উল্লেখযোগ্য কোন বড়ো ধরনের প্রভাব রাখতে সক্ষম হয়নি। এর কারণ দেশের রাষ্ট্রীয় আয় ও সম্পদের অধিকাংশই লুট ও আত্মসাত হয়ে যাচ্ছে। দেশের অধিকাংশ সড়কের অবস্থা এখনো শোচনীয়। রেলওয়ে ও বিমান এখনো বিপুল লোকসান দাতা প্রতিষ্ঠান। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের কোন কার্যকর উদ্যোগ নেই। সব মিলিয়ে দেশের অর্থনীতিতে এক বিশৃঙ্খল অবস্থা বিদ্যমান। এ অবস্থায় দেশকে ঠিকিয়ে রেখেছে প্রবাসী আয় ও কৃষি। এ দুটি খাত না থাকলে এদেশে এখন দুর্ভিক্ষ দেখা দিতো। আমরা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য সর্বাগ্রে দুর্নীতি ও লুটপাট নিয়ন্ত্রণের দাবি জানাচ্ছি। দেশের অধিকাংশ মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা যখন অবনতিশীল, তখন দেশে কোটিপতির সংখ্যা কীভাবে বাড়ছে, তা খতিয়ে দেখে এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের হিতকর্মী মহলের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি। মাঝে মাঝে দুর্নীতি বিরোধী অভিযান হচ্ছে ঠিকই। তবে এতে শুধু চুনোপুঁটিই ধরা পড়বে দেখা যাচ্ছে। বহাল তবিয়তে রয়ে যাচ্ছে রাঘব বোয়ালরা। আমরা একটি ছোট বড়ো নির্বিশেষে সবধরণের দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে একটি সর্বাত্মক অভিযান প্রত্যাশা করছি। আশা করি, দেশের ১৭ কোটি মানুষের স্বার্থে সরকার এ বিষয়ে অবিলম্বে দৃষ্টি দেবে।