বিয়ানীবাজারে মুজিববর্ষের উপহার নিয়ে মেয়রের সংবাদ সম্মেলন আজ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ জানুয়ারি ২০২১, ১১:৫৭:৩৩ অপরাহ্ন
এম.হাসানুল হক উজ্জ্বল, বিয়ানীবাজার: সারাদেশে মুজিব শতবর্ষের উপহার প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গিকার বাস্তবায়নে কোন বিতর্ক সৃষ্টি না হলেও বিয়ানীবাজারে এই প্রকল্প নিয়ে শুরুতেই বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভূমি কর্মকর্তা। জনপ্রতিনিধিদের সাথে সমন্বয় না করে গোপণে বিয়ানীবাজার পৌরসভার মূল্যবান ভূমিতে নিজেদের পছন্দের লোকদের ভূমি বরাদ্দ দেয়ার ঘটনা এখন আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দৈনিক জালালাবাদ এর ধারাবাহিক সংবাদে মেয়রসহ বিয়ানীবাজার পৌরসভার নাগরিকদের এ নিয়ে টনক নড়ে। ক্ষুব্ধ বিয়ানীবাজার পৌরবাসী এ নিয়ে আন্দোলনে নামার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বিয়ানীবাজার পৌরসভার মেয়র তাঁকে অবগত না করে ভূমি বরাদ্দ দেয়ার বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে অবহিত করেছেন।
জানাযায়, বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে গত ২৪ ডিসেম্বর পৃথক দুটি স্মারকে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের অধিনে ‘ক’ শ্রেনীর ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ০২ একর ভূমিতে গৃহ নির্মাণ পূর্বক পুনর্বাসন ও বন্দোবস্ত প্রদানের জন্য জনপ্রতিধিদের সাথে সমন্বয় না করে ৫৪ টি নথি প্রেরণ করা হয়। যা ডেপুটি কালেক্টর রেভিনিউ ৩১ ডিসেম্বর স্বাক্ষর করে কবুলিয়ত সম্পাদনের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।
বিভিন্ন সূত্রে জানাগেছে, নির্দেশ আসার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভূমি কর্মকর্তা এ সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম গোপনে সম্পাদন করতে থাকেন। তবে বিষয়টি তাঁরা বেশি দিন গোপন রাখতে পারেন নি। অধিকার বঞ্চিতদের মধ্যে এ খবর ছড়িয়ে পড়ে। বেরিয়ে আসে নানা তথ্য। দৈনিক জালালাবাদের হাতে অনুমোদনের গোপণ ফাইল চলেও আসে।
এদিকে সংক্রান্ত ফাইল এ প্রতিবেদকের কাছে এলে বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী মাহবুবের সাথে ১১ জানুয়ারী প্রতিবেদকের ফোনে যোগাযোগ করা হয়। তিনি অনুমোদনের বিষয়টি সরাসরি অস্বীকার করেন। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, ইতোমধ্যে ৫৪ জনের নামে কবুলিয়তও সম্পাদন করা হয়েছে।
অপর একটি সূত্র জানায়, বিয়ানীবাজার পৌরসভার বাসিন্দারা এ নিয়ে সোচ্চার হয়ে বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নেয়ার পরিকল্পনার তথ্য ইউএনও’র কানে পৌছলে বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভূমি কর্মকর্তা বিয়ানীবাজার পৌরসভার মেয়রকে নিয়ে মিটিং করেছেন। মিটিংয়ে মেয়রকে তাদের নিয়ন্ত্রণে নিতে ইউএনও কৌশলী ভূমিকা পালন করে ভূমি কর্মকর্তাকে দোষারূপ করেন। কিন্তুু মেয়র ইউএনও’র টোপে না পড়ে তালিকা বাতিল করে পৌর পরিষদকে সাথে নিয়ে তালিকা করার জন্য ইউএনও’কে বলে আসেন।
এদিকে একাধিক সূত্র জানিয়েছে, দৈনিক জালালাবাদ-এ ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দারুন ক্ষুব্ধ। বৃহস্পতিবার উপজেলা পরিষদ হল রুমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির সভায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিষয়টি সকলকে অবহিত করে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং এ রকম সংবাদ প্রশাসনের বিরুদ্ধে বা জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে প্রকাশিত হলে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও উল্লেখ করেন। বিষয়টি মিটিংয়ের রেজ্যুলেশনে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে বলে একটি সূত্রে জানাগেছে। সভায় বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম পল্লব, পৌরসভার মেয়র, থানার ওসি, বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন।
অপরদিকে, বিয়ানীবাজার পৌরসভার সদস্যদের নিয়ে মেয়র মোঃ আব্দুস শকুর শুক্রবার সকালে জরুরী মিটিং করেছেন। তিনি ইউএনও’র কার্যক্রম সকলকে অবহিত করেছেন। এ সময় কাউন্সিল’রগণ প্রশাসনের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। আজ শনিবার সন্ধ্যায় মেয়ররের কার্যালয়ে এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছে।
এদিকে স্থানীয় ভূমিহীনদের অগ্রাধিকার না দেয়া ও জনপ্রতিনিধিদের সাথে সমন্বয় না করে ভূমি বরাদ্দের প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন পৌরবাসী। পৌরসভার প্রতিটি এলাকার সামাজিক সংগঠনগুলো এ নিয়ে কর্মসূচী দেয়ারও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন বলে জানাগেছে। শনিবার এ নিয়ে সভা আহবান ছাড়াও রোববার স্মারকলিপি দেয়ার কর্মসূচী নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।