নগরীর উন্নয়ন হোক প্রতিবন্ধকতাহীন
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ৮:২০:৪৬ অপরাহ্ন
সিলেট নগরীর চৌহাট্টা এলাকায় ফুটপাত ও রাস্তার একাংশ দখল করে রাখা অবৈধ কার ও মাইক্রোবাস স্ট্যান্ডটি গতকাল উচ্ছেদ করা হয়েছে। কিন্তু অবৈধ স্ট্যান্ডটি উচ্ছেদের পরই বিক্ষোভ শুরু করেন পরিবহন শ্রমিকরা। এ সময় সড়কে বাঁশ ফেলে যান চলাচল বন্ধ করে দেন তারা।
উল্লেখ্য, চৌহাট্টা-আম্বরখানা সড়ক সম্প্রসারণ ও ফুটপাত নির্মাণের কাজ করছে সিলেট সিটি করপোরেশন। এ সড়কের চৌহাট্টা অংশের ফুটপাত দখল করে কার ও মাইক্রোবাস শ্রমিকরা গড়ে তুলে অবৈধ ষ্ট্যান্ড। এই স্ট্যান্ড একাধিকবার উচ্ছেদ করা হলেও পুণরায় দখল করে নেয় শ্রমিকরা।
বলা বাহুল্য, মেয়রের নেতৃত্বে সিলেট সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ যে উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ পরিচালনা করছে, তা অভূতপূর্ব ও নজিরবিহীন। অতীতে কোন পৌর চেয়ারম্যান কিংবা মেয়রকে এতো নিবেদিতপ্রাণ হয়ে সিলেট শহর বা নগরীর উন্নয়নে কাজ করতে দেখা যায়নি। সিলেটের যে কোন বাসিন্দা একথা অকপটে স্বীকার করবেন।
সিলেট মাত্র কিছুকাল আগেও ছিলো দেশের একটি অন্যতম অবহেলিত ও নোংরা নগরী। শতশত কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও সেগুলো নগরীর দৃশ্যমান কোন উন্নয়ন কাজে ব্যয় হয়নি। লুটেপুটে ভাগবাটোয়ারা করে খেয়ে ফেলা হয়েছে। এমনকি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শ্মশানের উন্নয়নে বরাদ্দকৃত কোটি টাকারও বেশী অর্থ আত্মসাত করা হয়েছে। জলাবদ্ধতা, যানজট, ফুটপাত বেদখল, খুঁটি, তারের জঞ্জাল সবমিলিয়ে এক অসহনীয় ও দুর্বিষহ অবস্থা ছিলো দেশের অন্যতম বিভাগীয় ও পর্যটন নগরী সিলেটের। শুধু বক্তৃতা ও বিবৃতিতে সিলেটকে একটি পর্যটন ও আধ্যাত্মিক নগরী বলা হলেও সিলেট নগরীর সকল সম্ভাবনা ও সৌন্দর্য্য চাপা পড়ে গিয়েছিলো।
আমরা সিটি মেয়রের এসব আন্তরিক কর্মকান্ডে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর আন্তরিক সমর্থন লক্ষ্য করছি। এক্ষেত্রে সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব ও ঊর্ধ্বতন মহল এবং স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা প্রশংসার দাবিদার। এজন্য সিলেটবাসী সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞ। কিন্তু ফুটপাত ও রাস্তা থেকে অবৈধ স্ট্যান্ডসহ অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে বাধা ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে দেখা যাচ্ছে একটি কায়েমী স্বার্থান্বেষী মহলকে। এরা দীর্ঘকাল যাবৎ জনগণকে জিম্মি রেখে, সুখ-সাচ্ছন্দ ও সুবিধা থেকে তাদেরকে বঞ্চিত করে অবৈধ ও অন্যায়ভাবে আর্থিক ফায়দা হাসিল করেছে। ফুটপাত দখল করে ইজারা দিয়েছে। এ অবস্থায় জনগণ ফুটপাত হারিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে হয়েছে। নালা-নর্দমা ও ছড়া বেদখল ও সংস্কারের অভাবে নগরী ডুবে গেছে জলাবদ্ধতায়। এতে চলাচলে বিঘœসহ পানিতে নষ্ট হয়েছে মূল্যবান মালামাল ও পণ্য সামগ্রী। যানজটে পড়ে নষ্ট হয়েছে মূল্যবান কর্মঘন্টা। এতে প্রতিবছর ব্যক্তিগত ও জাতীয়ভাবে ক্ষতি হয়েছে হাজারো কোটি টাকা। বৃষ্টিপাত হলে নোংরা কাদা পানিতে সয়লাব হয়ে যেতো গোটা নগরী।
এ অবস্থা থেকে নগরীকে তুলে আনার জন্য সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষসহ প্রশাসনের যারা আন্তরিকভাবে কাজ করছেন, তাদের কাজে বাধা প্রদান এমনকি বিন্দুমাত্র বিঘœ সৃষ্টি যে সচেতন নগরবাসী কখনো সহ্য করবেন না, এতে কোন সন্দেহ নেই।
উন্নয়নকার্যের ফলে কোন কোন ক্ষেত্রে সাময়িক অসুবিধা হতে পারে কিংবা কোন কোন মহল বা গোষ্ঠীর কিছু আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। কিন্তু বৃহত্তর নগরবাসী ও নগরীর স্বার্থে এসব সাময়িক অসুবিধা ও ক্ষয়ক্ষতি মেনে নিতে হবে সংশ্লিষ্ট মহলকে। এক্ষেত্রে বাধা দেয়া বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা চলবে না। যদি কেউ এ ধরণের কিছু করেন বা করার চক্রান্ত করেন, তবে সর্বাগ্রে নগরবাসীই যে রুখে দাঁড়াবে এমন অপকর্মের বিরুদ্ধে এতে কোন সন্দেহ নেই। আমরা ধৈর্যসহকারে দীর্ঘদিনের অবহেলিত ও নোংরা নগরী হিসেবে পরিণত সিলেট নগরীর উন্নয়নে সর্বাত্মক সহায়তা ও সমর্থন প্রদানের জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি।