সামাজিক ন্যায় বিচারের দৃষ্টান্ত!
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ৭:০১:০৬ অপরাহ্ন
মঙ্গলবার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে ‘সৌদীতে বাংলাদেশ গৃহকর্মী হত্যায় গৃহকর্ত্রীর মৃত্যুদন্ড’ শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সৌদী আরবের রিয়াদের ক্রিমিনাল কোর্ট গত রোববার বহুল আলোচিত আবিরন বেগমের হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত প্রধান আসামী গৃহকর্ত্রী আয়েশা আল জিজানীর বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃত ও সুনির্দিষ্টভাবে হত্যাকা- সংঘটনের দায়ে এই রায় প্রদান করেছে। অপর দুই আসামীর একজন গৃহস্বামী কাসেম সালেমের বিরুদ্ধে হত্যাকা-ের আলামত ধ্বংস, গৃহকর্মীকে নিজ বাসার বাইরে অবৈধভাবে কাজে পাঠানো এবং গৃহকর্মীর চিকিৎসার ব্যবস্থা না করার অভিযোগে আদালত ৫০ হাজার সৌদী রিয়াল জরিমানাসহ বিভিন্ন মেয়াদে মোট ৩ বছর ২ মাস কারাভোগের আদেশ প্রদান করেছে। আদালত মামলার আরেক আসামী তাদের কিশোর পুত্র ওয়ালিদ বাসেদ সালেমকে ৭ মাস কিশোর সংশোধনাগার কেন্দ্রে থাকার আদেশ দিয়েছে।
ইতাপূর্বে সৌদী আরবে বাংলাদেশী গৃহকর্মী নির্যাতনের বহু অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। এর অনেকগুলো মর্মান্তিক। এ অবস্থায় বাংলাদেশী গৃহকর্মী হত্যার দায়ের একজন সৌদী গৃহকর্ত্রীর মৃত্যুদ- ও তার স্বামী ও পুত্রের বিভিন্ন মেয়াদের কারাদ- ও জরিমানা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক ঘটনা। এই রায় বাস্তবায়িত হলে সৌদী আরবে বাংলাদেশীসহ বিভিন্ন দেশের গৃহকর্মীদের ওপর অমানবিক আচরণ ও নির্যাতন যে হ্রাস পাবে, এমনটি প্রত্যাশা করা যায়।
সৌদি আরবে ১০ লক্ষাধিক বাংলাদেশী পুরুষ কর্মরত। এর পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক নারীও গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করছেন। মাঝে মাঝে সৌদী প্রবাসী নারী-পুরুষদের তাদের মালিকপক্ষের অমানবিক ও অন্যায় আচরণের শিকার হতে দেখা যায়। বিশেষভাবে বাংলাদেশী গৃহকর্মীদের ওপর অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে দেশে বিদেশে ব্যাপক প্রতিবাদ ও লেখালেখি হয়েছে। ফলে বর্তমানে পরিস্থিতির কিছুটা পরিবর্তন ঘটেছে বলে সচেতন মহলের অভিমত। সৌদী আদালতের উপরোক্ত রায় এর একটি জ্বলন্ত উদাহরণ, আমরা এই রায়কে স্বাগত জানাচ্ছি এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি সংশ্লিষ্ট সৌদি আদালতকে। সামগ্রিকভাবে সৌদী বিচার ব্যবস্থাকে।
লক্ষণীয় যে, সৌদী আরবের সামাজিক বিচার ব্যবস্থা অত্যন্ত সুশৃঙ্খল নিয়মনীতির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সৌদী সমাজে অন্যায় করে পার পাওয়া অত্যন্ত কঠিন। হত্যার বদলে ‘কেসাস’ বা ‘জানের বদলে জান’ আইনটি কঠোরভাবে মেনে চলা হয়। ফলে খুন ও হত্যাকা-সহ গুরুতর অপরাধের ঘটনা সেদেশে অনেক কম ঘটে থাকে। কঠোর আইন ও এর বাস্তবায়নের ফলে এটা সম্ভব হয়েছে। তবে একথা সত্য যে, সৌদী আরবে যেহেতু রাজতন্ত্র বিদ্যমান, তাই শাসকগোষ্ঠী তাদের শাসন ও ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে অনেক অন্যায় ও অমানবিক এমনটি নৃশংস আচরণ করে থাকে, যা অত্যন্ত নিন্দনীয়। সাংবাদিক খাশোগী হত্যাকান্ড এবং রাজতন্ত্র বিরোধী আলেম ও শিয়া সম্প্রদায়ের ভিন্ন মতাবলম্বীদের প্রতি তাদের বিচারের নামে প্রহসন, হত্যাকান্ড ও নিপীড়ন নিশ্চয়ই মানবাধিকারের পরিপন্থী। তবে বৃহত্তর সমাজ ব্যবস্থায় অর্থাৎ জনগণ পর্যায়ে তাদের গৃহীত ন্যায়বিচার অবশ্যই প্রশংসনীয়।
সৌদী আদালত কর্তৃক বাংলাদেশী গৃহকর্মী আবিরন বিবির হত্যাকান্ডের ঘটনায় প্রদত্ত রায় এদেশের বিচার বিভাগ, প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর যেমন শিক্ষনীয় তেমনি দিক নির্দেশনামূলক। আমরা যদি সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রসহ সৌদী আরবের বিচার ব্যবস্থাকে অনুসরণ করি তবে নিশ্চিতভাবেই এদেশে খুন হত্যাকান্ড ও ধর্ষণের মতো জঘন্য ও গুরুতর অপরাধ কমে আসবে, এমন প্রত্যাশা অবশ্যই করা যায়।