অপরাধীদের নিরাপদ জোন আবাসিক হোটেল
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ৯:৩১:৫৯ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : অপরাধ ও অপরাধীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থলে পরিণত হচ্ছে সিলেটের অনেক আবাসিক হোটেল। অপরাধীদের নিরাপদ বিচরণের কারণে হোটেলগুলো অস্ত্র, মাদক, জুয়া, অনৈতিক ব্যবসাসহ নানা ধরনের অপরাধের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠেছে। ভুয়া নাম-পরিচয় ও ঠিকানা ব্যবহার করে হোটেলকক্ষ ভাড়া নিয়ে পরিকল্পনামাফিক টার্গেট ব্যক্তিকে হত্যা করে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যাচ্ছে খুনিরা।
সম্প্রতি নগরীর লালবাজারের একটি হোটেলে হায়াত নামের এক পল্লী চিকিৎসক খুন হন। গত বছরের জুনে তালতলাস্থ হোটেল সুরমায় খুন হয়েছিলেন পাথর ব্যবসায়ী আবুল কালাম। এর আগে সোবহানীঘাটস্থ হোটেল মেহেরপুর থেকে তরুণ-তরুণীর লাশ উদ্ধার করা হয়। এছাড়া বুধবার লালবাজারের একটি আবাসিক হোটেলে এক কিশোরী ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।
সূত্র জানায়, মহানগরীর নামিদামি কিছুসংখ্যক হোটেল ছাড়া অধিকাংশ হোটেলে রাখা হচ্ছে না অতিথিদের পূর্ণাঙ্গ তথ্য। এ সুযোগে অপরাধীরা নিরাপদ হিসেবে এসব হোটেল বেছে নিয়েছে। এসব কাজে সরাসরি হোটেল মালিক, ম্যানেজার ও কর্মচারী জড়িত রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর বন্দরবাজার, লালবাজার, লালদিঘিরপার, কালিঘাট, তালতলা, সুরমা মার্কেট, জিন্দাবাজার, দরগা গেইট, আম্বরখানা, সোবহানীঘাট, মেন্দিভাগ, কদমতলী ও রেলস্টেশন এলাকার অর্ধশতাধিক আবাসিক হোটেল রয়েছে। এসব হোটেলে খুন, অসামাজিক কার্যকলাপ, প্রতারণার মাধ্যমে নগ্ন ছবি ধারণ, চাঁদাবাজি, মাদক কেনাবেচা, সেবন ও জুয়ার আসরসহ নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। রাতভর চলে সুন্দরী নারী বাণিজ্যে। নিম্ন শ্রেণীর হোটেল থেকে উচ্চ দামের হোটেল-কটেজগুলোতে নানা দরদামে নিশি রমনীদের সঙ্গে মিলছে রাত কাটানোর সুযোগ। পাশাপাশি হোটেল কক্ষে গাঁজা, ফেন্সিডিল ও ইয়াবা সেবন করা হচ্ছে। এ নিয়ে পুলিশের কাছে বিস্তর অভিযোগ থাকলেও অভিযান হচ্ছে কম।
গত ২ মাসে দক্ষিণ সুরমার বিভিন্ন হোটেলে অভিযান অসামাজিক কাজে জড়িত অবস্থায় প্রায় অর্ধশতাধিক নারী-পুরুষকে আটক করা হয়েছে।
হোটেল ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তি জানান, প্রশাসনের সহায়তা ছাড়া কখনো হোটেল ব্যবসা করা সম্ভব নয়। এ জন্য তাদের প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের টাকা দিতে হয়। কেউ যদি মাসোহারা দিতে অনীহা প্রকাশ করে তখন তল্লাশির নামে হোটেল ব্যবসায়ীদের নানান ধরনের হয়রানি করা হয়।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের পরিদর্শক পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নগরীতে এই চক্রের বড় একটি নেটওয়ার্ক রয়েছে। এ দালাল চক্র সিলেটের বাইরের এলাকার মেয়েদের চাকরীর কথা বলে নিয়ে এসে হোটেলে এ বাণিজ্য গড়ে তুলেছে। তিনি বলেন, তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। সিএনজি অটোরিকশা চালকদের সাথে মোবাইলের মাধ্যমে চলে এ ব্যবসা।
এ ব্যাপারে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. নিশারুল আরিফ জালালাবাদকে বলেন, সব থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করা হয়েছে। এরই মধ্যে কয়েকটা হোটেলে তল্লাশি অভিযানও চালানো হয়। এছাড়া যেসব হোটেল বোর্ডাদের ভোটার আইডি কার্ড ও ছবি সংগ্রহ না করে রুম দিচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে আইননানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।