গৃহহীনদের ঘর, প্রশংসনীয় উদ্যোগ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ জানুয়ারি ২০২১, ৫:৩৮:৩৩ অপরাহ্ন
রোববার দৈনিক জালালাবাদসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ‘মুজিববর্ষের উপহার পেলো সিলেটের ১৪০৬’ পরিবার’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। রিপোর্ট অনুসারে, মুজিববর্ষে সারাদেশের ন্যায় সিলেটে জেলার ১৩টি উপজেলার ১৪০৬টি ভুমিহীন ও গৃহহীন পরিবার পেয়েছে ‘স্বপ্ননীড়’ নামক নতুন ঘর। গত শনিবার সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে দেশের ৭০ হাজার ভূমি ও গৃহহীন পরিবারকে জমি ও গৃহ প্রদান কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। সিলেট জেলার ৪১৭৮টি স্বপ্ননীড়ের মধ্যে ১ম পর্যায়ে ১৪০৬টি ঘর পেয়েছেন উপকারভোগী পরিবারগুলো।
জানা গেছে, বাকী ২৫৭২টি স্বপ্ননীড়ের নির্মাণ কাজ শেষ হলে বেনিফিশিয়ারি অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট উপকারভোগীদের হাতে সমঝে দেয়ার পরিকল্পনা এগিয়ে যাাচ্ছে দ্রুতগতিতে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে সরকারের পক্ষ থেকে দেশের ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারগুলোকে ঘর বানিয়ে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। ২ শতক খাস জমির মালিকানা দিয়ে বিনা পয়সায় ২ কক্ষ বিশিষ্ট ঘর মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে দেয়া হচ্ছে। একই সাথে ব্যারাকের মাধ্যমে ২১টি জেলার ৩৪টি উপজেলার ৪৪ প্রকল্পের মাধ্যমে ৩হাজার ৭১৫টি পরিবারকে ব্যারাকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় প্রথম পর্যায়ে সিলেট জেলায় ১৪০৬টি ঘরের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। নির্মিত ঘর উপকারভোগীদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। উল্লেখ্য, এই প্রকল্পের অধীনে সিলেট বিভাগের প্রায় ১০ হাজার ভূমিহীন পরিবার ঘর পাবেন। সিলেট বিভাগে বরাদ্দকৃত প্রায় ১০ হাজার ঘরের মধ্যে সিলেট জেলায় ৪১৭৮টি, মৌলভীবাজার জেলায় ১০৭৫টি, হবিগঞ্জে ৪৫২টি এবং সুনামগঞ্জে ৩৯০৮টি ঘর বরাদ্দ করা হবে।
ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মাঝে ভূমিসহ ঘর বরাদ্দের এই উদ্যোগ যেমন প্রশংসনীয় তেমনি যুগান্তকারী। অতীতে বিভিন্ন সময়ে সরকার বহু সরকারী খাস জমি বরাদ্দ দিয়েছে। সরকারী নীতিমালা অনুযায়ী এসব খাসজমি ভূমিহীনদের মাঝে বরাদ্দ করার নিয়ম থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা মানা হয়নি। এক শ্রেণীর অসাধু সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারী উৎকোচের বিনিময়ে কিংবা চাপের মুখে প্রভাবশালী লোকজনকে বরাদ্দ দিয়েছেন সরকারী খাসজমি। ফলে প্রকৃত ভূমি ও গৃহহীনরা বঞ্চিত রয়ে গেছে। দিনের পর দিন এভাবে চলতে থাকায় ভূমিহীনদের সংখ্যা বেড়েছে। দারিদ্রতা, নদী ভাঙ্গন ও শহরমুখী হওয়ার প্রবণতা এদেশে গৃহহীন ভূমিহীনদের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি করেছে। এ অবস্থায় সরকারের ভূমিহীন-গৃহহীনদের মাঝে ২শতক জায়গার ওপর সেমিপাকা ঘরে ২টি শোবার কক্ষ, একটি বারান্দা, একটি রান্নাঘর ও একটি বাথরুম সম্বলিত গৃহ প্রদান দেশের ভূমিহীন মানুষের মাঝে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। যারা এগুলো পেয়েছে, তারা রীতিমত উদ্বেলিত ও আনন্দে বিহ্বল। বর্তমান সংকটময় মুহুর্তে যখন নুন আনতে তাদের পান্তা ফুরানোর মতো অবস্থা তখন জমি ক্রয় করে পাকা ঘর নির্মাণ তাদের কল্পনার বাইরে।
প্রচলিত খাসজমি বরাদ্দের মতো আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও দুর্নীতি ব্যতিরেকে প্রকৃত ভূমিহীন গৃহহীনদের মাঝে ভূমিসহ ঘর বরাদ্দ বর্তমান সরকারের যে একটি অন্যতম মহতী উদ্যোগ, এতে কোন সন্দেহ নেই। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে ভূমি ও সেমিপাকা ঘর বরাদ্দের ক্ষেত্রে আর্থিকসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এদিকে সরকারের উর্ধ্বতন মহলের দৃষ্টি দেয়া আবশ্যক। কিছু অসাধু ও স্বার্থান্বেষী কর্মকর্তা কর্মচারী ও রাজনৈতিক ব্যক্তির দুর্নীতি ও অনিয়মের দরুন সরকারের এই যুগান্তকারী মহতী উদ্যোগ যাতে ব্যাহত ও ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকে কঠোর নজরদারি বজায় রাখতে হবে। দুর্নীতি ও অনিয়মের সাথে জড়িত ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সিলেট অঞ্চলকে প্রবাসীবহুল সচ্ছল এলাকা বলে প্রায়ই উল্লেখ করা হয়। কিন্তু দেখা গেছে, সিলেট অঞ্চলের দরিদ্র মানুষেরা অতিশয় দরিদ্র। এ অঞ্চলে ভূমিহীন গৃহহীন মানুষের সংখ্যা দেশের অন্যান্য এলাকার তুলনায় কম নয়। তাই সিলেট অঞ্চলের এসব ভূমিহীন-গৃহহীন হতদরিদ্র পরিবারের মাঝে আশ্রয়ণ প্রকল্পের এই ভূমিসহ ঘর প্রদানের উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। আমরা জানি, ভূমিহীন ও গৃহহীন লাখ লাখ মানুষের সংখ্যার তুলনায় এসব বরাদ্দের সংখ্যা নিতান্ত স্বল্প ও অপর্যাপ্ত, তবুও এই পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানানো উচিত। কারণ আজ ভূমিহীন-গৃহহীনদের মাঝে ভূমিসহ ঘর প্রদানের যে কর্মযজ্ঞ সূচিত হয়েছে, তা এক সময় সারাদেশের ভূমি ও গৃহহীনদের মাঝে বিস্তৃত হবে, এমন প্রত্যাশা আমাদের। এভাবে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি হবে ত্বরান্বিত।