গামছা সংস্কৃতিই কি ‘হেফাজতকে’ পানি খাওয়ায়
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ জানুয়ারি ২০২১, ৭:৩৩:১৭ অপরাহ্ন
সৈয়দ মুলতাজিম আলী বখ্তিয়ার
আশ্চর্য্যজনকভাবে কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্য দর্শনের এক বিশাল ও মৌলিক অংশই ইসলাম ধর্মের মৌলিক নীতিমালার সাথে অনেকাংশেই মিলে যায়। সাহিত্য দর্শনে সুকুমার বৃত্তির চর্চা থাকলে ধর্মীয় নীতি ও নৈতিকতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে উঠা তেমন অভাবনীয় বিষয়ও নয়। কারণ লেখক কি কবি সাহিত্যিকেরা বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই কোন না কোন ধর্মানুসারী হয়ে থাকেন, যেখানে নীতি ও নৈতিকতার মতো ব্যাপারগুলো তাদের জন্মলব্ধ। আর যারা ধর্মে বিশ্বাসী নন, সে ধরণের কবি সাহিত্যিকের লেখায়ও বিবেক, নীতি এবং মানবিকতা উপেক্ষিত নয়। রুশ লেখক আর্দে শাখারভ কি বিশ্বখ্যাত ‘মা’ উপন্যাস রচয়িতা ম্যাক্সিম গোর্কির সাহিত্যে অত্যন্ত উন্নতমানের সুকুমারবৃত্তি চর্চিত হয়েছে। আমাদের দেশের বস্তবাদী জীবনশিল্পী মানিক বন্দোপাধ্যায়ের সাহিত্যে যে প্রতিরোধ ও প্রতিবাদের নীতি প্রতিফলিত হয়েছে একে কি ইসলামের বহুল আলোচিত জিহাদের নীতি ও আদর্শ প্রত্যাখ্যান করতে পারে? যা কিছু ভাল, যা মানব কল্যাণে ইতিবাচকভাবে ব্যয়িত হয়; সে-ই-তো ‘মানিক সাহিত্য’। এতে আছে দ্রোহ, ভালোর প্রতিষ্ঠার জন্য প্রাণান্তÍকর প্রচেষ্টা। ইসলাম ধর্মেও অনুরূপভাবে প্রাণান্তকর প্রচেষ্টার মাধ্যমে যা কিছু ভালো, সত্য সুন্দর ও মানব কল্যাণকর, তার প্রচেষ্টার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টাই কী ‘জিহাদের ভাবানুবাদ নয়? ইসলাম স্বভাবধর্ম বলেই বোধ হয়, মানবীয় সুরুচিবৃত্তিগুলো ইসলামের সাথে ব্যাপকভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
বস্তুত: এ নীতির প্রতিকূলে যাদের চিন্তা ও দর্শন এবং যাপিত জীবনব্যবস্থা এরা যতই প্রাকটিসিং ধার্মিকই হোক না কেন, তাদের সে ধর্মচর্চা ও ধর্মচিন্তা নিজ নিজ উপাসনালয়েই আবদ্ধ থাকে। এই জাতীয় ধার্মিকেরা কখনো তাদের সামগ্রিক জীবনকে আলোকিত করতে পারেন না; আর রাষ্ট্র ও সমাজকে তো নয়ই। অতএব সত্যিকার অর্থে তাই এরা যতই ধার্মিক হোন না কেন, প্রকৃতপক্ষে অন্ধকারেরই পূজারী। অন্যদিকে ইসলাম বলে, “আল-ইসলামু হাক্কুন, আল ইসলামু নূরুন”। অর্থাৎ “ইসলাম সত্য ও আলোকিত”। ইসলামের এই দর্শনের বিপরীতে পৃথিবীর কোন ধমেরই অবস্থান হতে পারে বলে আমার বিশ্বাস করিনা।
এই পৃথিবীর বহু মানব-মানবী আছেন যারা ব্যক্তি জীবনে সিদ্ধি অর্জন করতে কিংবা অদম্য যৌন ইচ্ছা কিংবা মনের কুপ্রবৃত্তিকে ধ্বংস করতে কখনো বা খাবারের তালিকা হতে আমিষ পরিহার করেন, আবার অনেকে দার পরিগ্রহ করেন না। এক্ষেত্রে তাদের নিজ ধর্মীয় পথ নির্দেশনা পরিহার করে নিজেদের বুদ্ধি প্রজ্ঞার প্রতিফলন যে খুব একটা ফলপ্রসূ হয়না এর বাস্তব দৃষ্টান্ত ও আমাদের চোখের সামনে ভুরি ভুরি রয়েছে। জার্মনীর সাবেক চ্যান্সেলর নিরামিশভোজী হিটলার একাই ষাট লক্ষ ইহুদীর প্রাণনাশ করেন। আবার আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ ইউরোপ আমেরিকার অনেক যোগী, পুরোহিত, সন্নাসী সংসার ত্যাগীদের দ্বারা যে সকল ঘৃণ্য ও ভয়ানক যৌন অজাচার প্রতিনিয়ত সংঘটিত হচ্ছে তা সুস্থ মানব সমাজের জন্য এক ভয়ংকর অশনি সংকেত। অবস্থা দৃষ্টে মনে হয় প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে এরা প্রকৃত অর্থে প্রবৃত্তির এক একটা দাসানুদাসে পরিণত হয়।
আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর সাম্যবাদী কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘মানুষ’ কবিতায় এমনি এক ধর্মান্ধ ভ- ও লোভাতুর সমাজের চিত্র এঁকেছেন। সেই সমাজের মন্দিরের পুরোহিত কিংবা মসজিদের মৌলভীর কাছে ধর্মের বাহ্যিক খোলসটাই সব, এর অন্তর্নিহিত তাৎপর্যটা একেবারেই উপেক্ষিত। এইসব ধর্ম ব্যবসায়ীদের ধর্মপূজির আপেক্ষিক গুরুত্ব মানুষের মর্যাদার তুলনায় একেবারেই নগণ্য। কবিতার মূল প্রতিপাদ্য এরকম যে, জনৈক ক্ষুধাতুর ভিনদেশী মুসাফির হিন্দুপরোহিতের কাছে কাতর বচনে খাবার প্রার্থনা করে যেমনিভাবে প্রত্যাখ্যাত হয়, অনুরূপভাবে মসজিদে শিরণীর অঢেল গোশ্ত রুটি থাকা সত্ত্বেও মসজিদের মৌলভীর কাছেও প্রত্যাখ্যাত হয় নামাজ না পড়ার কারণে। আল্লার দরবারে তখন সেই মুসাফিরটির আকুল আকুতি, “আশিটি বছর কেটে গেল আমি ডাকিনি তোমায় প্রভু, আমার ক্ষুধার অন্ন তা বলে বন্ধ করনি কভূ”।
অত্যন্ত গর্বের সাথে বলতে চাই যে, আজ আমরা যে স্বাধীন বাংলাদেশের বাসিন্দা ধর্ম-বর্ণ-জাতিপাত এবং পেশা কি ধর্মের উর্ধ্বে আমাদের এই মাটির একটি সার্বজনীন চিরায়ত সংস্কৃতি আবাহমান বাংলার বহু পুরণো একটি সমৃদ্ধ ঐতিহ্য। এজন্য এ অঞ্চলের মানুষেরা হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলমান-খৃষ্ঠানে কোন পার্থক্য সূচিত করে না। মনিপুরী, খাসিয়া, পারো, চাকমা, মারমা, সাওতাল সকল উপজাতীয় জনগোষ্ঠী স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে সমান সামাজিক ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় সুবিধা ভোগ করতে পারে। অথচ আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে আমরা এমনটি প্রত্যক্ষ করি না। এর পিছনে রয়েছে বহুবিধ ধর্মীয়,সামাজিক, রাষ্ট্রিক এমনকি প্রাকৃতিক ও আবহাওয়াগত কারণসমূহ।
আমাদের জীবন-জীবিকার প্রধানতম উৎস কৃষি এদেশের আবহাওয়া ও প্রকৃতি নির্ভর। এ জাতির জীবন ও জীবিকা আবর্তিত হয় নদীর প্রবাহের তালে তালে। এ জাতির ভাগ্যের বাক্ পরিবর্তিত হয় নদীর বাক্ পরিবর্তনের সাথে সাথে। আমাদের রুটি-রুজি ও জীবনের সাথে তাই আমাদের সবগুলো নদী আষ্টে-পৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে। আমাদের ব্যবসা বাণিজ্য নদী কেন্দ্রীক, এমনকি আধুনিক কালের শিল্প কারখানাগুলোও নদীর তীরেই গড়ে উঠেছে। এই নদীগুলোই আমাদের হাসায়, আবার এই নদীগুলোই আমাদের কাঁদায়ও বটে। নদীর পানিতে ভেসে আসা পলিতে এদেশের মানুষেরা চাষ-বাস করে ফসল ফলায়। আবার যখন নদীতে ভেসে উঠে বিশাল চর, তখন সেই চরের হকদার হই আমরা সকলে। এখানে আমরা না মুসলমান না হিন্দু, না পন্ডিত না মৌলভী, না বাঙালী না উপজাতীয়, না আশরাফ না আতরাফ। এই পলি, এই চর তাই আমাদের জন্য সার্বজনীন এক আশির্বাদস্বরূপ। এখানে আমরা ধর্ম কী জিনিস, প্রভেদ কী জিনিস, তা কখনো বুঝি না। সামগ্রিকভাবে পারষ্পরিক সহযোগিতার হাত প্রসারিত করে সকল ধরণের ভেদ অভেদের উর্ধ্বে উঠে আমরা চাষ-বাস করি। সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতিই এখানে আমাদের মূলমন্ত্র। ‘রামের’ জমিতে ‘রহিম’ হাল বেয়ে সাহায্য করে কিংবা কখনো আবার ‘জন গমেজের’ ধান মাড়াইয়ে সাহায্য করে ‘বড়–য়া। উৎসবে-পার্বনে, ঈদে-বড়দিনে কুশল বিনিময়ে আমরা তাই ধর্মের প্রভেদ করতে পারিনা। অতএব ‘রাম’ কি ‘রহিমের’ এই মাটিতে দুঃখ ও সুখ কখনো একার নয়, এর দুর্ভোগ ও উপভোগ দু’টোই সামষ্টিক।
নদী ভাঙন, সাইক্লোন, জলোচ্ছাসে ভুক্তভোগীরা শুধুই পারস্পরিক মর্মবেদনা ভোগ করেনা, কাধে কাধ মিলিয়ে বাস্তুহারা মানুষেরা একে অন্যের বাড়ী নির্মাণ করে দেয়। কালের ধারাবাহিকতায় আমাদের ঐতিহ্যটাই তাই নদীমাতৃক। আমাদের ভাটিয়ালী গান, আমাদের সারি গান নদী কেন্দ্রীক। আমাদের পোশাক-আশাকও তাই নির্ধারিত হয়েছে আমাদের কায়িক শ্রমের সাথে মিল নির্ভর। এ অঞ্চলের কৃষক নৌকার মাঝি কিংবা বস্তাটানা কুলিই শুধু নয়, স্যুট-টাই পরা সাহেব কিংবা আচকান শেরওয়ানীপরা অভিজাত শ্রেণীর কাছেও গামছার কদর অনেক বেশী। সেটা পেশাগত কারণে না হলেও প্রাকৃতিক কারণেও ঘাম মুছতে আরামদায়ক। নগর সংস্কৃতির কলকাতাবাসীর কাছে এই গামছার আবেদন ও উপলবিদ্ধ খুবই ¤্রয়িমান। এককালের পূর্ব বাংলা পশ্চিমের অভিজাত সমাজের কাছে বিবেচনায় যতই ‘খামার বাংলা’ কিংবা এখানকারা মানুষেরা যতই তাদের ‘লাইভস্টক’ অভিধায় তিরস্কৃত হোক না কেন, এখানকার মানুষের চিরায়ত সার্বজনীন ঐতিহ্য হচ্ছে, “সবার উপরে মানুষ সত্য’।
আমাদের একজন মরহুম কবি রাজনীতিকে দুষ্টু ‘কালো শিয়ালের’ সাথে তুলনা করেছেন। ‘রাজনীতি’ মানে ‘নীতির রাজা’ তাই একে আমরা সমীহ করি। রাজনৈতিক ‘সম্প্রীতি’ আমাদের বহুবছরের সমৃদ্ধ সামাজিক ঐতিহ্য। যে কোন কারণে এ সম্প্রীতি ও ভালোবাসা ধ্বংস হোক, এ আমরা চাই না। দুর্ভাগ্যজনক যে, এ না চাওয়ার মধ্যেও অবচেতন ভাবেই আমাদের সমস্ত শরীর ও আত্মা দুষ্টু রাজনীতির ফাদে পেঁচিয়ে গেছে। আমাদের সামাজিক সৌহার্দ্য আজ রাজনীতির ‘অজগরের’ পেটে ঢুকতে বসেছে। আজ আমরা আমাদের ভাইকে খুন করতে উদ্যত হচ্ছি।
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য্য নির্মাণে আজ যে সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে, এটা আমাদের সমাজ জীবনের জন্য খুব ভাল নয়। এর পক্ষ-বিপক্ষে অবস্থান যে কত অমানবিক পর্যায়ে পৌঁছেছে তা পরস্পর বিরোধী বক্তব্য শুনলে রীতিমতো গা শিউরে ওঠে। মরহুম মুফতি আহমদ শফির নেতৃত্বাধীন হেফাজতে ইসলাম নামে আলেম-উলামাদের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন এর সর্বাত্মক বিরোধীতায় মাঠে নেমেছে। কোরআন-হাদিসের রেফারেন্স দিয়ে তারা বলছেন, কোন প্রাণীর অবয়ব তৈরীর অনুমোদন ইসলাম করে না। বরং পদ্মাসেতুর যে স্থানে সরকার বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য্য নির্মাণের পরিকল্পনা করছেন, সেখানে ‘বঙ্গবন্ধু মিনার’ তৈরী করতে পারেন; এতে সাপ ও মরবে, লাঠি ও ভাঙবেনা। অন্যদিকে প্রগতিশীল রাজনীতির একটি অংশ যেকোন মূল্যে পদ্মাসেতু প্রান্তে শুধু নয়, গোটা বাংলাদেশ জুড়েই বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য্য নির্মাণে অবিচল অবস্থানে রয়েছেন। এ নিয়ে দু’পক্ষের অবস্থান অত্যন্ত অনঢ়।
হেফাজতে ইসলামের সাথে বাংলাদেশ সরকারের সম্পর্কের চড়াই উৎরাই যাচ্ছে। ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে এদের এক বিশাল জনসমাবেশের কারণে সম্পর্কের অবনতি হলেও ২০১৭ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনার সাথে পারস্পরিক আলাপচারিতার মাধ্যমে আবার তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক পুন:স্থাপিত হয়। সংগঠনটির সাবেক আমিরের সাথে আমাদের সরকার প্রধানের চমৎকার সম্পর্ক তৈরী হওয়ার কারণে কওমী মাদ্রাসার সর্বোচ্চ ডিগ্রী ‘দাওরায়ে হাদিসকে’ এম.এ’র সমমান দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। ঐ বছরের নভেম্বর মাসের শেষের দিকে মাওলানা শাহ আহমদ শফি, মাওলানা আনওয়ার শাহ সহ কওমী ঘরানার ডাকসাইটে ওলামায়ে কেরামের মাধ্যমে আমাদের সরকার প্রধানসহ অন্যান্য মন্ত্রী আমলাদের এক বিশাল গণ-সম্বর্ধনা দেয়া হয় এবং এতে সরকার প্রধানকে কওমী জননী বলে আখ্যা দেয়া হয়। তিনবছর না ঘুরতেই শফি সাহেবের ইন্তেকালের পর বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য্য নির্মাণ ইস্যুতে সম্পর্কের তীব্র ফাটল শুধু বললেই কম হবে, বরং রীতিমত সম্পর্কে ভূমিধ্বস সৃষ্টি হয়।
আহমদ শফি সাহেবের জন্ম উপনিবেশিক যুগে ১৯১৬ সালে এবং সেই হিসেবে মানুষকে ভেঙ্গে ভেঙ্গে শাসন করবার পলিসি তিনি তাঁর জীবনকালের প্রায় একত্রিশটি বছর ব্যাপী প্রত্যক্ষ করেছেন। দীর্ঘ জীবনকালের লব্ধ অভিজ্ঞতায় বুদ্ধি ও প্রজ্ঞায়, বিবেচনাশক্তি ও কৌশলে তিনি ছিলেন এক অনন্য ঋদ্ধ ব্যক্তিত্ব। সরকার প্রধানের সাথে তিনি ও তাঁর দল আলোচনার মাধ্যমে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর সংলগ্ন লালন ভাস্কর্য্য অপসারণ করিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে গ্রীক মূর্তি থেমিসকে সরিয়েছেন, এমনকি মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠ্যসূচিতে বিশেষত নবম দশম শ্রেণীতে পদ্য, গদ্য, নাটক উপন্যাস কোন কোনটি সিলেবাস ভূক্ত রাখতে হবে সেখানেও তাঁর নেতৃত্বাধীন হেফাজতে ইসলাম তাদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন।
আজ একে অন্যের ঘাড় মটকে দেয়ার কিংবা ভাস্কর্য্য বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেয়ার যে পরস্পর বিরোধী অন্তর্ঘাতমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন, এটা কোনভাবেই বহুমান বাংলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ নয়। আজ যখন টিভি চ্যানেলগুলো কোন টকশো পাটিসিপেন্টকে বলতে শুনি ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ কিংবা জনভায় তাদের পানি পান করিয়ে কারা কারা যেন জবরদস্ত অন্যায় করে ফেলেছে; ভাবি এই ঝুঁকি শুরু হলো আমাদের সত্যিকারের পতন!
পুনশ্চ: কালজয়ী কথাশিল্পী বিভূতি ভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের কালজয়ী অমর উপন্যাস ‘পথের পাচালীর’ শেষ কঁটি লাইন আমার মনে প্রতিনিয়তই প্রবল দোলা দেয়। বাবার মৃত্যুর পর উপন্যাসের নায়ক ‘অপু’ ক্ষুন্নি বৃত্তি নিবারণার্থে স্বগ্রাম নিশ্চিন্দিপুর ত্যাগ করে যখন কোন এক দূর গ্রামে অবস্থান করছিল, তখন তার সমস্ত অন্তরাত্মা হাহাকার করে বলে উঠেছিল, “তিনবছর কত কাল! আমাদের যেন সেই নিশ্চিন্দিপুর ফেরা হয় ভগবান। পথের দেবতা প্রসণœ হাসিয়া বলিলেন, মূর্খ বালক পথ তোমার শেষ হয় নাই, এ যে সেই পথ, এ পথ খুব দীর্ঘ —-।”