খাদিমপাড়া মীরমহল্লায় ৩ খুন : সৎ মা ও ভাই-বোনকে কুপিয়ে ঘরে আগুন দিলো ক্ষুব্ধ যুবক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১১:০১:১৮ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার :
ব্যবসায়ী আবদাল হোসেন বুলবুল। বিয়ে করেছিলেন দুই। প্রথম স্ত্রী দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে থাকেন সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার অষ্টগ্রামের বাড়িতে। দ্বিতীয় স্ত্রীকে শহরতলীর খাদিমপাড়া বিআইডিসি মীরমহল্লায় ভাড়া বাসায় রাখেন এবং নিজেও থাকেন। প্রথম স্ত্রীর খোঁজ তেমন রাখতেন না তিনি। এরইমধ্যে অর্থাভাবে ছেলে মাহমুদ হোসেন আবাদ পড়ালেখা বাদ দেয়।
গত ৫ মাস আগে বাবার আহবানে সে শহরতলীতে বাবার ব্যবসা দেখাশোনা শুরু করে। নিজ মায়ের পরিনাম ও সৎ মায়ের জ্বালাতন দিন দিন ক্ষোভ বাড়তে থাকে। এ ক্ষোভ মেটাতে ধারালো ছোরা দিয়ে ছুরিকাঘাত করে খন্তি দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে সৎ মা-মেয়ে ও ছেলে হত্যা করে।
গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে হত্যাকাণ্ডের এমন স্বীকারোক্তি দেয় আহবাব হোসেন আবাদ।
নিহত নারীর নাম রুবিয়া বেগম (৩০) ও তাঁর মেয়ের নাম মাহা বেগম (৭) ও ছেলের নাম তাহসিন (৫)। মা-মেয়ে ঘটনাস্থলে মারা গেলেও তাহসিন ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।
পুলিশ জানায়, হত্যাকাণ্ডের সময় রুবিয়া বেগমের স্বামী আবদাল হোসেন বুলবুল বাড়ির পাশেই মুদি’র দোকানে ছিলেন। লাশ উদ্ধার করার সময় ওই বাড়ি থেকে রক্তমাখা একটি ছোরাসহ মাহমুদ হোসেন আবাদকে আটক করা হয়েছে।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে শহরতলীর বিআইডিসি মীর মহল্লায় সৎ মা রুবিয়া ও ৯ বছরের বোন মাহাকে কুপিয়ে হত্যা করে ঘাতক যুবক মাহমুদ হোসেন আবাদ। সৎ ভাই অবুঝ শিশু তাহসানের (৫) দেহ ক্ষতবিক্ষত করে ঘাতক। পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করলে চিকিৎসকরা রাতভর বাঁচানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু শুক্রবার ভোর ৪টায় চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে মৃত্যুর কাছে হার মানে অবুঝ শিশু তাহসান।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতেই রুবিয়া ও মাহার মরদেহ ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালের মর্গে নেওয়া হয়।
স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার রাতে সৎ মা, বোন ও ভাইকে কুপিয়ে ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয় মাহমুদ হোসেন আবাদ। শয়নকক্ষের খাটের তোষকে আগুন ধরিয়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়। পরে আগুন দেখতে পেয়ে এলাকাবাসী জড়ো হয়ে আবাদকে আটক করে পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘরের দরজা ভেঙ্গে লাশগুলো উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। এসব ঘরের অনেক আসবাব পুড়ে গিয়েছিলো। আর লাশ গুলোও পুড়িয়ে দেওয়ার জন্য এমনটি করেছে বলে পুলিশ বলছে।
কতোটি আঘাতের চিহৃ : হাসপাতাল সুত্রে জানা যায়, লাশগুলোর শরীরে ধারালো অস্ত্রের এলোপাতাড়ি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এরমধ্যে রুবিয়া’র একটি হাত বিচ্ছিন্নসহ শরীরে ১৬৫টি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আর মাহা’র ৩৫টি এবং শিশু তাহসিনের শরীরের ২৬টি আঘাতের চিহ্ন আছে। এছাড়া নিহত রুবিয়া বেগমের বাম হাতের কব্জি খন্তি দিয়ে আলাদা করার চেষ্টা করা হয়। একইভাবে শিশু দু’টিকে ছুরিকাঘাত ও খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
এদিকে, মা-মেয়ে ও ছেলের মরদেহের সুরতহাল করতে গিয়ে শরীদের ছোট-বড় অসংখ্য ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন দেখে ঘাবড়ে যান দুই পুলিশ কর্মকর্তা। উপ-পরিদর্শক রিপটন পুরকায়স্থ বলেন, সুরতহালে ৩ জনের শরীরে দুই শতাধিক আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ডৌবাড়ি ইউনিয়নের হাটগ্রামের ফরমান আলীর মেয়ে রুবিয়া বেগম। প্রায় ১০ বছর আগে বিআইডিসি মীরমহল্লায় বসবাসকারী বিয়ানীবাজারের অষ্টগ্রামের আবদাল হোসেন বুলবুলের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। অথচ প্রথম স্ত্রী ও দুই সন্তান থাকার বিষয়টি গোপন রেখেছিলেন বুলবুল। দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে শহরতলীর বিআইডিসি মীরমহল্লায় ভাড়া বাসায় রাখেন। প্রথম স্ত্রীর খোঁজ তেমন রাখতেন না তিনি। এরইমধ্যে অর্থাভাবে ছেলে আহবাব হোসেন পড়ালেখা বাদ দিয়েছেন। গত ৫ মাস আগে সে শহরতলীতে বাবার ব্যবসা দেখাশোনা শুরু করেন। বিভিন্ন সময় তিনি সৎ মাকে হত্যার হুমকি দিয়ে তার বাবাকে ছেড়ে যেতে বলতেন।
নিহত রুবিয়া বেগমের ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন বলেন, বিভিন্ন সময় অবাধে সৎ মাকে হত্যার হুমকি দিতো বলে ফোনে জানান তার বোন। বলেছিলেন, ছেলেটা খুবই যন্ত্রণা দিচ্ছে। রাতের আঁধারে দরজায় এসে ডাকাডাকি করে। বিষয়টি ভগ্নিপতিকে জানান তারা। ছেলেকে শাসন না করে তিনি বলেছিলেন, আমার ছেলেকে আমি শাসন করবো, তোমরা নাক গলাবে না। তখন বলেছিলাম কোনো ঘটনা ঘটিয়ে ফেললে তখন কিছুই করার থাকবে না। ঘটলোও তাই।
শাহপরান থানার ওসি সৈয়দ আনিসুর রহমান জালালাবাদকে বলেন, মা-মেয়ে, ছেলে তিনজনকে মাহবুব হোসেন আবাদ একাই খুন করেছেন। নিহতদের মরদেহ ময়না তদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এ ঘটনায় এখনো মামলা দায়ের হয়নি।