নগরীতে অবৈধ বেপরোয়া মোটর সাইকেল
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ৮:২৯:০৩ অপরাহ্ন
ইদানীং নগরীসহ সিলেট অঞ্চলে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনা কিংবা মোটর সাইকেলের ধাক্কায় হতাহতের ঘটনা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ অঞ্চলের নগর ও শহরগুলোতে এ ধরণের ঘটনা বেশী ঘটতে দেখা যাচ্ছে। গত মাসে সিলেট নগরীর আম্বরখানা এলাকায় এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ২জন সাইকেল আরোহী প্রাণ হারান। এতে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ক্ষোভ ও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। গত ৪ ফেব্রুয়ারী বড়লেখায় অপর এক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন এক মোটর সাইকেল আরোহী। এছাড়া গত শুক্রবার সিলেট এয়ারপোর্ট রোডে আরেকটি মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ২ মোটর সাইকেল আরোহী গুরুতর আহত হন। এভাবে প্রায়ই মোটর সাইকেল দুর্ঘটনা ঘটছে। এটা তো হলো দুর্ঘটনায় মোটর সাইকেল আরোহীদের নিজেদের হতাহতের ঘটনা।
অপরদিকে মোটর সাইকেলের ধাক্কায় প্রাণ হারানো কিংবা গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনা এ অঞ্চলে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষভাবে তরুণ মোটর সাইকেল চালকদের বেপরোয়া চালানোর ফলে প্রায়ই ঘটছে এ ধরনের মারাত্মক দুর্ঘটনা। দেখা গেছে, দ্রুতগামী মোটর সাইকেলের ধাক্কায় হতাহতদের মধ্যে বৃদ্ধ নারী-পুরুষ এবং শিশুরাই বেশী। বিষয়টি উদ্বেগজনক।
বলা বাহুল্য, দেড় বা দুই যুগ আগেও সিলেট শহরসহ গোটা সিলেট অঞ্চলে মোটর সাইকেলের সংখ্যা কয়েকশ’র বেশী ছিলো। কিন্তু গত কয়েক বছরে এই সংখ্যা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে সিলেট অঞ্চলে বাইসাইকেলের চেয়ে মোটর সাইকেলের সংখ্যা কয়েকগুণ বেশী। শুধু সিলেট নগরীেেতই চলাচল করছে অর্ধলক্ষাধিক মোটর সাইকেল। এগুলোর বেশীর ভাগেরই চালক ও আরোহী তরুণ-যুবক। কিছু পেশাজীবী ও ব্যবসায়ীও মোটর সাইকেল চালিয়ে কর্মস্থলে যাতায়াত করেন ও পেশাগত কাজকর্ম করেন। তবে এক্ষেত্রে যে বিষয়টি অত্যন্ত গরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে, এসব মোটর সাইকেলের অধিকাংশেরই কোন বৈধ কাগজপত্র নেই কিংবা থাকলেও মেয়াদোত্তীর্ণ।
ফলে প্রায়ই ট্রাফিক পুলিশের হাতে ধরা পড়ে তাদের জরিমানা গুণতে হয় কিংবা বখরার বিনিময়ে রেহাই পেতে দেখা যায়। আর লাইসেন্সের কোন বালাই নেই অধিকাংশ মোটর সাইকেল চালক বা মালিকের। ফলে এসব আনাড়ি ও বেপরোয়া চালকেরা প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে নিজেরাও মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারাচ্ছে, গুরুতরভাবে আহত হচ্ছে। এসব লাইসেন্সবিহীন চালকদের মাঝে ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করার মারাত্মক প্রবণতা লক্ষনীয়। তারা উল্টোপথ বা রাস্তা থেকে আকস্মিকভাবে দ্রুত এসে পথচারী ও লোকজনকে প্রায়ই ধাক্কা দিয়ে থাকে। ট্রাফিক আইন বা নিয়মনীতি সম্পর্কে কোন ধরণের প্রশিক্ষণ বা জ্ঞান না থাকায় ট্রাফিক আইনের প্রতি তাদের কোন শ্রদ্ধাবোধও থাকে না।
অসাধু ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তাদের উৎকোচ দিয়ে নগরীতে অবৈধ ও বেপরোয়াভাবে চলাচলকারী এসব মোটর সাইকেল চলাচল বন্ধের দাবি সচেতন মহলের। সিলেট নগরীর অধিকাংশ রাস্তাঘাট ও গলিপথের অবস্থা এতোদিন ছিলো অত্যন্ত শোচনীয়। বর্তমানে উন্নয়নের ছোঁয়ায় এগুলো নতুনরূপ পাচ্ছে। অধিকাংশ সড়ক ও গলিপথ হয়ে উঠছে পথচারী ও যানবাহন চলাচলের উপযোগী ও সাচ্ছন্দ্যময়। আশা করা যায়, এ ধরণের সংস্কার ও উন্নয়ন কার্য অব্যাহত থাকলে নগরীর সবগুলো সড়ক ও গলিপথই যানবাহন ও পথচারীদের চলাচলের জন্য সম্পূর্ণ উপযোগী হয়ে ওঠবে। এক সময় নগরীর এসব সড়ক ও গলিপথের শোচনীয় অবস্থা এবং যানজটের কারণে মোটর সাইকেল হয়ে ওঠেছিলো সবচেয়ে সুবিধাজনক বাহন। ফলে গোটা নগরী ছেয়ে যায় মোটর সাইকেলে। বর্তমানে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটছে। তাই আশা করা যায়, নগরীতে বাসিন্দাদের মোটর সাইকেলের ওপর নির্ভরশীলতা কমে আসবে। এতে অবৈধ ও বেপরোয়া মোটর সাইকেলের চলাচলও নিয়ন্ত্রিত হবে। এছাড়া নগরীর ফুটপাতগুলো হাঁটার উপযোগী হয়ে ওঠায় নগরবাসীর যানবাহনের ওপর নির্ভরতাও কমবে, এমন অভিমত সচেতন মহলের।
আরেকটি বিষয় এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন। ইদানিং নগরীসহ সিলেট অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে মোটর সাইকেল, টমটম এমনকি রিকশার চাকার সাথে ওড়না পেঁচিয়ে মহিলা যাত্রীদের হতাহতের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। এক্ষেত্রে তরুণী ও মহিলা যাত্রীদের অসচেতনতা যেমন দায়ী তেমনি দায়ী এসব যানবাহনে সুরক্ষা ব্যবস্থার ঘাটতিও। রিকশা কিংবা টমটম জাতীয় যানবাহনের চাকাগুলো গার্ডার বা আবরণহীন থাকায় প্রায়ই এগুলোর সাথে যাত্রীদের পোশাক বিশেষভাবে মহিলা যাত্রীদের ওড়নাজাতীয় পোশাক পেঁচিয়ে গিয়ে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটছে। এ ব্যাপারে এসব যানবাহনের চালক ও যাত্রীদের সচেতনতার পাশাপাশি ট্রাফিক কর্তৃপক্ষের নজরদারি ও আইনানুগ পদক্ষেপ প্রয়োজন।
কিছুদিন আগে জনৈক মহিলা যাত্রীর গলায় প্যাঁচানো ওড়না টমটম গাড়ির চাকায় পেঁচিয়ে গেলে উক্ত মহিলা যাত্রীর মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এটা শিউরে ওঠার মতো মারাত্মক দুর্ঘটনা। আর মোটর সাইকেল আরোহীদের ধাক্কায় বয়স্ক লোকজন ও স্কুলগামী শিশুদের মৃত্যুর ঘটনা তো হরহামেশাই ঘটছে। আমরা বেপরোয়া ও বৈধ কাগজপত্র মোটর সাইকেল চলাচল এবং লাইসেন্সবিহীন চালকদের নিয়ন্ত্রণে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ কামনা করি। সর্বোপরি, ট্রাফিক আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ ও বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি ও মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাই।